ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে আর আলোচনায় বসতে চায় না যুক্তরাজ্য

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) সিদ্ধান্ত গলার কাঁটা হয়ে বিঁধে ছিল যুক্তরাজ্যের। গণভোট হয়ে যাওয়ার চার বছর পেরিয়ে গেলেও ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তির অনিশ্চয়তার ছায়া থেকে বেরুতে পারেনি ব্রিটেন। শেষ পর্যন্ত হয়তো অনিশ্চয়তার অবসান ঘটতে চলেছে। অবশ্য চূড়ান্ত পরিণতি সম্ভবত যুক্তরাজ্যের অনুকূলে যাচ্ছে না। খবর ব্লুমবার্গ।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ইইউর সঙ্গে আর আলোচনায় বসতে চায় না তারা। কারণ যতক্ষণ না ইইউ নেতারা একটি অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনি শর্তগুলোর বিষয়ে বিশদ আলোচনা করতে সম্মত হচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন করে কোনো বৈঠকে বসার মানে হয় না।

ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে যুক্তরাজ্যের পক্ষের প্রধান আলোচক লর্ড ফ্রস্ট বলেছেন, তিনি ইইউর প্রধান আলোচক মিশেল বার্নিয়েকে জানিয়ে দিয়েছেন যে সোমবারের পূর্বপরিকল্পিত বৈঠকে বসার কোনো যুক্তি তারা খুঁজে পাচ্ছেন না।

২০১৬ সালের ২৩ জুন ব্রেক্সিট নিয়ে যুক্তরাজ্যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। প্রায় ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ ভোটার ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেন। কিন্তু সেই বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া নিয়ে জল কম ঘোলা হয়নি। কবে কীভাবে ব্রিটেন ইইউর সদস্যপদ ত্যাগ করবে, ব্রেক্সিট হয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্যের স্বরূপ কেমন হবেএগুলো নিয়ে অন্তহীন আলোচনা চলতে থাকে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনও হয়েছে একাধিকবার। শেষ পর্যন্ত চলতি বছরের শুরুর দিকে ইইউ থেকে বিচ্ছিন্ন হয় ব্রিটেন। তবে সেই অচলাবস্থার রেশ কাটেনি এখনো।

আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার রূপান্তরকাল। সময়ের মধ্যে ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্যিক হিস্যা নিয়ে দুই পক্ষ কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারলে শেষ পর্যন্ত চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিটের পথেই হাঁটতে হবে যুক্তরাজ্যকে। সম্প্রতি টুইটারে এক বার্তায় ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন জানান, ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে আলোচনায় গতি আনতে শিগগিরই ব্রাসেলসের একটি আলোচক দল লন্ডনে যাবে।

ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে অচলাবস্থা নিরসনে বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে ইইউ নেতাদের নিয়ে দুই দিনব্যাপী এক সম্মেলন শুরু হয়। এর আগে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সাফ জানিয়ে দেন, সম্মেলনে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না এলে আর কোনো আলোচনা হবে না।

তবে ইইউ নেতারা আলোচনা আরো চালিয়ে যেতে চান। তারা একটি চূড়ান্ত চুক্তির পথের বাধাগুলো দূর করার জন্য যুক্তরাজ্যকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। যদিও মিশেল বার্নিয়ে বলেছেন, চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট চুক্তির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ইইউ। তবে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেছেন, চুক্তি চূড়ান্ত করতে ইইউকেও কিছু বিষয়ে ছাড় দিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।

বরিস জনসন জানিয়েছিলেন, শুক্রবার সম্মেলন শেষের পরই তিনি জানিয়ে দেবেন যে তার দেশ আর আলোচনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক কিনা। সে অনুযায়ী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, যুক্তরাজ্যকে আগামী বছর থেকে কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই বাণিজ্য করার প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যকে ব্যাপক পরিসরে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা দেয়ার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না ইইউ। অথচ কানাডার সঙ্গে ইইউর ধরনের চুক্তি আগে থেকেই রয়েছে।

তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই বিকল্প কিছু ভাবতে হবে। সময় তিনি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইইউর বিদ্যমান বাণিজ্য চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে আনেন। সব শেষে জনসন বলেন, আলোচনা এখানেই শেষ হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন