তেল কিংবা কয়লার বাইরে গিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগ দিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় নতুন নতুন উৎস থেকে যেমন বিদ্যুৎ আসছে তেমনি এ খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বহু মানুষের। ২০১৯ সালে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে সারা বিশ্বে ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮ লাখ মানুষ কাজ করেছে সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে, যা মোট বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের তিন ভাগের এক ভাগ। আর এ খাতে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় দেড় লাখ মানুষের।
ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সির (আইরিনা) ‘নবায়নযোগ্য শক্তি ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রায় ৫৮ লাখ সোলার হোম সিস্টেমের সঙ্গে প্রায় ১ লাখ ৩৭ হাজার ৪০০ মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত। যদিও এসব কর্মসংস্থানের বেশিরভাগ সোলার হোম সিস্টেম বিক্রি, বসানো এবং রক্ষণাবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত। এর বাইরে প্রায় ১০ হাজার মানুষ কাজ করছে সোলার মডিউল অ্যাসেম্বলি করার জন্য।
অফগ্রিড নবায়নযোগ্য শক্তি যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছে, তা আইরিনার নতুন এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। যদিও এ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এখনও পাওয়া যায়নি।
আইরিনা বলছে, অফগ্রিড সৌরশক্তির প্রসার শুধু নতুন কর্মসংস্থানই তৈরি করছে না, গ্রামীণ এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। নবায়নযোগ্য শক্তির এই বিকেন্দ্রীকরণ শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন নয় বরং কৃষিকাজ, খাবার সংরক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা এবং স্থানীয় ব্যবসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আইরিনার প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ৩৮ লাখ মানুষ কাজ করছে সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শিল্পে। সৌরশক্তির পরই জৈব জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি- ২৫ লাখ কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এরপরই রয়েছে জলবিদ্যুৎ ও বায়ুবিদ্যুৎ, এই দুই খাতে যথাক্রমে প্রায় ২০ লাখ ও ১২ লাখ মানুষ কাজ করছেন।
নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে কর্মসংস্থান তৈরিতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এশিয়া। গত বছর এ খাতে তৈরি হওয়া কর্মসংস্থানের ৬৫ শতাংশই, অর্থাৎ ৭৫ লাখ এই মহাদেশে। এর মধ্যে চীনে ৪৪ লাখ, ভারতে ৮ লাখ ও জাপানে আড়াই লাখের বেশি মানুষ নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে কাজ করছে। বিশ্বের বাকি দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে ১৩ লাখ, যুক্তরাষ্ট্রে সাড়ে ৭ লাখ, ব্রাজিলে সাড়ে ১১ লাখ ও জার্মানিতে ৩ লাখের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে।
আইরিনার মহাপরিচালক ফ্রান্সেসকো লা ক্যামেরা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেমন নবায়নযোগ্য শক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রবণতা বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এ খাতে নতুন কর্মসংস্থান এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন। যদিও এখনো অল্প কয়েকটি দেশ এ খাতে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
বার্লিনভিত্তিক বিদ্যুৎ ও জ্বালানী বিষয়ক থিংকট্যাংক কেভিন টিউ এ প্রসঙ্গে বলেন, চীনের বিদ্যুৎখাতে এখনো কয়লার ওপর নির্ভরশীল, দেশটির মোট বিদ্যুতের ৫৮ শতাংশ আসে কয়লা থেকে। ২০১৩ সালেও চীনের কয়লাখনি ও বিদ্যুৎ শিল্পে কাজ করতো ৫৩ লাখ মানুষ, ২০২০ সালে তা কমে প্রায় অর্ধেক মাত্র ২৬ লাখে এসে দাঁড়িয়েছে। পক্ষান্তরে ২০১৯ সালে নবায়নযোগ্য শক্তি শিল্পে শুধু চীনেই কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের, যা বিশ্বের মোট কর্মসংস্থানের ৩৮ শতাংশ।
আইরিনা বলছে, জীবাশ্ম জ্বালানী খাতের তুলনায় নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে অনেক বেশি নারী কাজ করছেন। জীবাশ্ম জ্বালানী খাতে বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের প্রায় ২১ শতাংশ নারী। পক্ষান্তরে, নবায়নযোগ্য শক্তিতে কাজ করা মানুষের ৩২ শতাংশ নারী।
সংস্থাটি বলছে, উচ্চভিলাসী প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের মধ্যেই এই খাতে আরও ৫৫ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। আর একই গতিতে চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষের কাজের সুযোগ করে দেবে এই খাত।
প্রসঙ্গত, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার নিয়ে কাজ করা প্রধান আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থা আইরিনা। সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে সংস্থাটির সদরদপ্তর। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৬১টি দেশ আইরিনার সদস্য।