শিশুদের রহস্যময় উপসর্গে ভূমিকা আছে সুপার অ্যান্টিজেনের

বণিক বার্তা ডেস্ক

ফেব্রুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে কভিড-১৯- আক্রান্তের সংখ্যা হিসাব করলে তা বোস্টনের জনসংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। সৌভাগ্যবশত লাখ ৯৭ হাজার নিশ্চিত বা সম্ভাব্য আক্রান্তের মাঝে তুলনামূলকভাবে মৃদু অসুস্থতা ছিল। ১৬ থেকে ৪৫ শতাংশের মাঝে হয়তো তেমন কোনো উপসর্গই দেখা যায়নি। তার পরও গ্রুপের যাদের বয়স ২১ বছরের কম তাদের অনেকের অবস্থা মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছিল, যাকে বলা হচ্ছে মাল্টিসিস্টেম ইনফ্লামেটরি সিনড্রোম ইন চিলড্রেন বা এমআইএস-সি।

ধন্যবাদ দেয়া যেতে পারে জরুরি গবেষণাকে, যা শুরু হয়েছিল উপসর্গের রহস্যময় দিকগুলোর সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষণগুলো একত্র হওয়ার প্রেক্ষাপটে। প্রাথমিকভাবে লক্ষণগুলো ছিল জ্বরর‍্যাশ, পেটে ব্যথা, ডায়রিয়া বমি। যদিও শনিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এমআইএস-সিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল হাজার ২৭। এটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তীব্র প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে। ফলে প্রায়ই রোগীকে আইসিইউতে নিতে হয় এবং কোনো কোনো সময় তা মরণঘাতীও হয়ে ওঠে। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২১ বছরের কম বয়সীদের করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ক্ষেত্রে প্রধান কারণ ছিল এমআইএস-সি।

ফিজিশিয়ান সায়েন্টিস্ট আলভারো মোরেইরা বলেন, এটা খুব দ্রুত ঘটে এবং শিশুরা এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে যে ৭০ শতাংশকে আইসিইউতে ভর্তির প্রয়োজন পড়ে।

এমনকি সিনড্রোমের প্রাথমিক পর্যায়ে স্পষ্টতা দেখা দেয়ার সঙ্গে এর সত্যিকারের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফলগুলো নিয়ে প্রশ্নও সামনে আসতে শুরু করে। এমআইএস-সি শিশুদের মাঝে সচরাচর করোনাভাইরাসের পরিচিত লক্ষণগুলো (যেমন কাশি, শরীর ব্যথা সর্দি) দেখা দেয়ার কয়েক সপ্তাহ পর থেকে সামনে আসতে শুরু করে। গবেষণাগুলো বলছে, এমআইএস-সি এমনকি ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে উপসর্গহীন থাকার পরও দেখা দিতে পারে।

মোরেইরা বলেন, এটা খুবই ভয়ংকর একটা পর্ব। এটি তখনো দেখা দিতে পারে যখন বাবা-মারা জানেই না যে তাদের সন্তান কভিড-১৯- আক্রান্ত। এর দীর্ঘমেয়াদি পরিণামগুলোও এখন তদন্তের পর্যায়ে আছে।

ইতালি যুক্তরাজ্যে ডাক্তাররা শুরুর দিকে ভেবেছিলেন এটা হয়তো কাওয়াসাকি রোগ। এটি শিশুদের আরেকটি মারাত্মক রোগ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু পরে পার্থক্যগুলো বোঝা যেতে থাকল। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এমআইএস-সি রোগীর বয়স দেখা গেছে নয় থেকে শুরু হয়েছে। যেখানে কাওয়াসাকি রোগীদের বয়স সাধারণত দুইয়ের নিচে হয়ে থাকে।

সহকর্মীদের সঙ্গে মিলে কম্পিউটেশনাল অ্যান্ড সিস্টেম বায়োলজির প্রফেসর ইভেট বাহার দেখতে চেয়েছেন ভাইরাস কীভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সার্স-কোভ--এর গোলাকার একটি আকার আছে, যেখানে স্পাইক যুক্ত থাকে মানবকোষের পৃষ্ঠের প্রোটিনের সঙ্গে। যাকে বলে এসিই২।

বাহার কাওয়াসাকি বিশেষজ্ঞ মোশে আরদিতি দেখেছেন সার্স-কোভ-- একটি অংশের স্পাইকে একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। স্পাইক টুকরো সুপার অ্যান্টিজেন নামে পরিচিত, যা ব্যাকটেরিয়াল টক্সিনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। যে প্রোটিনটি টি সেল থেকে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া উৎপাদন করে, এটি ইমিউন সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।

অন্য গবেষণায় দেখা গেছে, ইমিউন সিস্টেমের অতিপ্রতিক্রিয়ার কারণে কভিড-১৯-এর মারাত্মক ফলস্বরূপ অতিরিক্ত প্রদাহ দেখা যায়, যা স্থায়ীভাবে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতিও করতে পরে।

আরদিতি বলেন, অবশেষে আমরা দেখেছি, ভাইরাল স্পাইক সেগমেন্ট সব ইমিউন প্রতিক্রিয়াকে প্ররোচিত করে। কেবল এমআইএস-সির ক্ষেত্রই না বরং বয়স্কদের মধ্যেও।

এছাড়া সিডিসির আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, একই অবস্থা বয়স্কদের মাঝেও দেখা যেতে পরে। যাকে তারা বলছেন এমআইএস-এ।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন