কভিড-১৯ যেভাবে ইংরেজি ভাষাকে বদলে দিচ্ছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

এপ্রিলে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির সম্পাদকরা বেশ অস্বাভাবিক একটা কাজ করলেন। এর আগে ২০ বছর ধরে তারা অন্তর্ভুক্তির জন্য নতুন শব্দ অর্থ নির্বাচন করে ঘোষণা দিয়ে ত্রৈমাসিকভাবে আপডেট হাজির করে আসছিলেন।

কিন্তু বসন্তের শেষ দিকে এবং আবার জুলাইয়ে ডিকশনারির সম্পাদকরা বিশেষ আপডেট প্রকাশ করেন। মূলত ইংরেজি ভাষার ওপর কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব নথিভুক্ত করতে কাজটা করা হয়। তাদের কিছু কিছু পর্যবেক্ষণ ছিল রীতিমতো বিস্ময় জাগানিয়া। তাদের দাবি মহামারীটি কেবল একটি মাত্র নতুন শব্দ তৈরি করেছে: কভিড-১৯। সম্পাদকরা উল্লেখ করেছেন করোনাভাইরাস সম্পর্কিত বেশির ভাগ পরিবর্তন পুরনো, অনেক বেশি অস্পষ্ট শব্দ এবং বাক্যাংশ, যা কিনা সাধারণ ব্যবহারে ধরা পড়ে। যেমন রিপ্রডাকশন নাম্বার এবং সোস্যাল ডিস্টেনসিং আগে থেকে বিদ্যমান শব্দভাণ্ডারের ওপর ভিত্তি করে তাদের নতুন শব্দের মিশ্রণও নথিভুক্ত করতে হয়েছে।

রেকর্ডের ডিকশনারি

দি অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি ভাষা এবং এর ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্তৃত পূর্ণাঙ্গ রেকর্ড হতে আগ্রহী। ১৮৮৪ সালে প্রথম সংস্করণ আংশিকভাবে প্রকাশিত হয়। ১৯২৮ সালের আগ পর্যন্ত এটি ছিল অসম্পূর্ণ। পরবর্তী বছরগুলোতে প্রথম সংস্করণের পরিপূরক হিসেবে অতিরিক্ত শব্দের ভলিউম প্রকাশিত হয়। যা কিনা ১৯৮৯ সালে দ্বিতীয় সংস্করণে গিয়ে ফের প্রকাশিত হয়। সংস্করণটিই এখন বেশির ভাগ লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। যা ডিজিটালি সিডি-আরওএমে প্রকাশিত হয় ১৯৯২ সালে।

২০২০ সালের মার্চ মাসে ডিকশনারির অনলাইন ভার্সন চালু করা হয়। সম্পাদকরা প্রথম সংস্করণের অনেক পুরনো সংজ্ঞার সংশোধন করে চলেছেন, অনেক ক্ষেত্রে যা কিনা শত বছরেরও পুরনো। আকারের কারণে তৃতীয় সংস্করণটি ছাপা কাগজে প্রকাশিত হয়নি। সংস্করণ সম্ভবত ২০৩৪ সাল পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রূপ পাবে না।

একই সময়ে সম্পাদকরা ভাষাটির পরিবর্তন এবং বিকাশের নমুনাগুলো নথিভুক্ত করার কাজ চালিয়ে যান। ত্রৈমাসিক আপডেট নতুন শব্দের তালিকা এবং সংশোধন প্রকাশ করে। উদাহরণস্বরূপ সেপ্টেম্বর আপডেট যুক্ত করেছে ক্রাফটিভিস্ট এবং কুকি মনস্টারকে।

কিছু নতুন, কিছু পুরনো

এই বিশেষ এবং করোনাভাইরাস সম্পর্কিত আপডেট আমাদের একটা ধারণা প্রদান করে যে ভাষা কত দ্রুত নজিরবিহীন সামাজিক অর্থনৈতিক ভাঙনের সঙ্গে বদলে যায়। উদহারণস্বরূপ মহামারীর একটি প্রভাব হচ্ছে এটা অতীতের মেডিকেল-সংক্রান্ত অস্পষ্ট শব্দকে প্রতিদিনকার আলাপে এনে ফেলেছে।

চিরায়তভাবে ডিকশনারি সম্পাদকরা বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিগত টার্মকে যুক্ত করেন, যখন সেগুলো নিজেদের পরিসরের বাইরে একটা কিছু গুরুত্ব অর্জন করে। ওষুধের নামের ক্ষেত্রেও এটা হয়ে থাকে। এমন অনেক শব্দ এরই মধ্যে ডিকশনারিতে স্থান পেয়েছে। যেমন উদাহরণস্বরূপ আপনি রিটালিন এবং অক্সিকোনটিনকে ডিকশনারিতে খুঁজে পাবেন। কিন্তু আপনি আরিপিপ্রাজলকে পাবেন না।

করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে আপনি অন্তত দুটি ওষুধের নামকে পাবলিক ডিসকোর্সের অংশ হতে দেখবেন। একটি হচ্ছে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, যা কিনা ম্যালারিয়ার ওষুধ হলেও কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রেও তার কার্যকারিতা দেখা গেছে বলে হাইপ উঠেছিল। এটি অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে যুক্ত হয়েছে জুলাই মাসে। যদিও ওষুধের নামটি সামনে আসে ১৯৫১ সালে।

আরেকটি নতুনভাবে বিখ্যাত হওয়া ওষুধ হচ্ছে ডেক্সামিথাসোন, একটি কোর্টিকোস্টেরয়েড যা কিনা কভিড-১৯-এর মৃত্যুহারকে প্রশমিত করে। এটি প্রথম সামনে এসেছিল ১৯৫৮ সালে।

আপডেটে নতুন উদ্ধৃতিও যুক্ত করা হয়েছে যেমন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন, যেটি দেখা গিয়েছিল ১৯৫৯ সালে এবং আরেকটি হচ্ছে কমিউনিটি স্প্রেড, যা প্রথম ছাপা অক্ষরে প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৩ সালে।

কোয়ারেন্টিনের ভাষা

সামাজিক আইসোলেশন সম্পর্কিত টার্ম কভিড-১৯ মহামারীর অনেক আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে এসে সেগুলো অনেক বেশি সাধারণ রূপ পেয়েছে। সেলফ আইসোলেট, সেলফ আইসোলেটেড এবং শেল্টারিং ইন প্লেস শব্দগুলো বর্তমান ব্যবহারের ফলে নতুনভাবে উদ্ধৃত হয়েছে।

কোনো কোনো টার্মের অর্থের রূপান্তর ঘটেছে। মূলত শেল্টারিং ইন প্লেস বলতে বোঝায় নির্দিষ্ট কোনো ঘটনার সময় সুরক্ষা খোঁজাকে। যেমন টর্নেডো কিংবা সশস্ত্র হামলার সময় আশ্রয় নেয়া। যা এখন ব্যবহূত হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক আইসোলেশনকে বোঝাতে। 

একইভাবে এলবো বাম্প বা কনুই মেলানোর অঙ্গভঙ্গি হাত মেলানোর বিবর্তিত রূপ হিসেবে সামনে এসেছে, ১৯৮১ সালে যা নথিভুক্ত করা হয়। যার বর্তমান রূপ হচ্ছে: সুরক্ষিত উপায়ে অন্য মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়।

কিছু আঞ্চলিক পার্থক্যও কভিড-১৯-এর ভাষার ক্ষেত্রে উদ্ভূত হয়েছে। সেলফ আইসোলেট মূলত অগ্রাধিকার পেয়ে থাকে ব্রিটিশদের ভাষার ব্যবহারে। যেখানে সেলফ কোয়ারেন্টিন অনেক বেশি ব্যবহূত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

রোনা কিংবা দ্য রোনা নামক করোনাভাইরাস সম্পর্কিত গালির দেখা মিলেছে যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু ডিকশনারি সম্পাদকরা এর অন্তর্ভুক্তির নিশ্চয়তার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ ব্যবহার দেখেননি।

পর্যবেক্ষণে যা আছে

কভিড-১৯ মহামারী পুরনো শব্দের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে তার নতুন শব্দের সৃষ্টি করেছে। যার অনেকগুলো এখন সম্পাদকদের পর্যবেক্ষণে আছে। এর মাঝে আছে মাস্কিন শব্দটি, যা কিনা মুখ ঢাকার ফলে সৃষ্ট ব্রণের প্রাদুর্ভাব। আছে জুমবোম্বিং, যা কিনা ভিডিও কনফারেন্সে অপরিচিত লোকজন ঢুকে পড়লে ব্যবহার করা হয়। তালিকায় অন্য একটি শব্দ হচ্ছে কোয়ারান্টিনি

নতুন মিশ্রণে অন্তর্ভুক্ত আছে কভিডিয়ট, এটি সেসব মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় যারা কিনা জনস্বাস্থ্যে প্রস্তাবিত আদেশগুলো মেনে চলে না। ডুমস্ক্রলিং শব্দটি ব্যবহূত হয় যখন মহামারী-সংক্রান্ত ঘটনাগুলো আপনার স্মার্টফোনে দেখার ফলে এক ধরনের উদ্বিগ্নতা তৈরি হয়। আছে জার্মান শব্দ হ্যামস্ট্রেকাউফ কিংবা আতঙ্কিত হয়ে কেনাকাটা করার মতো শব্দও। এসব শব্দ মহামারীর পর সাধারণভাবে ব্যবহূত হতে শুরু করবে।

কভিড-১৯

তাহলে কভিড-১৯-এর ক্ষেত্রে কী হবে? ডিকশনারির সম্পাদকদের মতে, এটি প্রথম দেখা যায় ফেব্রুয়ারির ১১ তারিখ। যখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯ নামক পরিস্থিতি জনিত রিপোর্ট প্রকাশ করে। কিন্তু ইংরেজিতে কভিড বড় হাতের অক্ষরে লেখা হবে নাকি ছোট হাতে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ডিকশনারির সম্পাদকরা শব্দটি নিয়েও আঞ্চলিক পার্থক্য থাকার কথা জানিয়েছেন।  ইংরেজি বড় হাতের অক্ষরে কভিড লেখা প্রচলিত আছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা অস্ট্রেলিয়ায়। বিপরীতে ছোট হাতের অক্ষরে কভিড লেখা হয় যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড দক্ষিণ আফ্রিকায়। যেহেতু অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি সম্পাদিত প্রকাশিত হয় ইংল্যান্ডে, তাই এখানে ব্রিটিশ রীতিই স্বাভাবিকভাবে অগ্রাধিকার পাবে।

দ্য কনভারসেশন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন