নিয়ান্ডারথাল জিন মারাত্মক কভিডের ঝুঁকি বাড়ায়

বণিক বার্তা ডেস্ক

প্রস্তর যুগে আধুনিক মানুষের পূর্বসূরি নিয়ান্ডারথালদের মধ্যে হওয়া সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে এতদিন খুব বেশি মাথা না ঘামালেও চলত। তবে গবেষকরা বলছেন, সেই প্রাচীন মিলন আজ বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর এক মারাত্মক ভিত্তি স্থাপন করেছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, নিয়ান্ডারথালদের থেকে আধুনিক মানুষে স্থানান্তরিত হওয়া একটি জিন কভিড-১৯-এর ঝুঁকিকে তিন গুণ বৃদ্ধি করেছে।

প্রায় ৫০ হাজার বছর আগে হওয়া সম্পর্কের ফলে আজ প্রায় ১৬ শতাংশ ইউরোপীয় এবং অর্ধেক দক্ষিণ এশীয় জিন বহন করছে। সুইডেন জার্মানিতে বিজ্ঞানীরা কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে খুব অসুস্থ রোগীর ডিএনএর সঙ্গে নিয়ান্ডারথাল তাদের রহস্যময় সিস্টার গ্রুপ ডেনিসোভানদের ডিএনএর তুলনা করার পরই ঝুঁকির বিষয়টি উঠে আসে। ক্রোয়েশিয়ার নিয়ান্ডারথাল থেকে সংগ্রহ করা একটি ডিএনএর সঙ্গে কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে তোলা ডিএনএ কাছাকাছি মিলে গেছে।

স্টকহোম ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক হুগো জেবার্গ গার্ডিয়ানকে বলেন, আমি যখন দেখলাম যে ডিএনএটি নিয়ান্ডারথাল জিনোমের মতো, তখন আমার প্রায় চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার অবস্থা।

জেবার্গ তার সহলেখক জার্মানির লাইপজিগের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট অব ইভল্যুশনারি অনথ্রোপলজির পরিচালক স্যান্তে পাবো সন্দেহ করছেন, নিয়ান্ডারথাল জিনগুলো আধুনিক মানুষের মধ্যে বিদ্যমান আছে। জিনগুলো একসময় উপকারী ছিল এবং সম্ভবত অন্যান্য সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। নতুন সংক্রমণের মুখোমুখি হয়ে এখন তাদের খারাপ দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।

এটা স্পষ্ট নয় যে কীভাবে এটা কভিড-১৯-এর জন্য আরো খারাপ হতে পারে। তবে একটি জিন শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থায় যুক্ত এবং আরেকটি জিন ভাইরাস মানুষের কোষে আক্রমণ করার জন্য যে প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করে, তার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।

জেবার্গ বলেন, কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে কোন জিনটি মূল খেলোয়াড় হিসেবে কাজ করে বা যদি বেশ কয়েকটি মূল খেলোয়াড় থাকে, আমরা সেটা নির্ধারণের চেষ্টা করছি। তবে সত্যই উত্তরটি হলো কভিড-১৯-এর খারাপ পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে, তা আমরা জানি না।

নেচারে প্রকাশিত সমীক্ষা অনুযায়ী, ক্রোমোজোম থ্রি জিনের ক্লাস্টারটি মূলত বাংলাদেশে পাওয়া যায়। দেশটির ৬৩ শতাংশ মানুষ এই ডিএনএ সিকোয়েন্সের অন্তত একটি অনুলিপি বহন করে।

স্যান্তে পাবো বলেন, অঞ্চলের জিনগুলো পুরনো অনেক সংক্রামক রোগ থেকে নিয়ান্ডারথালদের রক্ষা করেছে। সেসব রোগ এখন আর নেই। তবে এখন আমরা যখন নভেল করোনাভাইরাসের মুখোমুখি হয়েছি, তখন নিয়ান্ডারথাল জিনগুলোর করুণ পরিণতি দেখা যাচ্ছে।

২০১০ সালে নিয়ান্ডারথাল জিনোমকে প্রথম বিশ্লেষণকারী আন্তর্জাতিক দলের নেতৃত্ব দেয়া গবেষক বলেন, আমার অনুমান অনুযায়ী নিয়ান্ডারথালদের জিনগত অবদানের কারণে বর্তমান মহামারীতে প্রায় ১০ লাখ মানুষ অতিরিক্ত মারা গেছে। কভিড-১৯- ঝুঁকিপূর্ণ জিন ছাড়াও নিয়ন্ডারথালরা আরো কিছু জিনকেও আধুনিক মানুষকে দান করেছে। কোনো কোনো জিন ব্যথার প্রতি সংবেদনশীলতা বাড়িয়ে তোলে, কিছু আবার গর্ভপাতের ঝুঁকি হ্রাস করে। এটা দুদিকে ধারালো তলোয়ারের মতো; কিছু উপকারী কিছু ক্ষতিকর।

তবে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের অধ্যাপক মার্ক মাসলিন সতর্ক করেছেন, কাজটি মহামারীর কারণ প্রভাবকে অতিরিক্ত সরলীকরণ করে তুলেছে। কভিড-১৯ একটি জটিল রোগ। এর তীব্রতা বয়স, লিঙ্গ, নৃগোষ্ঠী, স্থূলত্ব, স্বাস্থ্য, ভাইরাল লোডসহ অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার কারণে এটা স্পষ্ট যে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যাদের অনেকেরই কোনো নিয়ান্ডারথাল জিন নেই। এজন্য আমাদের অবশ্যই কভিড-১৯-এর কারণ প্রভাবকে সরলীকরণ করা এড়াতে হবে।

দ্য গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন