বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ চুক্তির বিষয়ে তদন্তের মেয়াদ বাড়িয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অ্যান্টিট্রাস্ট কমিশন। বৃহৎ এ অধিগ্রহণ চুক্তি বিষয়ে যথাযথ তদন্ত শেষে আগামী ৮ জানুয়ারির আগে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত মিলবে না বলে নিশ্চিত করা হয়। ইইউর ওয়েবসাইটে দেয়া এক নথিতে এমনটাই স্পষ্ট করা হয়। খবর ইটি টেলিকম।
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় ফিটনেস ট্র্যাকিং ডিভাইস নির্মাতা ফিটবিট অধিগ্রহণ চুক্তি পরিধেয় হার্ডওয়্যার বাজারে গুগলের প্রবেশ নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে পরিধেয় প্রযুক্তি পণ্য বাজারে শুধু ওয়্যারওএস নয়; হার্ডওয়্যার সরবরাহেও প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপল এবং স্যামসাংকে টেক্কা দিতে জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক পরিধেয় প্রযুক্তি পণ্য বাজারে প্রবেশের লক্ষ্য থেকে গত বছর নভেম্বরের শুরুতে ২১০ কোটি ডলারে ফিটবিট অধিগ্রহণে চুক্তিবদ্ধ হয় গুগল। এ অধিগ্রহণ চুক্তিতে বড় ধরনের ঝুঁকির আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল ইইউ। বলা হচ্ছিল, গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ চুক্তির ফলে ডাটা সুরক্ষা ঝুঁকিতে পড়বে। গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণের ফলে বাজার প্রতিযোগিতা প্রভাবিত হবে কিনা কিংবা মার্কিন সার্চ জায়ান্টটির কাছে অনেক বেশি মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের দখল চলে যাবে কিনা, সে বিষয় নিয়ে এতদিন তদন্ত চালিয়েছে ইউরোপের নীতিনির্ধারক সংস্থাটি।
ফিটনেস ট্র্যাকিং ডিভাইস তৈরি করছে ফিটবিট, যা ব্যবহারকারীর হূদস্পন্দন, কার্যকারিতার পর্যায় ও ব্যবহারকারীর জিপিএস ডাটা পর্যবেক্ষণ এবং সে অনুযায়ী নানা শারীরিক অসংগতির তথ্য সরবরাহ করে। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা শেষে গুগলের এ অধিগ্রহণ ঠেকানোর দাবি জানিয়েছিল ২০টি ভোক্তা সংগঠন এবং গোপনীয়তাবিষয়ক আইনজীবীদের একটি দল। অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তে নেমেছিল ইইউ। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে পর্যালোচনা শেষে চুক্তিটির বিষয়ে সবুজ সংকেত প্রদানে ইইউর নীতিগত সিদ্ধান্তের তথ্য দিয়েছিল ইইউর সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র। এবার তদন্তের মেয়াদ আরো বাড়ানোর তথ্য সামনে এল।
গুগল শুরু থেকে দাবি করে আসছিল, বিজ্ঞাপন প্রদর্শনের স্বার্থে ফিটবিটের ডাটা ব্যবহার করবে না তারা এবং সংগ্রহ করা ডাটা বিষয়ে তারা স্বচ্ছ থাকবে।
গত জুলাইয়ে গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণের বিরোধিতা করে প্রাইভেসি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি প্রতিষ্ঠান জানায়, কারো এত বেশি ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করা কোনো প্রতিষ্ঠানের উচিত বলে আমরা মনে করি না। আমরা এ অধিগ্রহণের বিরোধিতা করছি। গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য বাজারে অন্যায্য প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে এবং অসংখ্য ফিটবিট ডিভাইস ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলবে।
ইইউ এ অধিগ্রহণ চুক্তিতে অনুমোদন দেবে নাকি বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হবে, সে বিষয়ে গত ২০ জুলাইয়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর তথ্য দিয়েছিলেন নীতিনির্ধারকরা। তারা গুগল ও ফিটবিটের বেশকিছু প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের কাছে বিস্তারিত প্রশ্নাবলি পাঠিয়েছেন। সম্ভাব্য এ অধিগ্রহণের ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো অসুবিধায় পড়বে কিনা, সে বিষয়টিই জানতে চেয়েছে ইইউ। সর্বশেষ জানা গেল গুগল-ফিটবিট অধিগ্রহণ চুক্তি বিষয়ে চলতি বছর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মিলছে না।
শুধু ইইউর অ্যান্টিট্রাস্ট কর্তৃপক্ষই নয়; গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ চুক্তির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রক সংস্থাও। গুগলের বিরুদ্ধে ইউরোপে একাধিক তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা নিয়ে তদন্ত চলমান। এ পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ফিটবিটকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিলে ইউরোপ অঞ্চলের গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যাবে। গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ ইউরোপের নাগরিকদের জন্য তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়াবে।
ইইউর সিদ্ধান্ত প্রদান নিয়ে দেরি করা বিষয়ে গুগলের এক মুখপাত্র জানান, আমরা তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিধেয় ডিভাইস বাজারে ভালো কিছু পণ্য সরবরাহের লক্ষ্য থেকে ফিটবিট কিনতে সম্মত হয়েছি। এ অধিগ্রহণ চুক্তিটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। গুগলের ব্যবসার প্রধান শর্তই হলো গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আমরা বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। ফিটবিট অধিগ্রহণ নিয়ে কোনো দেশ বা অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদ্বেগ থাকলে আমরা তাদের সহায়তা করতে চাই। গুগলের ফিটবিট অধিগ্রহণ পরিধেয় ডিভাইস বাজারে কোনো ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।
বৈশ্বিক অনলাইন অনুসন্ধান ও মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে গুগল। বেশ কিছুদিন ধরে কোর ব্যবসায় অনলাইন অনুসন্ধান ও অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের পাশাপাশি হার্ডওয়্যার খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণে জোর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যদিকে বৈশ্বিক পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে খারাপ সময় পার করছে ফিটবিট।
গত নভেম্বরে ফিটবিটের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জেমস পার্ক বলেন, আমরা একটি বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড তৈরি করতে পেরেছি। যে কারণে বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ সুস্থ জীবনযাপনের জন্য সক্রিয়ভাবে আমাদের পণ্য ব্যবহার করছেন।
তিনি বলেন, ফিটবিটের ভবিষ্যৎ মিশন বাস্তবায়ন এবং আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য গুগল আদর্শ অংশীদার। গুগলের সঙ্গে অংশীদারিত্বের কারণে ভবিষ্যতে ফিটবিটের উদ্ভাবনী কার্যক্রম আরো বাড়বে। ফলে পরিধেয় প্রযুক্তিপণ্য ক্যাটাগরিতে আরো নতুন পণ্য যুক্ত হবে এবং মানুষ পরিধেয় পণ্যে আরো বেশি স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট সেবা পাবেন।