রিফাত শরীফ হত্যা

স্ত্রীসহ ৬ জনের মৃত্যুদণ্ড

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বরিশাল

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ১০ আসামির মধ্যে ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ৫০ হাজার টাকা  জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি চার আসামিকে খালাস দেয়া হয়। গতকাল বেলা ১টার দিকে বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামান রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজওয়ান আলী খান হূদয় ওরফে টিকটক হূদয় (২২), মোহাম্মদ হাসান (১৯) স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)

আর খালাসপ্রাপ্তরা হলেন মোহাম্মদ মুসা (২২), রাফিউল ইসলাম রাব্বি (২০), মো. সাগর (১৯) কামরুল ইসলাম সাইমুন (২১)

রায় ঘোষণার সময় আদালতে একমাত্র মুসা ছাড়া সব আসামি উপস্থিত ছিলেন। চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ গঠনের ৪৩ কার্যদিবসের মধ্যে রায় ঘোষণা হলো। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ গঠনের পর ৩২ কার্যদিবসের মধ্যে ৭৬ জন সাক্ষী জবানবন্দি আদালতে উপস্থাপন করেন।

সাক্ষীদের জেরা জবানবন্দি, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং যুক্তিতর্ক শেষে প্রায় ২০০ পৃষ্ঠার রায়ের অংশবিশেষ প্রচারকালে আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, হত্যাকাণ্ডটি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পাওয়ায় আলোচিত। আসামিদের প্রত্যেকের বয়স প্রায় ২৩ বছরের কাছাকাছি এবং সবাই যুবক। নিষ্ঠুর মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় যাতে যুবক শ্রেণী জানতে পারে যে অপরাধ করে পার পাওয়া যায় না। সেই কারণে সামাজিক অবস্থান বিবেচনায়  রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজে স্বস্তি ফিরে আসবে। যুবকদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা কমে যাবে।

রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে নিহত রিফাত শরীফের পিতা দুলাল শরীফ বলেন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ভুবন চন্দ্র হাওলাদার বলেন, রায়ের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। অন্যদিকে আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির পিতা দুলাল ফরাজী বলেন, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে সাক্ষী থেকে আসামি করা হয়েছে এবং রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বিঘ্নিত হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করে প্রশাসন।

আদালত সূত্র জানায়, গত বছরের ২৬ জুন রিফাত শরীফ নিহত হওয়ার পর ২৭ জুলাই নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে বরগুনা থানায় ১২ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা আরো পাঁচ-ছয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। এতে নিহতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী রাখা হয়। গত বছর জুলাই ভোরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ০০৭ বন্ড গ্রুপের প্রধান নয়ন বন্ড। সেপ্টেম্বর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দুই ভাগে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। ঘটনায় জড়িত প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন কিশোর ১৪ জনের আলাদা বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের অভিযোগপত্রে মিন্নিকে নং আসামি রাখা হয়।

উল্লেখ্য, শাহ নেওয়াজ রিফাতকে (রিফাত শরীফ) ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে নয়ন বন্ড তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। গুরুতর আহত রিফাত বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওইদিনই মারা যান।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন