বৈশ্বিক তুলা শিল্পে মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) তথ্য ও পূর্বাভাসকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়। তবে এবার প্রতিষ্ঠানটির দেয়া তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কটন অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (সিএআই)। ভারতীয় এ প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ, ইউএসডিএর ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের পক্ষ থেকে ২০১৯-২০ মৌসুমে ভারতের তুলা শিল্প নিয়ে দেয়া প্রতিবেদনের সংখ্যা বাড়িয়ে বলা হয়েছে। ইউএসডিএর দেয়া উৎপাদন, ব্যবহার, আমদানি ও রফতানি তথ্যের সঙ্গে সিএআইয়ের তথ্যের ব্যবধান সামান্য। সেটা মেনে নেয়া যায়। তবে পণ্যটি মজুদের ক্ষেত্রে দুই প্রতিষ্ঠানের তথ্যে বিস্তর ব্যবধান রয়েছে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে চিঠি লিখে ইউএসডিএকে অবহিত করেছে সিএআই। খবর ব্লুমবার্গ ও বিজনেস লাইন।
ইউএসডিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ মৌসুমের ৩১ জুলাই শেষে ভারতে তুলার মজুদ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ বেলে (প্রতি বেলে ২১৭ দশমিক ৭ কেজি)। অন্যদিকে সিএআইয়ের তথ্য বলছে, একই সময়ে ভারতে তুলা মজুদের পরিমাণ ১ কোটি ১২ লাখ বেল। অর্থাৎ একই সময়ে ভারতে তুলা মজুদের ক্ষেত্রে দুই প্রতিষ্ঠানের দেয়া তথ্যের ব্যবধান ৮০ লাখ বেল।
এ তথ্য নিয়েই মূলত আপত্তি জানিয়েছে সিএআই। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভারতে তুলা মজুদের ক্ষেত্রে প্রকাশিত এ সংখ্যা বাড়িয়ে বলেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে বাজারে তুলার মূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা থাকতে পারে। কেননা ভারত বিশ্বের শীর্ষ তুলা উৎপাদনকারী দেশ। একই সঙ্গে পণ্যটির রফতানিকারকদের বৈশ্বিক শীর্ষ তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয়। কাজেই ভারতে তুলার উৎপাদন, রফতানি ও মজুদের তথ্য আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির মূল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। বিষয়টি নিয়ে চিঠি লিখে ইউএসডিএকে অবহিত করা হয়েছে।
তবে সিএআইয়ের এমন অভিযোগ মানতে নারাজ ইউএসডিএ। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কটন এস্টিমেটস কমিটির চেয়ারম্যান স্টিফেন ম্যাকডোনাল্ড বলেন, যেকোনো পণ্যের তথ্য ও পূর্বাভাসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য থাকে। এটাই স্বাভাবিক। ভারতে তুলা মজুদের ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের তথ্যের ব্যবধান বেশি হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, করোনা মহামারীর কারণে চলা লকডাউনের সময় কৃষকদের কাছে ও মিলে যেসব তুলার মজুদ গড়ে উঠেছে তা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি গণনা করেনি। এ কারণে ইউএসডিএর দেয়া প্রতিবেদনে ভারতে তুলা মজুদের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।
তবে সিএআইয়ের প্রেসিডেন্ট অতুল জ্ঞানেত্র বলেন, লকডাউনের সময় কৃষকদের হাতে কিংবা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোয় তুলার যে মজুদ জমেছে, সেটা বিবেচনায় নিয়েই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বরং ২০১৯-২০ মৌসুমে ভারতে তুলার উৎপাদন, চাহিদা ও আমদানির ক্ষেত্রে ইউএসডিএ আমাদের তুলনায় বাড়িয়ে সংখ্যা প্রকাশ করেছে। শুধু রফতানির ক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটির প্রকাশিত তথ্যের তুলনায় সিএআইয়ের সংখ্যাটি বেশি রয়েছে। এর পেছনে বাজারে তুলনায় মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ অন্য কোনো কারণ রয়েছে কিনা তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ মৌসুমে ভারতে সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৫ লাখ বেল তুলা উৎপাদনের তথ্য দিয়েছে ইউএসডিএ। সিএআই বলছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে ভারতে তুলা উৎপাদনের পরিমাণ ২ কোটি ৭৭ লাখ বেল। পণ্যটি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ইউএসডিএ ও সিএআইয়ের প্রকাশিত তথ্যের ব্যবধান ২৮ লাখ বেল।
একইভাবে ২০১৯-২০ মৌসুমে ভারতে দুই কোটি বেল তুলার চাহিদার তথ্য প্রকাশ করেছে ইউএসডিএ। সিএআইয়ের প্রতিবেদনে এ সংখ্যা ১ কোটি ৯৫ লাখ বেল। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে ভারতে তুলা আমদানির পরিমাণ ২৩ লাখ বেল। সিএআই বলছে, এর পরিমাণ সাকল্যে ১২ লাখ বেল। অন্যদিকে ২০১৯-২০ মৌসুমে ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে তুলা রফতানির পরিমাণ ২৯ লাখ বেল উল্লেখ করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি। এর বিপরীতে সিএআই বলছে, একই মৌসুমে ভারত থেকে তুলা রফতানির পরিমাণ ৩৯ লাখ বেল।
