এলএনজির উৎপাদন বাড়াতে মরিয়া কাতার

বণিক বার্তা ডেস্ক

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) উৎপাদনের ক্ষেত্রে কাতার দ্রুত তাদের অবস্থান পাল্টে ফেলছে। জ্বালানি পণ্যটির বাজারে দ্রুত সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা হিসেবে দেশটি ২০২৫ সালের মধ্যে বার্ষিক উৎপাদন ১১ কোটি টনে নিয়ে যেতে চায়। আর এরও দুই বছর পর অর্থাৎ ২০২৭ সালে উৎপাদন আরো বাড়িয়ে ১২ কোটি ৬০ লাখ টনে নেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জোরেশোরে কাজ করছে কাতার। তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো কাতার এলএনজির বৈশ্বিক বাজারে নেতৃত্ব দিতে চায়। যে কারণে জ্বালানি পণ্যটির উৎপাদনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যে আটকে থাকতে চায় না তারা। খবর আর্জাস মিডিয়া গালফ টাইমস

বৈশ্বিক জ্বালানির বাজারে অন্যতম প্রভাবশালী দেশ কাতার। উপসাগরীয় ছোট তবে গুরুত্বপূর্ণ দেশটি দুই বছর আগে জ্বালানি তেল উত্তোলনকারী দেশগুলোর সংস্থা ওপেকের সঙ্গে ৫৭ বছরের সম্পর্কের ইতি টানেন। ওপেকের ধরাবাঁধা নিয়ম থেকে বের হয়ে এসে এর পর থেকেই বৈশ্বিক জ্বালানির বাজারে রীতিমতো আধিপত্যশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে চলেছে দেশটি। এরই অংশ তাদের উৎপাদন সক্ষমতা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ রাখতে না চাওয়া। যে কারণে বর্তমান বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা কোটি ৭০ লাখ টন থেকে বাড়িয়ে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কয়েক গুণে নিয়ে যেতে কাজ করছে উপসাগরীয় দেশটি। এজন্য দেশটির সুপারজায়ান্ট উত্তর ফিল্ড প্রকল্প থেকে রফতানি বৃদ্ধি করতে এরই মধ্যে রাস লাফান টার্মিনালের সঙ্গে আরো চারটি উৎপাদন ট্রেন সংযুক্ত করা হয়েছে।

এলএনজি উৎপাদন নিয়ে কাতারের এমন বড় লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে দেশটির জ্বালানিমন্ত্রীর কথায়ও। সম্প্রতি জাপানে একটি সম্মেলনে দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী সাদ শেরিদা আল কাবি এলএনজি উৎপাদনে তাদের অতিরিক্ত সক্ষমতা ব্যবহারের সম্ভাবনার বিষয়টি জানিয়েছেন। তিনি বলেন২০১৭ সালে আমরা বছরে ১০ কোটি টন এলএনজি উৎপাদনের কথা জানিয়েছিলাম। তরে পরের বছরই আমরা আমাদের সেই লক্ষ্যমাত্রাকে আরো বাড়িয়ে ১১ কোটি টনে নিয়েছি। আর এখন যেহেতু নর্থ ফিল্ডে আমাদের আরো উৎপাদন সক্ষমতা বেড়েছে। সে কারণে আমরা উৎপাদন ২০২৭ সালের মধ্যে ১২ কোটি ৬০ লাখ টনে নিয়ে যেতে চাই।

তবে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণেও যে কাতার থেমে থাকতে চায় না, সেটিও উঠে এসেছে দেশটির জ্বালানিমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, প্রথাগতভাবে দেখা যায় যে আমরা নির্দিষ্ট কোনো লক্ষ্যমাত্রায় আটকে থাকতে চাই না। ১২ কোটি ৬০ লাখ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আমরা প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক গ্যাস সম্পদের উন্নয়নে কাজ করে যাব। যাতে বৈশ্বিক এলএনজির বাজারে ভ্যালু চেইন হিসেবে নেতৃত্ব দিতে পারে কাতার।

এলএনজির বৈশ্বিক বাজারে আধিপত্য বিস্তারে কাতারের এমন উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে কঠোরভাবে কাজ করছে দেশটির খাতসংশ্লিষ্টরা। গত মাসেই দেশটির রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান কাতার পেট্রোলিয়াম (কিউপি) তিনটি প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রাস লাফানে নতুন চারটি উৎপাদন ট্রেন নির্মাণের চূড়ান্ত প্রস্তাব পেয়েছে। আর এটি নির্মাণ হলে এর প্রতিটি থেকে বছরে ৮২ লাখ ৫০ হাজার টন এলএনজি উৎপাদন করা যাবে।

আর এসব লক্ষ্যপূরণে কাতার মোটেই দেরি করতে চায় না। কারণ এলএনজির বাজারে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য দেশও কাতারের সঙ্গে সমানতালে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য মরিয়া। এসব দেশও খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়নকে সামনে রেখে ব্যাপক বিনিয়োগে যাচ্ছে। ফলে কাতার ধীরে চলো নীতিতে চলতে নারাজ। আর কারণেই প্রতিটি প্রকল্পই দ্রুত শেষ করতে চায় দেশটি। যা উঠে এসেছে জ্বালানিমন্ত্রীর বক্তব্যেও।

সাদ শেরিদা আল কাবি বলেন, নর্থ ফিল্ড প্রকল্পকে আমরা দ্রুত পুরোদমে ব্যবহার করতে চাই। এজন্য আগের ঘোষণায় প্রকল্পের কাজের জন্য যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটি এখন আরো এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা আশা করছি চলতি বছরের মধ্যেই অবশিষ্ট নির্মাণ, প্রকৌশল প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ চূড়ান্ত করা হবে।

এলএনজির উৎপাদন নিয়ে কাতারের এমন পরিকল্পনার বিষয়টি উঠে এসেছে গবেষণায়ও। বৈশ্বিক বাজারবিষয়ক তথ্য প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ডান অ্যান্ড ব্রাডস্ট্রিটের প্রতিবেদনে এলএনজির ক্ষেত্রে কাতারের আধিপত্যশীল হয়ে ওঠার চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, এলএনজি উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রতিদ্বদ্বী দেশগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচ, সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা অর্জন দেশটিকে এলএনজির বাজারে এগিয়ে রেখেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি তাদের দেশভিত্তিক ওই প্রতিবেদনে আরো বলছে, বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদা দীর্ঘমেয়াদি একটি চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে এলএনজির দাম বড় আকারে কমে যাচ্ছে। তবে দুটোর কোনোটিই যেন কাতারের উৎপাদন কার্যক্রমের ঊর্ধ্বমুখিতাকে থামাতে পারছে না। বরং নতুন নতুন কূপ খননে কাজ করছে উপসাগরীয় দেশটি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন