প্রথম বিতর্কে নামছেন ট্রাম্প-বাইডেন ভোটার প্রভাবিত করার সম্ভাবনা ক্ষীণ

বণিক বার্তা ডেস্ক

আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এর আগে বেশ কয়েকবার বিতর্কের মুখোমুখি হবেন দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জো বাইডেন। আজ তাদের প্রথম বিতর্ক আয়োজন হতে যাচ্ছে। বিতর্ক টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হবে বিশ্বজুড়ে, যাতে একে অন্যকে যুক্তিতর্কে কাবু করার চেষ্টা করবেন ট্রাম্প বাইডেন এবং এর মধ্য দিয়ে ভোটারদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তুলে ধরবেন তারা। কিন্তু বিতর্ক নির্বাচনের ওপর আদৌ প্রভাব ফেলে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। খবর এএফপি।

ইতিহাস বলে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের ক্ষেত্রে বিতর্ক আসলে খুব বেশি গুরুত্ববহ নয়। ২০১৬ সালে ট্রাম্প হিলারি ক্লিনটনের মধ্যকার প্রথম টিভি বিতর্ক দেখেছিলেন রেকর্ড কোটি ৪০ লাখ দর্শক। সেবার তিনটি বিতর্কেই জয়লাভ করেছিলেন হিলারি ক্লিনটন, আর অবশেষে নির্বাচনে জয়ী হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন ট্রাম্প।

আবার ২০০৪ সালের নির্বাচনেও জর্জ বুশকে প্রতিটি বিতর্কে হারানোর পরও মূল মঞ্চে হেরে বসেন জন কেরি।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক বব এরিকসন জানালেন, সর্বশেষ ১৯৮৪ সালের নির্বাচনে বিতর্ক ফলাফলের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। তখন প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াল্টার মনডেলের বিপক্ষে বিতর্কে তালগোল পাকিয়ে ফেলেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হন ৭৩ বছর বয়সী রোনাল্ড রিগ্যান। তিনি দুই দফায় ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জন কখ মনে করেন, বিতর্কগুলো গুরুত্বপূর্ণ এটা শুধু ভোটকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রেই নয়, কারণ এর মধ্য দিয়ে আমরা উভয় প্রার্থীকে একসঙ্গে দেখতে পাই, যারা কিনা কংগ্রেসের বাইরে একে অপরের বিপক্ষে বিতর্ক করেন।

মেইন ইউনিভার্সিটির গণমাধ্যম ইতিহাসবিদ মাইকেল সোকোলো জানালেন, টেলিভিশনে প্রথম সম্প্রচার হয় ১৯৬০ সালে রিচার্ড নিক্সন জন এফ কেনেডির বিতর্ক। কিন্তু এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ঐতিহ্যবহুল বিতর্ক অপেক্ষাকৃত কমই তথ্যবহুল ছিল।

সোকোলো বলেন, ১৯৭৬ সালের বিতর্কেও নতুন আইডিয়া নিয়ে আসেন জিমি কার্টার। কিন্তু এখন নতুন নতুন আইডিয়া কমই আসছে। এখন তো এটা শুধুই মঞ্চের এক পারফরম্যান্স এবং এখন উদ্দেশ্যই থাকে অপরকে ছিটকে ফেলা।

খুব কম ভোটারই তাদের মন পরিবর্তন করতে চান এবং বিতর্ক এজন্যই আয়োজন করা হয়, যাতে প্রার্থীরা ভোটারদের মনে দোলা দিয়ে যেতে পারেন। যদিও এটা প্রভাব কমই ফেলে।

আগামীকালের বিতর্কে দর্শকরা বিশেষ করে বাইডেনকে নিয়ে বেশি কৌতূহলী থাকবেন, যিনি নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সতর্কতা হিসেবে প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারণায় কমই বেরিয়েছেন। আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ডেভিড বার্কার বলেন, তারা আসলে তাকে মাঠে-ময়দানে দেখেননি।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মনে করেন, এই বিতর্কের মাধ্যমে জনগণ আসলে দেখার সুযোগ পাবেন যে প্রার্থীকে নিয়ে তারা কতটা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন কিংবা তিনি কাজে কতটা সামর্থ্যবান, তা পরখ করে নেয়া।

৭৭ বছর বয়সী বাইডেন সামনে নিয়ে আসতে পারেন ১৯৭২ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় তার প্রথম স্ত্রী আর তাদের কন্যাকে হারানোর ঘটনা পাশাপাশি ২০১৫ সালে ক্যান্সারের কাছে হার মানা পুত্র বিউকে হারানোর বিষয়। বার্কার বলেন, ভোটারদের সহমর্মিতা আদায় করে নিতে তিনি প্রতিটি সুযোগই হয়তো কাজে লাগাতে চাইবেন। এটা তাকে অনেক সুবিধা করে দিতে পারে। পাশাপাশি এটা দুঃখের যে এমন একটি বিষয় আসলে কার্যকর রাজনৈতিক হাতিয়ার হতে পারে।

খুব সম্ভবত মাস্ক পরে বিতর্কে অংশ নেবেন বাইডেন, এর মধ্য দিয়ে তিনি মহামারীর প্রকটতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে চাইবেন। মহামারী এতটা প্রকট আকার ধারণ করার পেছনে অনেকেই ট্রাম্পকে দায়ী করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন