কেমন হবে নির্বাচন-পরবর্তী মার্কিন জ্বালানি নীতি?

বণিক বার্তা ডেস্ক

আগামী নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এক মাসের কিছু বেশি সময় বাকি থাকতে এখন চলছে তুমুল প্রচারণা। নির্বাচনী প্রচারণায় সবসময় অর্থনৈতিক ইস্যুগুলো সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়। করোনা মহামারীর মাঝে এবারের নির্বাচনে সামাজিক অসাম্য দূর করা মন্দার মুখে থাকা অর্থনীতির গতি ফেরানোর পাশাপাশি পরিবেশ ইস্যুও সামনে এসেছে। স্বাভাবিকভাবে আলোচনা হচ্ছে জ্বালানি খাত নিয়েও। নির্বাচন-পরবর্তী মার্কিন জ্বালানি নীতি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান ফিচ সলিউশনসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন ভোটারদের সামনে এবারের নির্বাচনে সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুটো পছন্দ থেকে একটি বেছে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশেষত জ্বালানি খাতে রিপাবলিকান প্রার্থী বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চিন্তা নীতি বেশ কঠোর ব্যবসাবান্ধব। বিপরীতে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেনের চিন্তা সম্ভাব্য নীতি তুলনামূলক মানবিক পরিবেশবান্ধব।

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে জ্বালানি খাতে ট্রাম্পের নীতি প্রকাশ্যে এসেছে। তিনি কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের নীতি প্রতিশ্রুতি থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন। দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে তিনি পথে আরো অগ্রসর হবেন। ওবামার আমলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি খাত গড়তে বাইডেনের অগ্রগণ্য ভূমিকা ছিল। এবারের নির্বাচনে জয়ী হলে তিনি আগের সেই পথে হাঁটবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটি মনে করছে, পরবর্তী নির্বাচনে জয়ী হলে বাইডেন কার্বন নিঃসরণের হার কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেবেন। এজন্য প্রয়োজনে কয়লা উত্তোলন কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। পর্যায়ক্রমে বন্ধ হতে পারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো। বাইডেনের হাত ধরে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য বিকল্প জ্বালানির উৎপাদন ব্যবহারে বিপ্লব ঘটতে পারে। এক্ষেত্রে ট্রাম্পের নীতি হতে পারে সম্পূর্ণ বিপরীত। তিনি মার্কিন কয়লা খাতের পুনরুত্থানে বিশ্বাসী। ফলে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশটির কয়লা উত্তোলন খাত ফুলেফেঁপে উঠতে পারে। কয়লার রফতানি বাজারে গত চার বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে শক্ত ভিত্তি দেয়ার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প, যা পরবর্তী মেয়াদেও অব্যাহত থাকতে পারে।

বাইডেন ক্ষমতায় এলে খনিজ জ্বালানি উত্তোলন খাতে বিদ্যমান ২১ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স বাড়িয়ে ২৮ শতাংশে উন্নীত করতে আগ্রহী। জ্বালানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের বাইরে মুনাফা করলে বর্তমানে ১০ দশমিক শতাংশ হারে কর দিতে হয়। বাইডেন ক্ষমতায় এলে তা বাড়িয়ে ২১ শতাংশ করতে চান। একই সঙ্গে তিনি উন্মুক্ত জমিতে খনিজ জ্বালানি উত্তোলনের বিরোধী। ট্রাম্প অবশ্য ধরনের কোনো পরিকল্পনার কথা প্রকাশ্যে জানাননি। কাজেই বাইডেনের এমন পরিকল্পনা মার্কিন খনিজ জ্বালানি ব্যবসায়ীদের কতটা সমর্থন পাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যায়। কর বাড়ানোর পরিকল্পনা নির্বাচনের মাঠে উল্টো ট্রাম্পকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।

ওবামার আমল থেকে জ্বালানি তেল প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে প্রভাবশালী অবস্থানে যেতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে পথে দেশটি অনেকটাই এগিয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে ওপেকের ওপর প্রভাব বাড়ালেও জোটটির চুক্তির শর্ত মেনে উত্তোলন সীমিত করেননি ট্রাম্প। গ্যাস রফতানিতে কাতার অস্ট্রেলিয়ার সমকক্ষ হতে চায় ওয়াশিংটন। বাইডেন ক্ষমতায় এলে এসব উচ্চাভিলাষ পূরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। তাই চাইলেও তিনি পরিস্থিতি বদলে দেয়ার কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন কিনা, সেটা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তার ওপর পরিবেশবাদীদের প্রত্যাশা থাকবে। তবে জ্বালানি নীতি নিয়ে তাকে কট্টর রিপাবলিকানদের পাশাপাশি শক্তিশালী ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর চাপ মোকাবেলা করতে হতে পারে।

আমেরিকান এনার্জি অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট থমাস পায়লি বলেন, দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলে ট্রাম্প গত চার বছরের জ্বালানি নীতি এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন। আর বাইডেন ফিরতে চাইবেন ওবামার আমলের নীতিতে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারে পরিবেশ সুরক্ষা। যদিও নভেম্বরের নির্বাচনের আগে এখন পর্যন্ত দুই প্রার্থীর কেউই পরবর্তী চার বছরের জন্য সম্ভাব্য জ্বালানি নীতি নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো ঘোষণা দেননি। এজন্য তাদের ব্যক্তিগত নীতি, বিশ্বাস অতীত কর্মকাণ্ডের আলোকে অনুমান করতে হচ্ছে।

মাইনিংডটকম দ্য ডেনভার পোস্ট অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন