যমুনার ভাঙনরোধ ও পানিপ্রবাহ সচল

নকশা প্রণয়নের তিন বছরেও শুরু হয়নি খননকাজ, বাড়ছে ব্যয়

অশোক ব্যানার্জী সিরাজগঞ্জ

যমুনা নদীর ভাঙনরোধ পানিপ্রবাহ সচল রাখার লক্ষ্যে ২০১৭ সালে ৫৩৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নদীর মাঝ বরাবর ক্ষীণকায় পানির প্রবাহকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল করার লক্ষ্যে নেয়া প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশাও ওই সময় প্রণয়ন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গঠিত টাস্কফোর্স। কিন্তু নানা জটিলতায় দীর্ঘ তিন বছরেও শুরু করা যায়নি যমুনার নদীর খননকাজ। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ায় নদীর গতি-প্রকৃতিও পরিবর্তন হয়েছে। তাই আগের নকশা অনুযায়ী খননকাজ চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য নতুন করে নকশা প্রণয়ন করে কাজ শুরু করতে হবে। এজন্য সময়ের পাশাপাশি ব্যয়ও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, যমুনা নদী ড্রেজিং প্রকল্পের জন্য দুটি প্যাকেজে ব্যয় ধরা হয় ৫৩৫ কোটি টাকা। চলতি বছরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। প্রথম প্যাকেজে টাঙ্গাইল জেলার কাউলিবাড়ী হতে শাখারিয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার নদীর প্রতিরক্ষা (চ্যানেল ঠিক রাখার জন্য নদীর উভয় পার রক্ষাবাঁধ) কাজ এরই মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। তবে প্যাকেজের আওতাধীন দশমিক কিলোমিটার ড্রেজিংয়ের কাজ এখনো শুরু হয়নি। দ্বিতীয় প্যাকেজে দশমিক ৮৫ কিলোমিটার প্রতিরক্ষা কাজের মধ্যে দশমিক কিলোমিটার সম্পন্ন হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে যমুনা নদীর পানিপ্রবাহ সচল হওয়ার পাশাপাশি ভাঙনরোধ হবে। এতে উভয় তীরের সম্পদ রক্ষা পাবে। কিন্তু সময়ক্ষেপণ হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।

পাউবো সূত্রটি জানায়, টেন্ডার প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে গত বছর খনন (ড্রেজিং) করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছর এখনো শুরু হয়নি টাস্কফোর্স কর্তৃক যৌথ প্রি-ওয়ার্ক। নকশা প্রণয়নের সময় নদী যে অবস্থায় ছিল, বর্তমানে নদী সে অবস্থায় নেই। পলি পড়ে ভরাট হওয়া জায়গার পরিমাণ বেড়েছে। এতে টেন্ডার অনুযায়ী যে পরিমাণ মাটি কাটার কথা, তার চেয়ে বেশি খনন করতে হতে পারে। আর এমনটি হলে ডিপিপি পুনর্মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। ফলে বৃদ্ধি পাবে প্রকল্প ব্যয়।

এদিকে প্রকল্পের ঠিকাদাররা ড্রেজিং করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। টেন্ডার অনুযায়ী আটটি প্যাকেজে দশমিক ১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করতে হবে। গত বছর প্রকল্পের সব টেন্ডার একত্রে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি। ফলে টাস্কফোর্স থেকে বলা হয়েছিল, পৃথকভাবে কাজ না করে একত্রে শুরু করার জন্য। সে মোতাবেক গত বছর নদী ড্রেজিং করা হয়নি। চলতি বছর একত্রে শুরু করা যাচ্ছে না যৌথ প্রি-ওয়ার্ক না হওয়ার কারণে। এছাড়া টাস্কফোর্স কর্তৃক যৌথ প্রি-ওয়ার্ক সম্পন্ন হলে দশমিক ১২ কিলোমিটার নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হবে। ড্রেজিংয়ের কাজের শুরু হবে জামালপুর জেলার পিংনা থেকে এবং শেষ হবে বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রায় ১০ কিলোমিটার উজানে টাঙ্গাইলের অর্জুনা নামক স্থানে এসে।

ব্যাপারে পাউবো মহাপরিচালক প্রকৌশলী এএম আমিনুল হক বণিক বার্তাকে বলেন, যমুনা নদীর খননকাজ কোনোভাবেই বন্ধ রাখা যাবে না। ব্যাপারে স্থানীয় পাউবোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন নদী-খাল ড্রেজিং নিয়ে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ নেই। যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো কাজ হচ্ছে। নদ-নদী খননের মাধ্যমে মানুষের সম্পদ রক্ষা, নৌপথ সচল করা, কৃষিকাজে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং নদীতে সারা বছর পানি ধরে রাখতে পাউবোর প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনাও রয়েছে। আমরা যমুনা নদীর খননকাজ দ্রুত শুরু করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন করতে চাই।

পাউবোর টাস্কফোর্স প্রধান (এডিজি) কাজী তোফায়েল হোসেন বলেন, যৌথ প্রি-ওয়ার্কের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে সার্ভের কাজ শুরু হবে। ইকো সাউন্ডের মাধ্যমে এই সার্ভে সম্পন্ন করা হবে। তিনি আরো বলেন, গত বছর টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা বিলম্ব হওয়ায় আমরা খননকাজ বন্ধ রেখেছিলাম। যেন চলতি বছর সবাই একত্রে কাজ করতে পারেন। তিন বছর আগে প্রকল্পের ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে। ওই সময় নদীর যে অবস্থা ছিল, এখন সে অবস্থায় রয়েছে কিনা এটাও দেখা হবে। যদি পলির পরিমাণ বাড়ে, তাহলে মাটি খননের পরিমাণও বাড়বে। আর এমনটি হলে প্রকল্প প্রস্তাবনা আবারো মূল্যায়ন করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে সবকিছু নিশ্চিত হতে পারব আমরা সার্ভে সম্পন্ন হওয়ার পর।

ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সহসাই যমুনা নদী ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হওয়া প্রয়োজন। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদাররা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুত কাজ শুরু হবে। যথাসময়ে খনন কাজ শুরু করা না গেলে চলতি বছর কাজ সম্পন্ন করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন