ডোনাল্ড ট্রাম্প, জাইর বোলসোনারো কিংবা বরিস জনসন কভিড-১৯কে পাত্তা দেননি। কিন্তু ভাইরাস তাদের অবজ্ঞা করেনি। যথানিয়মে করোনাভাইরাস এ ক্ষমতাধর বিশ্বনেতাদের আক্রান্ত করেছে। বাদ যাননি যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও।
জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন জানিয়েছে, মৃত্যুর হার বিবেচনায় করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তিনটি হচ্ছে ব্রাজিল, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। দেশগুলোতে প্রতি এক লাখ নাগরিকে করোনায় মৃতের সংখ্যা ব্রাজিলে ৬৯ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ৬৩ জনের বেশি। এ তিনটি দেশেরই সরকারপ্রধানরা শুরুতে করোনাভাইরাসকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিলেন এবং প্রত্যেকেই আক্রান্ত হয়েছেন।
এই নেতাদের ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটা ছিল অনেকটা নিষ্ঠুর কৌতুকের মতো, করোনায় মানুষের মৃত্যু, তাদের শোক, ক্ষতি—কোনো কিছুকেই তারা আমলে নিচ্ছিলেন না। তাদের কাছে করোনা নিছকই মামুলি এক রোগ। অথচ এ মহামারীতে এ যাবৎ ১০ লাখের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। অর্থনৈতিক ক্ষতি ইঙ্গিত দিচ্ছে অন্ধকার ভবিষ্যতের। এসব দেখেও যেন না দেখার ভান করেছিলেন ট্রাম্প, জনসন কিংবা বোলসোনারো। খুঁজলে এ তালিকায় আরো কয়েকজন বিশ্বনেতার নাম নিশ্চয় যোগ করা যাবে।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ফ্রাঁসোয়া হেইবোর বলেছেন, ‘বিষয়টা বারবার বলা দরকার। নেতৃত্ব একটা বড় পরিবর্তন আনতে পারে। এমনকি ফেডারেল রাষ্ট্রেও, যেখানে আঞ্চলিক পর্যায়ে অনেক ক্ষমতা সংরক্ষিত থাকে।’
বর্তমানে লন্ডনে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা ফ্রাঁসোয়া হেইবোর আরো বলেন, ‘নেতৃত্বের বিবেচনাক্ষমতা ভালো না হলে যেমনটা দেখা গেল যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলে, ফলাফল হাতে হাতে পাওয়া যায়।’
মহামারীর শুরুতে ট্রাম্প বলেছিলেন এপ্রিলে করোনা হাওয়া হয়ে যাবে। এরপর অনেকদিন তিনি ছিলেন মাস্ক ব্যবহারের বিরুদ্ধে, মাস্ক ব্যবহারে নাগরিকদের আহ্বান জানানো তো দূর কি বাত! নভেম্বরের ৩ তারিখ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখ্য ইস্যু হয়ে উঠতে যাচ্ছে করোনা মহমারী। এখন ট্রাম্পের আক্রান্ত হওয়া নির্বাচনে তার জন্য কেমন ফল বয়ে আনবে তা সময়ই বলতে পারে।
ট্রাম্পের মতো আরেক পপুলিস্ট ঘরানার নেতা ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। সংক্রমিত একটি বস্তিতে তিনি মাস্ক ছাড়াই পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পর তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। পৌরুষ দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন, তার মতো একজন অ্যাথলেটকে করোনা বড়জোর হালকা ফ্লুর মতো আক্রমণ করতে পারবে। বোলসোনারো সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও শুরুতে করোনাকে পাত্তা দিতে চাননি। বৈশ্বিকভাবে সতর্কতামূলক পরিস্থিতি জারি হলেও তিনি হাত মেলানো অব্যাহত রেখেছিলেন। লকডাউন প্রশ্নে বলেছিলেন, যুক্তরাজ্য হচ্ছে ‘স্বাধীনতার ভূমি’,
তাই তিনি লকডাউনের কথা ভাবছেন না। ২৬ মার্চ জনসন করোনায় আক্রান্ত হন এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
দ্য প্রিন্ট