কভিড-১৯ প্রভাব নিয়ে বিবিএসের জরিপ

পরিবারগুলোর গড় আয় কমেছে ২০.২৪%

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড-১৯-এর প্রভাবে চলতি বছরের মার্চের তুলনায় আগস্টে দেশের পরিবারগুলোর গড় আয় কমেছে প্রায় ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। আয় কমায় ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। সময় আর্থিক সংকট মোকাবেলায় প্রায় ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পরিবার সরকারি সহায়তা পেয়েছে। ফলে সুবিধার বাইরে ছিল প্রায় ৭৮ শতাংশ পরিবার।

কভিডের অভিঘাত নিয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক ধারণা জরিপ প্রতিবেদনে তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে কভিড-১৯ বাংলাদেশ: জীবিকার ওপর অভিঘাত ধারণা জরিপ-২০২০ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। সভা শেষে ব্রিফিংয়ে প্রতিবেদনের তথ্য সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, করোনার আঘাত আসার আগে চলতি বছরের মার্চে যে পরিবার ১৯ হাজার ৪২৫ টাকা মাসিক আয় করত সেই পরিবার গত আগস্টে আয় করেছে ১৫ হাজার ৪৯২ টাকা। অর্থাৎ সময়ের মধ্যে আয় কমেছে হাজার ৯৩৩ টাকা। চলমান কভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আনুমানিক ৫২ দশমিক ৫৮ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে খাদ্যদ্রব্য ভোগের পরিমাণ মার্চের তুলনায় কমিয়েছে। তাদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ পরিবার মাসিক আয় কমার কারণে খাদ্যদ্রব্য ভোগের পরিমাণ কমিয়েছে। প্রায় ৬৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ পরিবার কোনো না কোনোভাবে কভিড-১৯-এর অভিঘাতে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। বিশেষ করে রিকশা-ভ্যানচালক দিনমজুররা অধিকমাত্রায় আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হয়েছেন। কভিডের কারণে এক মাসের ব্যবধানে বেকারত্বের হার ১০ গুণ বেড়েছিল। মার্চে দেশে কর্মহীন মানুষের হার ছিল দশমিক শতাংশ। করোনার কারণে দেশে সাধারণ ছুটিকালীন এপ্রিল-জুলাইয়ে (চার মাসে) হার বেড়ে ২২ দশমিক ৩৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল। অর্থাৎ চার মাসে নতুন করে বেকার হয় ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ মানুষ। তবে সেপ্টেম্বরে সংখ্যা কমে দশমিক ৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, কভিডের অভিঘাত সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও পড়েছে। প্রভাব কতটা পড়েছে তা বের করতেই প্রথমবারের মতো ধারণা জরিপ পরিচালনা করেছে বিবিএস। এখন বাংলাদেশে একটি গতিশীল শ্রমবাজার বিদ্যমান রয়েছে, যা অত্যন্ত ইতিবাচক। বর্তমানে মহামারীর অভিঘাত ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে। আর বিবিএসের গবেষণা পরিচালনার জন্য বাড়তি কোনো ব্যয় বা বরাদ্দ দেয়া হয়নি। বিবিএস তার নিজস্ব কাঠামোর মধ্যে থেকেই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন।

গবেষণার তথ্য বলছে, দিনমজুরের সংখ্যা ফের আগের কাছাকাছি পৌঁছেছে। মার্চে দিনমজুর ছিল দশমিক ২১ শতাংশ মানুষ, জুলাইয়ে তা শতাংশে নেমে এলেও সেপ্টেম্বরে আবার দশমিক শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তবে কৃষি পরিবারের সংখ্যা প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। হার মার্চে ১০ দশমিক ২৩, এপ্রিল-জুলাইয়ে দশমিক ২২ সেপ্টেম্বরে ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। তবে পরিবারগুলোর আয় কমলেও সে অনুপাতে কমেনি ব্যয়। মার্চে পরিবারপ্রতি ব্যয় যেখানে ১৫ হাজার ৪০৩ টাকা ছিল, সেখানে আগস্টে তা কমে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১১৯ টাকা। ফলে ব্যয় কমেছে মাত্র দশমিক ১৪ শতাংশ। আয় কমার কারণে পরিবারগুলো তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনা করতে নানা ধরনের উৎসকে ব্যবহার করেছে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে পরিসংখ্যান তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এসআইডি) সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী, বিবিএসের মহাপরিচালক মো. তাজুল ইসলাম, গবেষণাটির সমন্বয়ক এবং বিবিএসের সেন্সাস উইংয়ের উপপরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

বিষয়ে এসআইডি সচিব মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, আর্থিক সংকট মোকাবেলায় একটি পরিবার নানামুখী উৎসকে একাধিকবার ব্যবহার করেছে। সরকারি বেসরকারি সুবিধার বাইরে ৪৬ শতাংশ পরিবার তাদের সঞ্চয় ভেঙেছে। এছাড়া আত্মীয়-স্বজনের সাহায্য নিয়েছে ৪৩ দশমিক ১১ শতাংশ পরিবার। জমি বা স্থায়ী সম্পদ বিক্রি বা বন্ধক রেখেছে ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ পরিবার। এছাড়া সরকারি ত্রাণ বা অনুদান নিয়েছে ২১ দশমিক ৩৩ শতাংশ পরিবার, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির সুবিধা পেয়েছে দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং বেসরকারি ঋণ গ্রহণ করেছে ১৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ পরিবার।

নমুনায়নের বিষয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দৈবচয়নের মাধ্যমে মোট হাজার ৪০টি মোবাইল ফোন নম্বর নির্বাচন করে ৯৮৯ জনের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণফেনের ৯৫০টি নম্বর থেকে ৫২৩ জনের, রবি থেকে ৬০৫ জনের মধ্যে ৩০৮ জনের, বাংলালিংকের ৪৩৭ জনের মধ্যে ১৩৭ জন এবং টেলিটকের ৪৮টি নম্ব্বরের মধ্যে ২১ জনের সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন