যুদ্ধবিরতির কিছুক্ষণের মধ্যে ফের সংঘর্ষে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিরোধপূর্ণ নাগোর্নো-কারাবাখকে কেন্দ্র করে সপ্তাহ তিনেক আগে যে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়েছিল, তা বন্ধে নতুন একটি মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার ঘোষণা দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই নতুন করে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান। আর এর দায় একে অন্যের ওপর চাপিয়ে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে বিবদমান দুই পক্ষ। খবর বিবিসি রয়টার্স।

গত সপ্তাহে আর্মেনিয়া আজারবাইজানকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় রাশিয়া। শনিবার সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেয় দেশ দুটি। এদিন মধ্যরাত থেকে তা কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর কয়েক মিনিটের মাথায় সাবেক দুই সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র একে অন্যের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনে।

আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র অভিযোগ করেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাত্র মিনিটের মাথায় আর্টিলারি শেল রকেট হামলা চালায় আজারবাইজান। এর মাধ্যমে তারাই প্রথম যুদ্ধবিরতির শর্ত ভঙ্গ করেছে। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আজারবাইজান বলেছে, তারা নয়, বরং আর্মেনিয়াই প্রথম উসকানিমূলক হামলা চালিয়েছে। যুদ্ধবিরতি চালুর মিনিটের মধ্যেই হামলা করেছে তারা।

আজারবাইজান জানায়, নাগোর্নো-কারাবাখ থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রে তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গানজার ১৩ বেসামরিক নাগরিক নিহত অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। অন্যদিকে আর্মেনিয়া জানিয়েছে, আজারবাইজান যুদ্ধবিরতির পরও নাগোর্নো-কারাবাখের ঘনবসতিপূর্ণ স্তেপানাকের্তে গোলাবর্ষণ অব্যাহত রেখেছে।

শনিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ টেলিফোনে আজারবাইজান আর্মেনিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সপ্তাহখানেক আগে তার মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি মেনে চলার ওপর জোর দেন বলে মস্কো জানিয়েছে। পরে দুই দেশ প্রায় একই ধরনের বিবৃতি দিয়ে নতুন মানবিক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেয়। দেশ দুটি জানায়, তারা ১০ অক্টোবর মস্কোর দেয়া বিবৃতি ১৭ অক্টোবর হওয়া চুক্তি অনুযায়ী মানবিক যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলতে প্রস্তুত।

বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মধ্যস্থতায় বাকু অস্বীকৃতি জানানোর পর আর্মেনিয়াই নাগোর্নো-কারাবাখের হয়ে আজারবাইজানের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে।

আর্মেনিয়া বলছে, তার সেনাবাহিনী সংঘাতে জড়ায়নি। তারা আজারবাইজানের কোথাও হামলাও করেনি। তবে প্রধানমন্ত্রীর ছেলেসহ আর্মেনিয়ার অনেক নাগরিকই নাগোর্নো-কারাবাখের সেনাবাহিনীতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন বলে রয়টার্স জানিয়েছে।

দুই দেশের সংঘাতকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ ককেশাস অঞ্চল গত প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে অস্থিতিশীল সময় পার করছে। বিরোধপূর্ণ অঞ্চল নিয়ে এর আগেও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল আর্মেনিয়া আজারবাইজান। ১৯৮৮ সাল থেকে দীর্ঘ ছয় বছরের যুদ্ধ শেষে ১৯৯৪ সালে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছে উভয় দেশ।

নাগোর্নো-কারাবাখকে আজারবাইজান নিজেদের বলে দাবি করলেও অঞ্চলটি এখন আর্মেনীয় নৃগোষ্ঠীর অধিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর্মেনিয়াও নাগোর্নো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণকারীদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিকভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। নাগোর্নো-কারাবাখের সেনাবাহিনীতে কাজ করতে আর্মেনিয়া স্বেচ্ছাসেবকও পাঠিয়ে আসছে।

দুই দেশের বিরোধে রাশিয়ার মধ্যস্থতার ভূ-রাজনৈতিক কূটনৈতিক কারণ রয়েছে। আর্মেনিয়া আজারবাইজান উভয়েই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। আর্মেনিয়ায় রাশিয়ার একটি সামরিক ঘাঁটি আছে। অন্যদিকে আজারবাইজানের সঙ্গেও মস্কোর সম্পর্ক ভালো।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন