প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের করোনা চিকিৎসার খরচ কি সাধারণের সাধ্যের ভেতর?

বণিক বার্তা অনলাইন

সাধারণ আমেরিকানরা যখন হাসপাতালে ভর্তি হন তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের মাথায় আসে হাসপাতাল বিলের কথা। চিকিত্সাবাবদ কত অর্থ খরচ হতে পারে! তা নিয়ে কিছুটা সাবধানী থাকেন তারা। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্টের তো সে ভাবনা নেই।

কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সম্প্রতি হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। আমেরিকার স্বনামধন্য হাসপাতাল ওয়াল্টার রিড ন্যাশনাল মিলিটারি মেডিকেল সেন্টারে চিকিত্সা নিয়েছেন তিনি। এখনো কভিডমুক্ত নন তবে হাসপাতাল ছেড়ে স্বভাবসুলভ দ্বাম্ভিকতার সঙ্গে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমাদের কাছে আছে সবচেয়ে উন্নত ওষুধ আর সেরা সব মেডিকেল যন্ত্রপাতি’। অথচ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যে এরই মধ্যে ২ লাখ ১০ হাজার আমেরিকান প্রাণ হারিয়েছেন তাদের কথা ভুলেও স্মরণ করলেন না দেশটির প্রেসিডেন্ট। বরং আরো এক ধাপ এগিয়ে সবাইকে উপদেশ দিলেন, কভিডকে তোমরা পরাজিত করতে যাচ্ছো। একে তোমাদের জীবন কেড়ে নিতে দিয়ো না। 

তবে বেশিরভাগ আমেরিকানরা কভিড মোকাবেলা করতে গিয়ে কী ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন, ট্রাম্প অবলীলায় সেসব বিষয় এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তাছাড়া আমেরিকার সবচেয়ে উন্নত ও সেরা মেডিকেল চিকিত্সা প্রাপ্তির আর্থিক মূল্যের আকার কত তা নিয়ে নিশ্চয় দেশটির বাসিন্দারা অবাকই হবেন। ট্রাম্পের মতো সেরা চিকিত্সা গ্রহণের খরচ তাহলে কত? 

উত্তরটি হচ্ছে, আমেরিকার স্বাস্থ্য চিকিত্সা অনেক ব্যয়বহুল এবং ভয়ানক জটিল প্রক্রিয়া।   

স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্য অনেক জাতির চেয়ে আমেরিকানদের অনেক বেশি মূল্য চুকাতে হয়। মহামারীর সময়ও যার ব্যত্যয় ঘটেনি। তাছাড়া এই রোগের চিকিৎসার খরচ কতো হতে পারে সে ব্যাপারেও অনেকের ধারণা নেই। 

বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, হোয়াইট হাউস থেকে উড়োজাহাজে করে হাসপাতাল যাওয়া, আবার হাসপাতাল থেকে ফিরে আসা, বিভিন্ন টেস্ট, পরীক্ষামূলক ওষুধের ব্যবস্থাপত্র, হাসপাতালের প্রাইভেট স্যুটে থাকা, চব্বিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ এবং হোয়াইট হাউসের বাইরে থাকার জন্য অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা বাবদ সম্ভবত জনগণের করের টাকা থেকে কয়েক লাখ ডলার খরচ হয়ে গেছে। 

নিউইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির গবেষক ড. ব্রুস তো বলেই বসেছেন, এই ক’দিনে ট্রাম্পের কভিড চিকিত্সা বাবদ ব্যয়ের পরিমাণ যদি ১০ লাখ ডলারও ছাড়িয়ে যায় তাতেও অবাক হওয়ার কিছু নেই। 

সাধারণ আমেরিকানরা কভিড চিকিত্সা বাবদ গড়ে কত খরচ করছেন— এ সংক্রান্ত গবেষণা করেছেন ব্রুস। তিনি জানান, বেশিরভাগ আমেরিকান তাদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবীমা থেকে চিকিত্সার খরচ মেটান। সেক্ষেত্রে কভিড চিকিত্সা করতে গিয়ে বীমা থেকে তারা বড়জোড় ৩ হাজার ডলারের কিছু বেশি অর্থ পেয়েছেন। 

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হিসাব তো আলাদা! তার চিকিত্সার জন্য রয়েছে সরকারি বীমা ব্যবস্থা। তাছাড়া হোয়াইট হাউসের মেডিকেল ইউনিট থেকে বিনামূল্যে চিকিত্সা গ্রহণের সুবিধা তো রয়েছেই। আর ট্রাম্প তো কোনোভাবেই সাধারণের কাতারে পড়েন না। শুধু প্রেসিডেন্ট হিসেবে নন, বয়স হিসেবেও কিন্তু তার ঝুঁকির মাত্রা সাধারণ অন্য দশজনের চেয়ে বেশি।

তাছাড়া ট্রাম্পের চিকিত্সায় রিজেনারন ফার্মাসিটিক্যালসের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ককটেল ব্যবহার করা হয়েছে। সাধারণ জনগণের জন্য এ চিকিত্সা সহজলভ্য নয়, সম্ভবত কখনো এর অনুমোদনও দেয়া হবে না। তাছাড়া সাধারণ আমেরিকানরা এটি নিতেও পারবেন না উচ্চমূল্যের কারণে। কেননা, বিশ বছর ধরে অনুমোদিত এ অ্যান্টিবডি চিকিত্সার জন্য গড়ে ৯৬ হাজার ৭৩১ ডলার খরচ করতে হয়। 

শুধু এটা নয়, ট্রাম্পকে রেমডেসিভির অ্যান্টিভাইরাল ওষুধও দেয়া হয়েছে। এটিও সুলভ নয়। উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এ ওষুধের পাঁচ দিনের ডোজ বাবদ ৩ হাজার ১২০ ডলার খরচ করতে হয়। ট্রাম্প সম্ভবত সবচেয়ে সস্তা যে ওষুধটি গ্রহণ করেছেন তা হচ্ছে ডেক্সামেথাসোন স্টেরয়েড। মূল্য মাত্র ৫ ডলার। 

তবে উড়োজাহাজে করে হোয়াইট হাউস থেকে হাসপাতাল যাওয়া ও আসা বাবদ তিনি খরচ করেছেন ৭৮ হাজার ডলার। যদিও ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের খরচ ছিল ৩৯ হাজার ডলার। 

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

>> মার্কিন প্রেসিডেন্ট আর বাংলাদেশের মানুষ একই চিকিৎসা পেয়েছেন: স্বাস্থ্যমন্ত্রী


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন