শেবাচিম হাসপাতাল

বিদ্যুৎবিভ্রাটে ব্যাহত অস্ত্রোপচার, ভোগান্তিতে রোগী

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বরিশাল

বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) বিদ্যুৎবিভ্রাট দেখা দিয়েছে। গতকাল সকাল থেকে কয়েক দফায় বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালের সহস্রাধিক রোগী। বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা অনেকাংশে বন্ধ। ব্যাহত হয় অস্ত্রোপচারও। দুপুর পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী চিকিৎসাসেবা অব্যাহত রাখতে জেনারেটর চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

শেবাচিম হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নিতে গতকাল দুপুর ১২টায় স্বজন নিয়ে যান মো. মহিউদ্দিন নামে এক কলেজশিক্ষক।

তিনি বলেন, সকাল থেকে বিদ্যুৎবিভ্রাটে বহির্বিভাগে চিকিৎসকরা রোগী দেখা বন্ধ রেখেছেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও অনেকাংশে বন্ধ। ফলে শত শত রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন।

একই চিত্র দেখা গেছে হাসপাতালের আন্তঃবিভাগের অধিকাংশ ওয়ার্ডে। গাইনি ওয়ার্ডের একজন রোগীর স্বজন বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় পানি সরবরাহও বন্ধ। বাথরুমের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে। রোগীকে বাথরুমে নিয়ে যেতে হলে বাইরে থেকে পানি কিনে আনতে হচ্ছে।

প্যাথলজি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়া নিয়ে জটিলতা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন অনেকে। অন্যদিকে বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে গতকাল ব্যাহত হয় অস্ত্রোপচার কার্যক্রম। তাই যেসব রোগীর গতকাল অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল তাদের আর করা হয়নি। এজন্য নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে। গতকাল অ্যাপেনডিকস অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল মুসলেম উদ্দিনের (৪৫) কিন্তু বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে তার অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি। পরে অস্ত্রোপচারের জন্য আজকের দিন ধার্য করা হয়। শুধু মুসলেম উদ্দিনই নন, তার মতো অসংখ্য রোগীর গতকাল অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি।

শেবাচিম হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর এক কর্মচারী বলেন, সকালে অফিসে আসার পর থেকেই বিদ্যুৎ আসে আর যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বন্ধ থাকায় কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে এভাবে না জানিয়ে বিদ্যুৎ বন্ধ রাখা হয় না। কিন্তু গতকাল কেন এমন হলো তা জানা যায়নি।

জানতে চাইলে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বিদ্যুৎ কেবল যায় আর আসে। এতে রোগীর অপারেশনের কাজেও ব্যাঘাত ঘটছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাচ্ছে না। হাসপাতালে প্রায়ই এমনটা হচ্ছে। বিদ্যুৎ বিভাগ কেন হাসপাতাল এলাকায় এমন বিভ্রাট করছে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

ব্যাপারে বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় বিতরণ কেন্দ্র- নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, পাখি পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কিছুক্ষণ বন্ধ ছিল। তবে তা সকাল থেকে নয়। বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গেও আমার কয়েকবার কথা হয়েছে।

তিনি বলেন, রোগীরা বলতেই পারে, এটা আমাদের অভ্যাস। একটু বিদ্যুৎ গেলেই হাউকাউ করি। বিদ্যুৎবিভ্রাটে অপারেশনসহ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, পরিচালককে জেনারেটর চালিয়ে অপারেশন করতে বলেছি।

ব্যাপারে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, শেবাচিম হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এভাবে বিদ্যুৎবিভ্রাট জনসেবা পরিপন্থী। এটি এক ধরনের ষড়যন্ত্র। বিদ্যুৎ না থাকলে সেকেন্ডে রোগীর প্রাণ যেতে পারে। কেন এটা হলো তা খতিয়ে দেখার জন্য তিনি প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন