আগামী অর্থবছর অ্যাপলের আইফোন ডিভাইস ব্যবসা বিভাগ ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির মুখ দেখবে। অ্যাপল ডিভাইসপ্রেমীদের মধ্যে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থিত আইফোন প্রত্যাশিত ছিল। ফাইভজি আইফোনের অপেক্ষায় থেকে অনেকে ডিভাইস হালনাগাদ করেননি। তুলনামূলক সাশ্রয়ী মূল্যের হওয়ায় আইফোনের ফাইভজি সংস্করণগুলোর বিক্রি অ্যাপলের প্রত্যাশা ছাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা আগামী অর্থবছর অ্যাপলের আইফোন ব্যবসা বিভাগের প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। মার্কিন ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম ‘লুপ ভেঞ্চারস’-এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। খবর ইটি টেলিকম।
লুপ ভেঞ্চারসের বিশ্লেষক জিনি মুনস্টার এবং ডেভিড স্টকম্যান বলেন, বিশ্বজুড়ে ফাইভজির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়েছে। যদিও ক্যারিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর পূর্ণাঙ্গ ফাইভজি অবকাঠামো নির্মাণে এখনো কমপক্ষে তিন বছর সময় লাগবে। তবে ভবিষ্যৎ ফাইভজি ডিভাইস বাজারে ব্যবসা সম্প্রসারণে অ্যাপল একগুচ্ছ ফাইভজি আইফোন নিয়ে প্রস্তুত। এ ডিভাইসগুলো হালনাগাদ দিয়ে আগামী তিন বছর আইফোন ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারবে অ্যাপল। যদিও প্রতি বছর আইফোনের নতুন সংস্করণ উন্মোচন করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি।
ডিজিটাইমসের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আইফোন ১২ সিরিজের চারটি ডিভাইসের সরবরাহ ৮ কোটি ইউনিট ছাড়াবে। ফাইভজি প্রযুক্তি সমর্থন আনা এবং সাশ্রয়ী মূলনীতির কারণে আইফোনের চলতি বছরের সংস্করণগুলোর বিক্রি অ্যাপলের প্রত্যাশা ছাড়ানোর আশা করা হচ্ছে।
চলতি বছর আইফোনপ্রেমীদের প্রতীক্ষা কিছুটা লম্বা ছিল। অ্যাপল প্রতি বছর সেপ্টেম্বর ইভেন্টে আইফোন উন্মোচন করলেও এবার তা হয়নি। কিছুটা বিলম্বে প্রতীক্ষার অবসান ঘটে আইফোনপ্রেমীদের। গত ১৩ অক্টোবর নতুন চারটি আইফোনের ঘোষণা দিয়েছে অ্যাপল। ডিভাইসগুলো হলো—আইফোন ১২ প্রো ম্যাক্স, আইফোন ১২ প্রো, আইফোন ১২ ও আইফোন ১২ মিনি। আইফোন ১২ ও আইফোন ১২ মিনি চলতি বছরের সাশ্রয়ী মডেল হিসেবে বাজারে ছাড়া হচ্ছে। অ্যাপল চলতি বছরের চারটি আইফোনেই পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি ফাইভজি সমর্থন নিয়ে এসেছে, যা আইফোন বিক্রি প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ডিজিটাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষ নাগাদ আইফোনের নতুন চারটি সংস্করণের বিক্রি সাত কোটি ইউনিট ছাড়াবে। তবে বিক্রির সংখ্যা আট কোটি ইউনিটেও পৌঁছতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের ওপর। বিশ্বের বৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধের জেরে শুধু চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোই নয়; মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলও বড় ভুক্তভোগী। চীন অ্যাপলের গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলোর একটি। বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে চীনে আইফোন বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে। চীনে বিক্রি কমে যাওয়ায় অ্যাপলের রাজস্বে আইফোনের গুরুত্ব কমতে শুরু করেছে। অবশ্য আইফোন বিক্রি কমার জন্য চড়া দামকেও দায়ী করা হয়। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নিয়ে চলতি বছর আইফোন ১২ সিরিজের দুটি ডিভাইসের দাম কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পুরনো আইফোন ব্যবহারকারীদের ডিভাইস হালনাগাদে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অ্যাপলের নতুন আইফোন ১২ প্রো মডেলটিতে ব্যবহূত হয়েছে ৬ দশমিক ১ ইঞ্চি অর্গানিক লাইট-এমিটিং ডায়োড বা ওএলইডি ডিসপ্লে। অন্যদিকে আইফোন ১২ প্রো ম্যাক্সে ব্যবহূত হয়েছে তুলনামূলক বড় আকৃতির ৬ দশমিক ৭ ইঞ্চি ডিসপ্লে। ডিভাইস দুটির এ১৪ বায়োনিক প্রসেসর দ্রুত কাজ সম্পাদনা নিশ্চিত করবে। ডিভাইস দুটিতে ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে আইফোন ১২ প্রোতে পেছনে লিডার স্ক্যানার থাকবে, যাতে কোনো বস্তু বা ঘর স্ক্যান করা এবং এআর ফিচার ব্যবহার করা যাবে। এর বাইরে লিডার স্ক্যানারে কম আলোতে অটো ফোকাস ও ক্যাপচার টাইম আরো উন্নত হবে। ডিভাইস দুটির ১২৮ গিগাবাইট, ২৫৬ গিগাবাইট ও ৫১২ গিগাবাইট অভ্যন্তরীণ স্টোরেজ সংস্করণ গ্রাফাইট, সিলভার, গোল্ড ও প্যাসিফিক ব্লু রঙে পাওয়া যাবে। অ্যাপলের দাবি, আইফোন ১২ প্রো মডেলের ক্যামেরায় বাড়তি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
আইফোন ১২ মডেলটিতেও ৬ দশমিক ১ ইঞ্চি মাপের ওএলইডি ডিসপ্লে রাখা হয়েছে। তুলনামূলক সাশ্রয়ী ডিভাইসটি সাদা, কালো, লাল ও নীল রঙে বাজারে পাওয়া যাবে। এতে অ্যাপলের নিজস্ব এ১৪ বায়োনিক প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে। ডিভাইসটিতে ব্যবহূত ছয় কোরের সিপিইউ অন্য স্মার্টফোনের চেয়ে ৫০ শতাংশ দ্রুতগতির। এতে নতুন চার কোর জিপিইউ থাকছে, যা অন্য ফোনের চেয়ে ৫০ শতাংশ দ্রুতগতির। আইফোন ১২ মডেলে আরো টেকসই সিরামিক শিল্ড গ্লাস প্রযুক্তি ব্যবহূত হয়েছে। সব মডেলের আইফোনেই আইওএস ১৪ সফটওয়্যার থাকছে। এর আগে আইপ্যাড এয়ারে ব্যবহূত এ১৪ বায়োনিক চিপসেট এবার আইফোনে ব্যবহূত হয়েছে। আইফোন ১২ মডেলে দুটি ১২ মেগাপিক্সেলের ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সেন্সর থাকছে, যা কম আলোতে ভালো ছবি তুলতে পারবে। আইফোনে নতুন ম্যাগসেফ তারহীন চার্জিং স্ট্যান্ডার্ড চালু করেছে অ্যাপল, যা ১৫ ওয়াট দ্রুতগতির ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি সমর্থন করবে।
নতুন ৪ আইফোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ও সাশ্রয়ী সংস্করণ হিসেবে আসছে আইফোন ১২ মিনি। এতে আকার বাদে আইফোন ১২-এর সব ফিচার মিলবে। ডিভাইসটিতে থাকছে ৫ দশমিক ৪ ইঞ্চি সুপার রেটিনা এক্সডিআর ডিসপ্লে। ডিভাইসটি ৪ দশমিক ৭ ইঞ্চি মাপের আইফোন ৭-এর চেয়েও পাতলা ও হালকা হবে। অ্যাপলের এবারের নতুন আইফোনের ক্যামেরায় ডিপ ফিউশন মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
