ভেরাইজনের নজর ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে

বণিক বার্তা ডেস্ক

বিশ্বের অন্যতম ক্রমবর্ধমান টেলিযোগাযোগ বাজার ভারত, যা যুক্তরাষ্ট্রে ধুঁকতে থাকা বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ কনগ্লোমারেট ভেরাইজনকে ঘুরে দাঁড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে ভারতের টেলিযোগাযোগ খাতে প্রবেশের জন্য ভোডাফোনকে সমর্থন দেয়ার কৌশলগত পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। খবর টেলিকম লিড।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দৃঢ় প্রতিযোগিতার কারণে চাপে রয়েছে ভেরাইজন। কনটেন্ট এবং ফাইভজি মোবাইল নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করা সত্ত্বেও ওয়্যারলেস ব্যবসায় খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।

বর্তমানে ভেরাইজনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্বে রয়েছেন হ্যান্স ভেস্টবার্গ। ভেরাইজনে যোগদানের আগে তিনি সুইডিশ টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা এরিকসনে কাজ করেছিলেন।

হ্যান্স ভেস্টবার্গ সাম্প্রতিক এক মন্তব্যে বলেন, ওয়্যারলেস বাজার এবং মিডিয়া ব্যবসা খাতে সম্ভাব্য প্রবৃদ্ধি ভেরাইজনের সিইও এবং তার টিমের সদস্যদের মূল ফোকাস নয়। তারা ভেরাইজনের সামগ্রিক কার্যক্রমে বৈচিত্র্য আনতে জোর দিচ্ছেন। যে কারণে বিভিন্ন দেশে উপস্থিতি বাড়াতে কৌশলগত অংশীদারিত্বে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ভেরাইজনের ওয়্যারলেস সার্ভিস ব্যবসা বিভাগের রাজস্ব দশমিক শতাংশ কমে হাজার ৫৯০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। একই প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির মোট পরিচালন রাজস্ব দশমিক শতাংশ কমে হাজার ৪০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ভোক্তা এবং ব্যবসা সেগমেন্টে প্রতিষ্ঠানটির ওয়্যারলেস সরঞ্জাম বিক্রি কমে যাওয়ায় পরিচালন রাজস্বে এমন পতন দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী টি-মোবাইলের কারণে চাপে রয়েছে ভেরাইজন।

ভারতে প্রবেশে ভোডাফোনকে ভেরাইজনের সমর্থনের খবর চাউর হলেও ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের পক্ষ থেকে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য মেলেনি। ভোডাফোন আইডিয়ার দাবি, তারা বিবেচনা করার মতো ভেরাইজনের কাছ থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাব পায়নি। সাম্প্রতিক একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেরাইজন এবং -কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজন ভারতের টেলিকম খাতে প্রবেশে ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডে ৪০০ কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী।

ভারতে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের অন্যতম অংশীদার ভোডাফোন গ্রুপ। অন্যদিকে ওয়্যারলেস ব্যবসা নিয়ে ১৪ বছর ধরে দৃঢ় পার্টনারশিপে রয়েছে ভোডাফোন গ্রুপ এবং ভেরাইজন।

২০০০ সালে যাত্রা করে ভেরাইজন কমিউনিকেশনস, যা ভেরাইজন এবং ভোডাফোন গ্রুপ পিএলসির একটি জয়েন্ট ভেঞ্চার। ২০১৪ সালে ১৩ হাজার কোটি ডলারে ৪৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির মধ্য দিয়ে ভেরাইজন ওয়্যারলেস থেকে বেরিয়ে এসেছিল ভোডাফোন। ভোডাফোন গ্রুপ পিএলসি ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেডের অন্যতম শেয়ারধারী, যা ব্যবসা জোরদারে ভেরাইজনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।

সম্প্রতি ভারত সরকারের সঙ্গে প্রায় দেড় দশক ধরে চলা একটি বকেয়া কর মামলায় জয় পেয়েছে ভোডাফোন গ্রুপ পিএলসি। ব্রিটিশ টেলিকম প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে বকেয়া কর, সুদ জরিমানা বাবদ ৩৭৯ কোটি ডলার দাবি করেছিল ভারতের আয়কর দপ্তর। গত শুক্রবার ভারত সরকারের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত। একই সঙ্গে এমন কর দাবিকে অন্যায্য বলে মন্তব্য করেছেন হেগের আন্তর্জাতিক আদালত।

ভারত নেদারল্যান্ডসের মধ্যে যে লগ্নিসংক্রান্ত চুক্তি আছে, ভোডাফোনের ওপর কর চাপিয়ে ভারত সরকার তা লঙ্ঘন করেছে বলে রায়ে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক আদালত। যে কারণে ভোডাফোনকে পাঠানো বকেয়ার নোটিস নয়াদিল্লির অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত বলে আদালত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। পাশাপাশি আইনি মামলা লড়ার জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে ভোডাফোনকে ভারত সরকারের ৫৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার পরিশোধ করা উচিত বলেও রায়ে উল্লেখ করেছেন হেগের আদালত।

২০০৭ সালে হাচিসন হামপোয়ার কাছ থেকে মোবাইল যোগাযোগ সেবা বিভাগ অধিগ্রহণ করে ভোডাফোন। হাজার ১০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে হস্তান্তরকে আয় বলে ধরে নিয়ে তার ওপরে কর ধার্য করে ভারতের আয়কর বিভাগ এবং বকেয়া কর সুদ দাবি করে সরকার। এর বিরুদ্ধেই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল ভোডাফোন।

২০১২ সালে কর মামলায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে জয়ী হয় ভোডাফোন। কিন্তু ওই বছর শেষের দিকে আইন সংশোধন করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। সংশোধিত আইনে পুরনো লেনদেনের ওপর কর চাপানোর সুযোগ রাখা হয়। এরপর ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের এপ্রিলে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের দ্বারস্থ হয় ভোডাফোন।

বহুজাতিক টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে রাইটস হস্তান্তর করেছে, অনেক সময়ই একই পন্থায় ব্যবসার স্বত্ব, পরিষেবা বা সম্পত্তি এক দেশের শাখা সংস্থা থেকে অন্য দেশের শাখা সংস্থায় হস্তান্তর করে থাকে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো। একে ট্রান্সফার প্রাইসিং বলা হয়। কিন্তু অনেক সময়ই কর বিভাগ মনে করে যে সংস্থাটি কর ফাঁকি দিচ্ছে। শুধু ভোডাফোন নয়, ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের জেরে ভারতে কর চেপেছে আরো একাধিক সংস্থার ওপর। এর মধ্যে বেশকিছু মামলা আন্তর্জাতিক আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পুরনো লেনদেনের জেরে ভোডাফোনের ওপর কর (রেট্রোস্পেকটিভ ট্যাক্স) চাপায় ভারতে বিনিয়োগের পরিবেশ নিয়ে বিতর্কও শুরু হয়েছিল। ভারতে আচমকা অপ্রত্যাশিতভাবে নীতির পরিবর্তনের প্রভাব ভারতের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের ওপরও পড়েছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন