স্বাভাবিক জীবনযাত্রার এক মাস

ঢাকা বিভাগে মৃত্যুহার বেড়েছে ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে ওঠার পর সারা দেশে গত এক মাসে সংক্রমণ শনাক্তের হার কমেছে। যদিও মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে আগের গতিতেই। সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যায় একটু নিম্নগতি দেখা দিলেও মৃত্যুহার কেন্দ্রীভূত হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনবহুল বিভাগ ঢাকায়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে মোট মৃতের সংখ্যায় জনবহুল ঢাকা বিভাগের অংশ গত মাসে আগস্টের তুলনায় প্রায় শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে।

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত স্থবিরতা কাটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে ওঠে কোরবানির ঈদের পর। কর্মচঞ্চল হয়ে ওঠে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। জনসাধারণের ভিড় যানজট ফিরে আসে সড়কগুলোয়। ওই সময়ের পর সারা দেশে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার কমে এসেছে ঠিকই। যদিও মৃত্যুহারে নিয়ন্ত্রণ আনা যায়নি এখনো।

পরিসংখ্যান বলছে, আগস্টে সারা দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে হাজার ১৬০ জনের। সময় মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা ছিল ৫৮১ জন। অর্থাৎ আগস্টে সারা দেশে করোনায় মৃত ব্যক্তিদের ৫০ দশমিক শূন্য শতাংশ ছিল ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। অন্যদিকে গত মাসে দেশে মৃত্যু হয়েছে ৯৭০ জন করোনা রোগীর। তাদের মধ্যে ৫৭২ জনই ঢাকা বিভাগের। অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে সারা দেশে মোট মৃতের সংখ্যায় ঢাকা বিভাগের অংশ ছিল ৫৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। সে হিসাবে গত এক মাসে দেশে মৃতের সংখ্যায় ঢাকা বিভাগের বাসিন্দার হার বেড়েছে দশমিক ৮৮ শতাংশীয় পয়েন্ট।

অন্যদিকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে কভিড-১৯- আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাজার ২৫১। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে হাজার ৬৩১ জনের। অর্থাৎ সারা দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর ৫০ দশমিক ১০ শতাংশই হয়েছে ঢাকা বিভাগে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল করার পাশাপাশি জনজীবন স্বাভাবিক করার স্বার্থে সবকিছু খুলে দেয়া হলেও স্বাস্থ্যবিধি সামাজিক দূরত্বের যে কথা সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, সেটা এখন আর কেউ মানছে না। ঢাকা বিভাগের, বিশেষ করে রাজধানীর পরিবেশ এখন বলতে গেলে আগের অবস্থায় চলে গিয়েছে। মানুষের মনে এখন আর কোনো ভয় কাজ করছে না। তাছাড়া মাস্ক পরার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের মধ্যে আগে যে এক ধরনের অনীহা দেখা দিয়েছিল, সেটি এখন আরো প্রকট হয়ে উঠেছে।

বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক . সৈয়দ আব্দুল হামিদ বণিক বার্তাকে বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনতার অভাব সব সময়ই ছিল। এত বড় একটা মহামারীর পরও সেটার খুব একটা উন্নতি হয়েছে বলা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি এখন আর না ভেবে বরং আমরা কীভাবে একটি কার্যকর ভ্যাকসিন দ্রুততম সময়ের মধ্যে পেতে পারি, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ--মাহবুবের অভিমত, এখন স্বাস্থ্যবিধি প্রায় অধিকাংশই মানে না। রাষ্ট্রের একার পক্ষে আসলে সবকিছু করা সম্ভবও না। আগে তো জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। এটা মোবাইল কোর্ট চালিয়ে বাধ্য করার মতো বিষয়ও নয়। স্বাস্থ্যসচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। বোধ সবার মধ্যে তৈরি করতে হবে। সরকারের সঙ্গে এনজিও অন্যান্য বেসরকারি সংস্থা মিলে কাজ করে যেতে হবে। থামলে হবে না। সামনে কী হবে সেটা নিয়ে বলা যায় না। তবে স্বাভাবিক জীবনেও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ আমাদের অন্যান্য রোগবালাই থেকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে। এটা ভেবে হলেও আমাদের স্বাস্থ্যসচেতন হতে হবে।

দেশে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরো ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিয়ে দেশে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল হাজার ২৫১। সময় নতুন করে আরো হাজার ৪৩৬ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল লাখ ৬৩ হাজার ৪৭৯। গত ২৪ ঘণ্টায় কভিড আক্রান্ত শনাক্তের হার ছিল ১০ দশমিক ৭১ শতাংশ। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন