ইসলামী অর্থায়ন

২ হাজার কোটি ডলারের বাজারে প্রভাব ফেলতে পারেনি যুক্তরাজ্য

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইসলামী অর্থায়ন খাতকে গতিশীল করার যে প্রতিশ্রুতি ব্রিটিশ সরকার দিয়েছিল, তারা তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ইসলামিক ফিন্যান্স কাউন্সিল অভিযোগ করেছে। কাউন্সিল বলেছে, লন্ডনের বেশকিছু আইকনিক প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে ইসলামিক ফিন্যান্স মেকানিজম ব্যবহার করা হয়েছে। সে অর্থে ব্রিটেনে ইসলামী অর্থায়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সরকারের যথাযথ উদ্যোগের অভাবে সম্ভাবনা অনেকাংশেই কাজে লাগানো যায়নি। খবর অ্যারাবিয়ান বিজনেস।

ইসলামিক ফিন্যান্স কাউন্সিল ইউকের (আইএফসিইউকে) পরামর্শক পর্ষদের সদস্য ওমর শেখ বলেছেন, যুক্তরাজ্যের ইসলামিক ফিন্যান্স মার্কেটের আকারটা বেশ বড়প্রায় হাজার ৯০০ কোটি ডলারের। বর্তমানে বাজারকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো ভোক্তা পর্যায়ে সচেতনতার অভাব। এছাড়া সরকারের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থতা পর্যাপ্ত বিধিবিধানের অভাবও খাতের অগ্রসরতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে বলে ওমর শেখ মনে করেন।

অ্যারাবিয়ান বিজনেসকে দেয়া সাক্ষাত্কারে ওমর শেখ বলেন, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছিলেন, প্রত্যেক সরকারের উচিত হবে ইসলামিক ফিন্যান্স লোনের বিষয়টি বিবেচনা করা। সে কারণে বর্তমান সরকারের উচিত হবে সাবেক সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুধাবন করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডকেও ইসলামিক ফিন্যান্সের জন্য একটি লিকুইডিটি টুল তৈরি করতে হবে যেন এই অর্থায়ন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়।

২০১৩ সালের অক্টোবরে তত্কালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইসলামিক ফিন্যান্স মার্কেটে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান তৈরি করবে তার দেশ। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, দুবাইয়ের মতো লন্ডনকেও বৈশ্বিক ইসলামী অর্থায়ন বাজারের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে।

বর্তমানে লন্ডনে ২০টির বেশি আন্তর্জাতিক ব্যাংক রয়েছে, যেগুলো ইসলামী অর্থায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংক সম্পূর্ণরূপে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া লন্ডনে ২০টির বেশি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা বৈশ্বিক স্থানীয় বাজারের জন্য ইসলামী অর্থায়নসংশ্লিষ্ট আইনি সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

এখন পর্যন্ত লন্ডনে বেশ কয়েকটি আইকনিক প্রকল্পে ইসলামিক ফিন্যান্স মেকানিজম ব্যবহার করে অর্থায়ন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্য শার্ড, অলিম্পিক ভিলেজ, চেলসি ব্যারাক পুনর্নির্মাণ, ব্যাটারসি পাওয়ার স্টেশন ইত্যাদি। বতর্মানে যুক্তরাজ্যে ইসলামী অর্থায়ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় দ্বিগুণ। তবে খাতে আরো অনেক কিছু করার বাকি রয়েছে বলে ওমর শেখ মনে করেন।

ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যে বিদ্যমান ইসলামিক ফিন্যান্স রেগুলেশনের বাধা-বিপত্তিগুলো দূর করার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন ওমর শেখ। তিনি বলেন, এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আইনকানুনের শিকলে বাঁধা ছিলাম। এখন সমস্যা দূর হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।

চলতি বছরের শেষের দিকে দ্বিতীয়বারের মতো সার্বভৌম সুকুক বা ইসলামী বন্ড বিক্রি করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্য। লক্ষ্যে একটি সিন্ডিকেট গঠনের জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ওমর শেখ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে ২০১৪ সালে সুকুক ইস্যু করে যুক্তরাজ্য। এর মাধ্যমে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ২০ কোটি পাউন্ড (২৬ কোটি ডলার) তহবিল সংগ্রহ করা হয়। ওই সুকুকে সাবস্ক্রিবশনের জন্য ১০ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়েছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন