পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প

২৫ বছরে অগ্রগতি ৬৭ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৯৯৫ সালে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কাজ শুরু করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ২৫ বছরে প্রকল্পটির অগ্রগতি হয়েছে ৬৭ শতাংশ। এখনো শেষ হয়নি ভূমি উন্নয়নের কাজ। প্রকল্পের ২৫ হাজার প্লটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৯ হাজার ৫০০টি প্লট বুঝিয়ে দিতে পেরেছে রাজউক। যদিও নিশ্চিত হয়নি কোনো নাগরিক সুবিধা।

নানা দীর্ঘসূত্রতার ফলে একাধিকবার সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সর্বশেষ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০২১ সালের জুন। তবে যে গতিতে কাজ এগোচ্ছে তাতে প্রকল্পের মেয়াদ আবারো বাড়ানো হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একাধিকবার মেয়াদ বাড়ানোর ফলে প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। শুরুতে পূর্বাচল নতুন শহর (ইউসুফগঞ্জ) প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় হাজার ৩১১ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় হাজার ৭৮২ কোটি টাকা। বাড়তি ব্যয়ের পুরোটাই বহন করতে হচ্ছে প্লটগ্রহীতাদের।

প্রকল্পের আওতায় ২৫ হাজার ১৬টি আবাসিক প্লটের পাশাপাশি ৬০ হাজার আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। পরিবেশবান্ধব শহরে সবুজ চত্বর, বাগান, বনাঞ্চলসহ সব সুযোগ-সুবিধা থাকবে। প্রকল্পের অনুমোদিত সংশোধিত ডিপিপিতে সেতু নির্মাণ খাতে মোট ৬৫টি সেতুর জন্য ৫৫ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি সেতুর কাজ শেষ, চলমান রয়েছে ২৪টি সেতুর কাজ। পাঁচটি সেতুর মধ্যে দুটি বাইপাস রোডে অবস্থিত হওয়ায় তিনটি প্রকল্পের সীমানাসংলগ্ন হওয়ায় নির্মাণের প্রয়োজন নেই বলে বাদ দেয়া হয়েছে।

প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের কাজ ৯৫ ভাগ শেষ হয়েছে। তবে এখনো বাকি রয়েছে পূর্বাচল সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ৩২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ সড়ক নির্মাণ, সারফেস ড্রেন ক্রস ড্রেন, সেন্ট্রাল আইল্যান্ড নির্মাণ নদীর পাড় রক্ষার কাজ। চলমান রয়েছে ৪৭৭ দশমিক ২০ একর জমি নিয়ে ৪৩ কিলোমিটার লেক নির্মাণের কাজ।

১৯৯৫ সালে পূর্বাচল উপশহর প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও প্রকল্পের কাগজপত্র ঠিক করতে লেগেছে সাত বছর। প্রাথমিকভাবে প্রকল্প কাজ শেষ করার কথা ছিল ২০০৫ সালে। তবে জমি অধিগ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে প্রকল্পে জটিলতা দেখা দেয়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ অংশের জমি অধিগ্রহণই শেষ হয় ২০০৩ সালে। আর গাজীপুর অংশের জমি অধিগ্রহণ শেষ হয় ২০০৯ সালে।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ গাজীপুরের কালীগঞ্জ এলাকার মোট হাজার ১৫০ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। এই পুরো জমিই অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। জমির মালিকদের অর্থও পরিশোধ করা হয়েছে। আদিবাসী ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে যাদের সর্বনিম্ন ১০ কাঠা জমি প্রকল্প এলাকার মধ্যে পড়েছে, তাদের পর্যায়ক্রমে প্লট বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।

ভূমি ব্যবহারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, পূর্বাচল নতুন শহরে ৩৯ দশমিক ৮০ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে আবাসন খাতে। দশমিক ৯০ শতাংশ প্লট ব্যবহূত হবে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে। দশমিক ৯০ শতাংশ জায়গা বরাদ্দ রয়েছে প্রসাশন-সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে। শতাংশ এলাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং দশমিক ৩০ শতাংশ জায়গায় গবেষণা প্রকল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেয়া হবে। সড়ক যোগাযোগের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২৫ দশমিক ৯০ শতাংশ জায়গা। বাহ্যিক সামাজিক অবকাঠামোর জন্য দশমিক ১০ শতাংশ এলাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দশমিক ৬০ শতাংশ জায়গায় হবে লেক এবং বন, বাস্তু উদ্যান সবুজ নগরায়ণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দশমিক ৯০ শতাংশ জায়গা। খেলাধুলা সুবিধার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দশমিক ৮০ শতাংশ জায়গা।

প্রাথমিকভাবে প্লট তৈরি না করেই নকশা অনুযায়ী ২০০৪, ২০০৬ ২০১০ সালে লটারির মাধ্যমে তিন দফা প্রায় ১৩ হাজার প্লট বরাদ্দ দেয় রাজউক। প্লট তৈরি করে ২০১১ সালে চারটি সেক্টরে ছয় হাজার প্লট গ্রাহকদের কাছে হস্তান্তর করে রাজউক। লটারির পর এলাকাবাসী প্রকল্পের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করে। রিট নিষ্পত্তি হলে আবারো রিট করে এলাকাবাসী। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোও রাজউকের ভূমি উন্নয়নের বিরুদ্ধে রিট দায়ের করে। তবে উচ্চ আদালতে সব মামলায়ই রাজউকের পক্ষে রায় যায়।

প্রকল্পটির বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) সাঈদ নূর বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্প এলাকায় রাজউকের কাজ কখনই বন্ধ ছিল না। দ্রুততম সময়ে কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন