পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনলাইন ক্লাস, সেশনজট বৃদ্ধির শঙ্কা

সাইফ সুজন

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) সব মিলিয়ে বিভাগ রয়েছে ৩৪টি। এর মধ্যে বেশির ভাগই গত জুলাইয়ের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইনে পাঠদান শুরু করে। যদিও ক্লাস শুরুর এক মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে হাতেগোনা তিন-চারটি বিভাগে সীমিত পর্যায়ে চলছে অনলাইন শিক্ষা। 

বশেমুরবিপ্রবি ছাড়াও অনলাইন ক্লাস চালু করে তা বন্ধ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে বেশকিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। ডিভাইস সংকট, আর্থিক সক্ষমতা না থাকা, নেটওয়ার্ক সমস্যা এবং নির্দিষ্ট ক্লাস রুটিন ও শিক্ষা পরিকল্পনার অভাব—এসব কারণেই গতি পাচ্ছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। ফলে সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা। 

করোনার প্রাদুর্ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পর পরই সেশনজট ঠেকাতে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার আহ্বান জানায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। গত ২৩ মার্চ করোনা বন্ধের সময়ে অনলাইনে একাডেমিক কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়ে দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নির্দেশনা দেয় ইউজিসি। কমিশনের দেয়া চিঠিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে শিক্ষকদের অনলাইনে পাঠদান চালাতে উত্সাহ দেয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ গবেষণা ও শিক্ষা নেটওয়ার্কের (বিডিরেন) ডাটা সেন্টারের জুম অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে বিনা খরচে এ অনলাইন কার্যক্রম চালানো সম্ভব। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য শিক্ষকদের বিডিরেনের সঙ্গে যোগাযোগের আহ্বান জানানো হয়। এ ব্যবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ডেস্কটপ, ল্যাপটপ অথবা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারঅ্যাকটিভ শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে পারবে। তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করলেও ইউজিসির এ আহ্বানে সাড়া পাওয়া যায়নি বেশির ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বণিক বার্তাকে বলেন, একেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমের অবস্থান একেক রকম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আলোকে ক্লাস নেয়া হচ্ছে না। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু বিভাগ তাদের নিজেদের মতো করে ক্লাস নিচ্ছে। আবার দেখা যাচ্ছে, একই ব্যাচের কয়েকজন ক্লাস নিচ্ছেন, বাকিরা নিচ্ছেন না। সব মিলিয়ে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা রয়েছে। এতদিন এইচএসসি নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। এখন যেহেতু সরকার থেকে বলা হচ্ছে, জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন। সে সিদ্ধান্তের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দ্রুত তাদের শিক্ষা কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া উচিত। 

অনলাইন ক্লাস এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ না থাকাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে বশেমুরবিপ্রবির একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১ জুলাই থেকে আমরা পুরোদমে ক্লাস শুরু করি। প্রথমদিকে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ছিল ৫০-৬০ শতাংশ। এক পর্যায়ে সেটি ১০-২০ শতাংশেরও নিচে নেমে আসে। ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে বাদ দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম এগিয়ে নেয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। তাই অনলাইন ক্লাস বন্ধ রাখা হয়েছে। 

এদিকে অনলাইন ক্লাস নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে এক ধরনের অস্পষ্টতা রয়েছে। তারা বলছেন, এখন যেসব ক্লাস নেয়া হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে এসব ক্লাস পুনরায় লাগবে কিনা, সে বিষয়েও কোনো নির্দেশনা নেই। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত একটি বিভাগের একজন অধ্যাপক নাম প্রকাশ করার না শর্তে বলেন, আসলে শিক্ষকরা ক্লাস নিচ্ছেন বিক্ষিপ্তভাবে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনো সুস্পষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা নেই। এমনকি অনলাইন ক্লাসকে জনপ্রিয় করার কোনো উদ্যোগও নেই। 

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর পরই আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে আহ্বান জানিয়েছি অনলাইনে ক্লাস নেয়ার জন্য। তাদের বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এর পরও বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় স্বতঃস্ফূর্ত ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে না। এখন আর বসে থাকার সময় নেই। পরিকল্পনার জন্যও অনেক সময় পাওয়া গেছে। এখন গতি নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা তাদের সেশন সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে বিপদে পড়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন