রংপুর বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আগাম আলুর আবাদ হয় রংপুর সদর ও নীলফামারী জেলায়। গত বছর সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এ দুই জেলায় ১২ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়। কিন্তু চলতি মৌসুমে কয়েক দফা বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে অধিকাংশ জমির পানি নামতে দেরি হওয়ায় আগাম আলু চাষে ব্যাঘাত ঘটেছে। এজন্য ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মাত্র ৯৮৯ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ শেষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত আগাম আলু রোপণ অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এখনো অধিকাংশ জমির মাটি ভেজা থাকায় আলু রোপণ করতে পারছেন না চাষীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়া ও দফায় দফায় বন্যার কারণে জেলায় গত বছরের অর্ধেক জমিতে আলুর আবাদ হতে পারে।
এদিকে গত সেপ্টেম্বরে অধিকাংশ আলুচাষী নির্দিষ্ট সময়ে কয়েকবার জমি পরিচর্যা করেও বন্যার কারণে বীজ বপন করতে ব্যর্থ হন। এমনকি কেউ কেউ বীজ বপন করলেও তা পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে গত বছরের অর্জিত জমির অর্ধেকও এ বছর পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে এ অঞ্চলে ১ হাজার মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চলতি অক্টোবরের ১৮ ও ১৯ তারিখেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পূর্ব দলিরাম গ্রামের কৃষক মো. খায়রুজ্জামান জানান, এ বছর তিন বিঘা (২৭ শতকে এক বিঘা) জমিতে আগাম আলু চাষ করার কথা ছিল। এমনকি বন্যার কারণে তার বপন করা কিছু জমির আলু নষ্ট হয়েছে। তাই পানি নেমে যাওয়ায় পুনরায় আলু আবাদ নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
তিনি আরো জানান, গত বছর তিন বিঘা জমিতে স্থানীয় জাত (সাদা আলু) আবাদ করেছিলেন। বিঘাপ্রতি ৮৫ কেজির দুই বস্তা আলুবীজ লেগেছিল। বিঘাপ্রতি আলুর ফলন হয়েছিল গড়ে ছয় বস্তা (১২ দশমিক ৭৫ মণ) করে।
রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার নোহালী ইউনিয়নের পশ্চিম কচুয়া বালাপাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, কয়েকবার আলু চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেও বৃষ্টির কারণে আগাম আলুবীজ বপন করতে পারেননি। এ বছর দুই বিঘা জমিতে ক্যারেজ জাতের আলু আবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আলুবীজের (৮৫ কেজি) প্রতি বস্তা কিনতে তার খরচ হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা।
একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার কারণে আলু আবাদে সমস্যা না হলে আগামী চার-পাঁচদিনের মধ্যে বাজারে আগাম আলু পাওয়া যেত। ভালো দাম পাওয়ার জন্য কেউ কেউ ৪৫-৫০ দিনের মাথায় ক্ষেত থেকে আলু তুলে ফেলেন। তবে আগাম আলুবীজ বপনের ৫৫-৬০ দিন পর বাজারে আসে। এ আলু শুরুতে ১০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও নিয়মিত আলু আসার আগ পর্যন্ত আগাম আলু প্রতি কেজি ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে মূলত নীলফামারী ও রংপুর জেলায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ আগাম আলু চাষ হয়। তবে আলু চাষে এগিয়ে আছে নীলফামারী জেলার কৃষকরা। গত (২০১৯-২০) মৌসুমে আগাম আলু চাষ হয়েছিল ১২ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলায় ৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর ও রংপুর জেলায় ২ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর আবাদ হয়েছিল। কিন্তু দফায় দফায় বন্যার কারণে এবার আলু চাষ ব্যাহত হয়। চলতি (২০২০-২১) মৌসুমের ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট আলু চাষ হয়েছে মাত্র ৯৮৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলায় আলুর আবাদ হয়েছে ৯৮১ হেক্টর ও রংপুরে ৮ হেক্টর।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, দফায় দফায় বন্যার জন্য অনেক জমির পানি ধীরে ধীরে নামছে। আবার অনেক জমির পানি নেমে গেলেও মাটি ভেজা থাকায় আলু বপন করা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, বৈরী আবহাওয়া না থাকলে এতদিনে ছয় হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে আলুর আবাদ হতো। তার পরও কৃষকদের সব রকম প্রস্তুতি থাকায় যেভাবে কৃষকরা আলু চাষে লেগেছেন, আশা করা যাচ্ছে, ৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রচুর জমিতে আলুর আবাদ হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর আঞ্চলিক অফিসের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, দফায় দফায় বন্যায় সমগ্র কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মাঝামাঝি আগাম আলু আবাদের উপযুক্ত সময়। কিন্তু চলতি মৌসুমে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে আলু আবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।