ছুটিতে এসে আটকে পড়া প্রবাসীদের ঘিরে সক্রিয় দালাল চক্র

কর্মস্থলে ফেরাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার করা হোক

করোনার সময়ে যেসব প্রবাসী দেশে এসে আটকে পড়েছেন, তাদের ফিরে যাওয়া প্রলম্বিতই হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ চালু না হওয়ায়, বিশেষত যাদের কাজের মেয়াদ রয়েছে তারা তৃতীয় দেশ হয়ে কাজে যোগদানের জন্য জোর চেষ্টা করছেন। আর এটিকে ঘিরে নতুন দালাল চক্রের আবির্ভাব হয়েছে। গতকাল বণিক বার্তায় প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে প্রবেশের জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভ্রমণ ভিসার সুযোগ নিচ্ছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো। তাদের মাধ্যমে দুবাই গিয়ে হোটেলে ১৪ দিন থাকার পর পিসিআর সনদ নিয়ে কুয়েতে প্রবেশ করছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশের মতো ভারত পাকিস্তানের নাগরিকরাও পন্থায় কুয়েতে যাচ্ছেন। তবে এজন্য কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশীদের খরচ হচ্ছে - লাখ টাকা। মূলত কোনো উপায় না থাকায় একপ্রকার বাধ্য হয়েই ট্রাভেল এজেন্সিতে কন্ট্রাক্ট করে ঝুঁকি নিয়ে প্রবাসীরা কুয়েতে প্রবেশ করছেন। দেশে ফেরত আসা শ্রমিকদের বেশির ভাগই অর্থ জোগাড় করতে পারছেন না। প্রবাসে অল্প বেতনে যেসব শ্রমিক কাজ করতেন, স্বভাবতই তাদের পর্যাপ্ত জমা অর্থও নেই। দীর্ঘদিন বিদেশে থাকায় তাদের পরিবার মোটামুটি একটা সচ্ছলতার ভেতরে দিনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিল। খুব বেশিদিন এভাবে বেকার বসে থাকলে এবং বিদেশে গিয়ে আবারো কাজ করতে না পারলে বা দেশে বিকল্প কোনো আয়ের পথ বের করতে না পারলে বিদেশ যাওয়ার আগের অর্থনৈতিক অবস্থার ভেতরে তাদের পড়তে হবে। কুয়েত প্রবাসী বাংলাদেশী, যারা ছুটিতে বাংলাদেশে গিয়ে চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় নির্ধারিত সময়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরতে পারছেন না, তাদের তালিকা তৈরির জন্য কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস অনলাইন নিবন্ধন পদ্ধতি চালু করেছে। বাংলাদেশে আটকে পড়া সব কুয়েত প্রবাসীকে দূতাবাসের ওয়েবসাইটের নিবন্ধন লিংকে প্রবেশ করে নির্ধারিত ফরম পূরণ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। কিন্তু এতে আস্থা রাখতে পারছেন না প্রবাসীরা।

করোনার শুরুতেই অবশ্য দেশে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের কিছুটা হলেও স্বস্তির সংবাদ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। করোনার পর পরই সরকারের পক্ষ থেকে যে বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, সেখানে দেশে আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের বিকল্প আয়ের সুবিধার্থে ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে স্বল্পসুদে ঋণের ব্যবস্থা করার জন্য ৭০০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ঘোষণাও ছিল। যাতে করে তারা পুঁজি খাটিয়ে বিকল্প আয় করতে পারেন। কিন্তু শর্তের বেড়াজাল পেরিয়ে প্রণোদনার অর্থ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে বলে খবর মিলছে। এক্ষেত্রে সরকারকে কূটনৈতিক তত্পরতা বাড়িয়ে কর্মী পাঠানো অন্য দেশগুলোর সঙ্গে মিলে সমঝোতার জন্য বিশ্বপর্যায়ে চাপ তৈরি করতে হবে। সেই সঙ্গে ফিরে আসা প্রবাসী এবং তাদের পরিবারের প্রতি যাতে কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ করা না হয়, সেদিকেও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রশাসনের নজর রাখা দরকার। সরকার যে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে, সেটি যাতে আগ্রহী প্রবাসীরা নির্বিঘ্নে পেতে পারেন এবং শর্তের বেড়াজালে যাতে তাদের হয়রানি করা না হয়, সেদিকেও সরকারের শীর্ষ মহলের খেয়াল রাখা দরকার। সেই সঙ্গে যেসব দেশে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ প্রবাসী শ্রমিক কাজ করেন, সেসব দেশের সরকারের সঙ্গে নিয়মিত দেন-দরবার চালিয়ে যাওয়া দরকার, যাতে দ্রুত সেসব দেশে শ্রমিকরা যেতে পারেন এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখতে পারেন।

করোনার কারণে বিভিন্ন দেশে লকডাউন কিছুটা শিথিল হয়েছে। কিন্তু ফ্লাইট চালু না হওয়ায় আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীরা কর্মস্থলে যেতে না পারায় চরম উত্কণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। আবার প্রতিদিন চাকরি হারিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচুর প্রবাসী কর্মী খালি হাতে দেশে ফিরছেন। আটকে পড়া প্রবাসী কর্মীদের দ্রুত কর্মস্থলে পাঠাতে সরকারি উদ্যোগ এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড প্রবাসী বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশী দেশে এসে আটকা পড়েছেন আকাশপথ বন্ধ থাকায়। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী দেশে আটকে পড়ায় রেমিট্যান্স আয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। করোনাকালে যেসব প্রবাসী দেশে আটকে আছেন তাদের দ্রুত কর্মস্থলে ফেরত পাঠাতে সরকার উদ্যোগ নেবে, এমনটিই আশা করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে তাদের প্রত্যাশা পূরণে প্রতিবন্ধকতাও কম নয়। ইচ্ছা করলেই কোনো গন্তব্যস্থলে বিমানের ফ্লাইটসংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। যেসব দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে তা চালুর ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ক্লিয়ারেন্সের প্রয়োজন। আমরা আশা করব, সরকার কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবে। না হলে দালালদের আধিক্য বেড়ে যাবে, যা ছুটিতে এসে আটকে পড়া প্রবাসীদের ফেরাতে ব্যয় জটিলতা বাড়াবে। আর এতে আমাদের জনশক্তির বাজার ঝুঁকিতে পড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন