তৃতীয় ঝড়ের আশঙ্কায় যুক্তরাষ্ট্র

বণিক বার্তা ডেস্ক

অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা না নিলে তার চেয়ে বিপজ্জনক আর কী হতে পারে? যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত সেই বিপদেই পড়তে যাচ্ছে। এর আগে দুবার নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের সর্বোচ্চ পর্যায় দেখেছে দেশটি। এবার দেখা দিয়েছে তৃতীয় ঝড়ের আশঙ্কা।

মধ্য মার্চ থেকে এপ্রিলের প্রথমার্ধ সময়টায় করোনা সংক্রমণের প্রথম ঝড় দেখা গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। সে সময় সংক্রমণ শনাক্তের দৈনিক সংখ্যা ছিল ৩০ হাজারের বেশি। প্রতি এক লাখ মার্কিন নাগরিকের প্রায় ১০ জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছিল ভাইরাসের উপস্থিতি। মহামারী প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক পরিধান, হাত ধোয়ার মতো সতর্কতামূলক বৈশ্বিক চর্চা অনুসরণে বাধ্য হয়েছিল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যেই সংক্রমণ কিছুটা কমতে আর আবহাওয়া কিছুটা উষ্ণ হতে শুরু করল, তখনই বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্য বিধিনিষেধ শিথিল করল এবং মেমোরিয়াল ডে উপলক্ষে পাবলিক প্লেসগুলো খুলে দিল।

সিদ্ধান্তই কাল হয়ে দাঁড়াল যুক্তরাষ্ট্রের জন্য। সংক্রমণ শনাক্তের হার ফের ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকল। এবার মহামারীর প্রকোপ হলো আরো ভয়াবহ। জুনের শেষ নাগাদ দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা এপ্রিলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অনেক বেড়ে গেল। কিছু অঙ্গরাজ্য বিধিনিষেধ শিথিলের সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হলো। কিন্তু ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে দেখা দিল দ্বিতীয় প্রবাহের সর্বোচ্চ পর্যায়। সময়ে সংক্রমণ শনাক্তের দৈনিক সংখ্যা দাঁড়াল এপ্রিলের দ্বিগুণের বেশি। নতুন কভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৬৭ হাজার ছাড়াল। প্রতি লাখে তা ২০ জনের বেশি।

তবে দুঃসময়ের পর একটি ইতিবাচক খবর জানা গেল। যে গতিতে সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছেছিল, সেখান থেকে পতন হচ্ছে তার চেয়ে দ্রুতগতিতে। কিন্তু মার্কিনরা মনে হয় স্বস্তিতে আর থাকতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে শরৎ শুরু হয়ে গেছে। এরপর আসছে শীতকাল। এদিকে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। লক্ষণও জুনের প্রথমার্ধের অনুরূপ। কারণে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, তৃতীয় দফায় সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছতে পারে করোনা সংক্রমণ।

সাম্প্রতিক অতীতে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণ শনাক্তের দৈনিক সংখ্যা সবচেয়ে কম ছিল গত সেপ্টেম্বর৩৪ হাজার ৩০০ জন। সেখান থেকে সংখ্যা ৪৫ হাজার ৩০০-তে উঠে এসেছে। ২০ দিনের মধ্যেই সংক্রমণ ৩২ শতাংশ বেড়েছে। তাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই বলুন না কেন যে তার দেশ সংক্রমণের শেষ চূড়া অতিক্রম করে এসেছে, পরিসংখ্যানগত ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ কিন্তু তার দাবি সমর্থন করছে না।

ব্লুমবার্গ স্কুল অব হেলথের জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটির পরিচালক ডা. টম ইংলেসবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ৯০ শতাংশ অঞ্চলে এখনো করোনা সেভাবে আঘাত হানেনি। করোনাভাইরাসের ভয়াবহতায় এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি। সুযোগ পেলে আরো দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার সক্ষমতা রয়েছে এর।

আর যুক্তরাষ্ট্রে সেই সুযোগটাই করে দেয়া হচ্ছে। মাস্ক পরিধানের নির্দেশনা নিয়ে রাজনীতি; হোয়াইট হাউজ, সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) নির্দেশনায় সমন্বয়হীনতা এবং কেন্দ্রীয় স্থানীয় প্রশাসনের ভুল নীতির কারণে আরো ভয়াবহ আঘাত হানার অনুকূল পরিবেশ পেয়ে যাচ্ছে করোনাভাইরাস।

কলোরাডো স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন ডা. জন স্যামেট বলেছেন, যদি একক সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করা হতো, তাহলে হয়তো আমাদের অবস্থা এত খারাপ হতো না। এক অঙ্গরাজ্যের মধ্যেই একাধিক কাউন্টি স্বতন্ত্রভাবে ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিছু ভুল তথ্য সিদ্ধান্ত করোনার প্রকোপ বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

টাইম ম্যাগাজিন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন