কয়েক মাসের আইসোলেশনে শরীরে যে প্রতিক্রিয়া হয়

বণিক বার্তা ডেস্ক

করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর থেকেই বলা হচ্ছে, কভিড-১৯ থেকে সুরক্ষায় সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো বাড়িতে থাকা। তবে বাড়িতে বন্দি জীবন বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘদিন বাড়িতে আবদ্ধ থাকা শরীরের পেশি সংকুচিত, হূিপণ্ড ফুসফুসকে দুর্বল করেএমনকি মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপও বাধাগ্রস্ত করে। আইসোলেশনের প্রভাবগুলো মহামারী শেষেও থাকতে পারে।

ধরুন এক সপ্তাহ বাড়িতে থাকাকালীন আপনি কাজ করছেন, খাচ্ছেন ঘুমাচ্ছেন। এতে আপনি স্বস্তি নিরাপদ বোধ করতে পারেন। কিন্তু শরীরের নিষ্ক্রিয়তা ব্যায়ামের ফলে অর্জিত শারীরিক সুস্থতা সুগঠিত রূপটি নষ্ট করে দিতে পারে। পেশি তৈরি করতে কয়েক মাস সময় লাগলেও এটি হারাতে লাগে মাত্র এক সপ্তাহ। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মলিকিউলার এক্সারসাইজ ফিজিওলজির অধ্যাপক কিথ বার বলেন, আপনি যখন পেশি হারাবেন, তখন প্রকৃতপক্ষে আপনি শক্তি হারাচ্ছেন। আমাদের যত শক্তি থাকে দীর্ঘায়ু বজায় রাখার জন্য তা তত কাজে লাগে।

আপনি যদি ব্যায়াম না করেন, তবে আপনি আপনার হার্টরেট বাড়াচ্ছেন না। আপনার হার্ট যদি শক্তভাবে পাম্প না করে তখন এটি দুর্বল হয়ে যায়। নিষ্ক্রিয় থাকলে ফুসফুসেও একই ঘটনা ঘটে। জনস হপকিন্স বেভিউ মেডিকেল সেন্টারের একজন পালমোনোলজিস্ট ডা. প্যানাগিস গ্যালিয়াসাতোস বলেছেন যে তার বেশির ভাগ রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রক্রিয়াটি দুর্বল হয়ে গেছে, কারণ তারা ব্যায়াম করে না। হূিপণ্ড ফুসফুসের ক্রিয়াকলাপের উন্নতির একমাত্র চাবিকাঠি হলো ব্যায়াম। একক কোনো ওষুধ কাজটি করতে পারে না। এখন যেহেতু বাড়ি থেকে বের হওয়া নিরাপদ না, সেহেতু বাড়িতে থেকেই নাচ বা অন্য কোনো উপায়ে ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন তিনি।

বাড়িতে আইসোলেশন থাকার সময় যেহেতু খুব কাছে খাবার থাকে, তাই বেশি খাওয়া হয়। এতে আপনার ইনসুলিনের স্তর বেড়ে যেতে পারে। ইনসুলিন ফ্যাট স্টোরেজ অন্যান্য ফ্যাট অণুগুলোকে চর্বিতে রূপান্তর হতে উৎসাহিত করে। ওজন বৃদ্ধি স্থূলতায় পরিণত হয়ে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। তারপর আপনার শরীর ইনসুলিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ শুরু করতে পারে এবং বিপাকীয় অসুস্থতা বা ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যাগুলো সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

আমাদের সবার বসার নিজস্ব অবস্থান আছে, যা আমরা অবচেতনভাবে অনুসরণ করি। তবে সারাদিন বসে বা শুয়ে থাকা আপনার ভঙ্গিটিকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে এবং আপনার পিঠ, ঘাড়, কাঁধ চোখে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার আপনার আসনটি থেকে উঠে দাঁড়াতে এবং কিছু সময়ের জন্য হাঁটাচলা করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি আপনি মেঝেতে শুয়ে পড়তে পারেন।

সকালে পর্যাপ্ত রোদ আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনি যদি পুরো সপ্তাহ বন্ধ ঘরে বা সকালের রোদ না লাগিয়ে কাটান, তবে আপনার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। আর আপনার ধরনের জীবনধারা আপনার মস্তিষ্কের শক্তিকেও হ্রাস করতে পারে।

সিএনএন

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন