চীনে বিয়ের হিড়িক, এক সপ্তাহে ৬ লাখ জুটির গাঁটছড়া

বণিক বার্তা অনলাইন

করোনাভাইরাস মহামারীতে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আর সব কার্যক্রমের পাশাপাশি বিয়ের মতো সামাজিক বন্ধনও থমকে গিয়েছিল। লকডাউনের আগে কথাবার্তা ঠিকঠাক হয়ে থাকা কিছু বিয়ে ছোট আকারে পারিবারিকভাবে অনুষ্ঠিত হলেও বেশিরভাগ আয়োজনই বন্ধ ছিল। এজন্য লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিলের পর পরই ব্যাপকভাবে বিয়ের আয়োজন শুরু হয়েছে। 

লকডাউন তুলে নেয়ার পর এক সপ্তাহের সর্বোচ্চ ৬ লাখ জুটি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। দেশটিতে বিয়ের অনুষ্ঠানের জনপ্রিয় সময় হলো ‘গোল্ডেন উইক’ অবকাশ। সাপ্তাহিক এই জাতীয় ছুটি শেষে গত ১৪ অক্টোবর বিয়ের জন্য হোটেল, ব্যানকোয়েট হল ও অন্য কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বুকিং শেষ হয়ে গেছে।

সপ্তাহজুড়ে দেশটির জাতীয় এই ছুটিতে ৬৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছেন। ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের সূচনা হিসেবে এটিকে তথাকথিত ‘প্রতিশোধের যাত্রা’ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মতে, ভ্রমণগুলোতে লোকেরা ৪৬৬ বিলিয়ন ইউয়ান (৬৯.৫ বিলয়ন ডলার) ব্যয় করেছে।

গত ডিসেম্বরে নভেল করোনাভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরে। ‘গোল্ডেন উইক’-এ ৯৯টি দম্পতি গাঁটছড়া বেঁধেছেন। বেশিরভাগই ফ্রন্টলাইন চিকিত্সা কর্মীদের এই জুটিগুলো উন্মুক্ত স্থানে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এছাড়া নিংবোর পূর্ব থিয়েটারের নৌবাহিনীর ১৫টি জুটি দলীয়ভাবে বিয়ের আয়োজন করে। 

বিয়ের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্লাটফর্ম হানলিজি জানিয়েছে, গত ১৪ অক্টোবর শেষ হওয়া ৮ দিনের সরকারি ছুটিতে রেকর্ড ৬ লাখেরও বেশি জুটির বিয়ে হয়েছে। এটা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিষয়টি নিয়ে কিছু মানুষ কৌতুকচ্ছলে মৃদু অভিযোগও তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, এই মহামারীর মধ্যে ৮ দিনের এই ছুটিতে আত্মীয়-স্বজনদের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিতে তাদের ঘাম ছুটেছে। সেই সঙ্গে গোটা মাসের রোজগার জলের মতো বেরিয়ে গেল!

গুইজো প্রদেশের বিজি এলাকার এক ব্যক্তি বলেছেন, তাকে ২৩টি বিয়েতে যোগ দিতে হয়েছে! অনুষ্ঠানগুলোতে উপহার ও অন্যান্য খরচ বাবদ এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা নেমে গেছে। তার এই অভিজ্ঞতা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কিছু মন্তব্যকারী হ্যাশট্যাগে লিখেছেন, ‘বিয়ের কারণে দারিদ্র্য ফিরে আসছে’! 

চীনে হঠাৎ করে বিয়ের এমন হিড়িক নিয়ে যারা অভিযোগ করছেন তাদের অভিযোগের জবাব দিতে একটি নিবন্ধ লিখেছেন সমসাময়িক বিষয়ের একজন ভাষ্যকার। তিনি লিখেছেন, এটা মহামারীর বিরুদ্ধে চীনের বিজয়ের ফল। মহামারী নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এ ধরনের দৃশ্য থাকতো না। 

এদিকে করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর সিনেমা হলগুলোও গোল্ডেন উইকে সবচেয়ে ব্যস্ত সপ্তাহ দেখেছে। জাতীয় এই ছুটিতে থিয়েটারগুলো ৩ দশমিক ৯২ বিলিয়ন ইউয়ান (৫৮০ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের টিকিট বিক্রি করেছে। 

চীনা সরকার করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ধাক্কা ঠেকাতে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ভারসাম্য বজার রাখার কৌশল নিয়েছে। এ বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি যেখানে ৪ শতাংশের বেশি সঙ্কোচনের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে, সেখানে চীনের অর্থনীতি ১ দশমিক ৫ থেকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। 

অন্য দেশগুলোর তুলনায় চীনের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হলেও বিশ্লেষকরা চীনজুড়ে অসম অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা দল চায়না বেইজ বুক গত ১৩ আগস্ট থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৩০০টি ব্যবসার ওপর জরিপ চালিয়েছে। ফলাফলে দেখা গেছে, মূল শহরগুলোর বাইরে বেশিরভাগ সংস্থা অন্ধকারেই রয়ে গেছে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন