বন্দিদের সঙ্গে পশুর চেয়েও খারাপ আচরণ করে উত্তর কোরিয়া —এইচআরডব্লিউ

বণিক বার্তা ডেস্ক

উত্তর কোরিয়ার বিচারপূর্ব আটক ব্যবস্থায় পদ্ধতিগত নির্যাতন, যৌন নির্যাতন বিপজ্জনক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল প্রকাশিত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। দেশটির বিচার ব্যবস্থায় সন্দেহভাজনদের একটি পশুর চেয়েও কম মূল্যবান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খবর সিএনএন।

কয়েক ডজন আটক বন্দি প্রাক্তন কর্মকর্তাদের সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) ৮৮ পৃষ্ঠার বিস্তৃত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, উত্তর কোরিয়ার বিচারপূর্ব আটক তদন্ত ব্যবস্থা স্বেচ্ছাচারিতা, হিংস্র, নিষ্ঠুর অবজ্ঞাপূর্ণ। উত্তর কোরিয়ানরা বলেছেন, তারা সর্বদা এমন ব্যবস্থায় ধরা পড়ার ভয়ে থাকেন, যেখানে সরকারি প্রক্রিয়াগুলো অপ্রাসঙ্গিক, অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং এমন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো ঘুষ পরিচিতি।

প্রতিবেদনে এটাকে উত্তর কোরিয়ার দুর্বল আইনি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। পাশাপাশি শাসক দলের অধীনে দেশটির আদালত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো উচ্চ রাজনৈতিক প্রকৃতিও তুলে ধরা হয়েছে। পৃথিবীর গোপনীয় রাষ্ট্রটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বছরের পর বছর ধরে নথিভুক্ত হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে ২০১৪ সালে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন তদন্ত করেছিল। তবে প্রাক-বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে।

প্রতিবেদনে আট প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা এর আগে আটক হওয়া ২২ জনের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে। সাক্ষাত্কার দেয়া সবাই ২০১১ সালে দেশটির বর্তমান নেতা কিম জং-উনের ক্ষমতা গ্রহণের পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন।

এইচআরডব্লিউকে দেয়া সাক্ষাত্কারে আটক হওয়া লিম ওকে কিউং জানান, তাকে ২০১৪ সালে চীন থেকে পণ্য পাচারের অভিযোগে আটক করা হয়েছিল। তার স্বামী রাজনৈতিক দলের মধ্যম স্তরের সদস্য হওয়ার সুবাদে পরিচিতি সংযোগের মাধ্যমে ১০ দিন পরই তাকে মুক্ত করতে পেরেছিলেন। কিন্তু ওই দিনগুলোতেই তিনি প্রচণ্ড নির্যাতন মারধরের শিকার হন। তিনি বলেন, কয়েকজন রক্ষী পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাত দিয়ে মারধর করত, নয়তো বুট জুতা দিয়ে লাথি মারত। পাঁচদিন ধরে তারা আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য করেছিল এবং আমাকে ঘুমাতে পর্যন্ত দেয়নি।

অন্য সাক্ষ্যগুলোতে লিমের নির্বিচারে মারধর নির্যাতনের দাবির বিষয়টি মিলে গেছে। আটক হওয়া ব্যক্তিরা বর্ণনা করেছেন, তাদের মাথা নিচু করে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হাঁটু বা ক্রস পায়ে স্থির হয়ে বসে থাকতে বাধ্য করা হয়েছিল। আটক হওয়া কয়েকজন নারী বলেছেন, আটক অবস্থায় তাদের যৌন নির্যাতন বা ধর্ষণ করা হয়েছিল। ৫০-এর দশকের প্রাক্তন ব্যবসায়ী কিম সান ইয়ং জানিয়েছেন, আটককেন্দ্রে তাকে জিজ্ঞাসাবাদকারী ধর্ষণ করেছিল এবং অন্য একজন পুলিশ কর্মকর্তা শরীর স্পর্শ করে তাকে লাঞ্ছিত করেছিল।

অন্য নারীরা আটক হওয়ার পর আইনি সহায়তার অভাবের পাশাপাশি সাবান ঋতুস্রাবের উপকরণ বা কম্বলের মতো মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধার অভাবের কথা বলেছেন। সবাই বলেছেন, তারা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দি ছিলেন। আটক হওয়া আরেক বন্দি ইউন ইয়ং চেওল বলেন, সেখানে আপনার সঙ্গে ঠিক এমন আচরণ করা হয় যেন আপনি একটি প্রাণীর চেয়েও কম মূল্যবান।

দেশটির সাবেক সামরিক কর্মকর্তা কং রি-হিউক সিএনএনকে জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে ভুট্টা চুরির অভিযোগে তাকে চারদিন আটক রাখা হয়েছিল। নিরাপত্তা রক্ষীকে অর্থ তামাক ঘুষ দেয়ার পর তিনি ছাড়া পান। তিনি বলেন, কারাগারে তারা আটককৃতদের সঙ্গে শূকর বা কুকুরের মতো আচরণ করে। তারা আমাকে নির্দয়ভাবে মারধর করেছিল এবং এক সপ্তাহ পরও আমি ঠিকভাবে হাঁটতে পারিনি। হাঁটুতে আঘাত করার কারণে আমার জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন