ব্রিটেনে করপোরেটের ‘ভুয়া পরিচালকরা’ পাচার করছে বিপুল অর্থ

বণিক বার্তা অনলাইন

‘ভুয়া পরিচালকদের’ মাধ্যমে সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে অর্থ পাচারের অনন্য ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে যুক্তরাজ্য। প্রমাণিত সত্য হচ্ছে, দেশটির ‘কোম্পানিজ হাউসের’ দুর্বল বিধিবিধানের অপব্যবহার করে গ্যাংস্টার ও জালিয়াতরা কোম্পানির মুনাফার টাকা পাচার করে আসছে। অবশেষে এই আইন সংশোধনের ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেন সরকার। এর ফলে কোম্পানিগুলো তাদের পরিচালকদের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করতে বাধ্য থাকবে।

আইনটি পাস হলে যুক্তরাজ্যের রেকর্ড সংখ্যক কোম্পানিকে তাদের পরিচালনা পর্ষদে সংস্কার চালাতে হবে। বহুপ্রত্যাশিত ও বিলম্বিত এই সংস্কারটি শেষ পর্যন্ত কোম্পানিগুলোকে তাদের পরিচালকের প্রকৃত পরিচয়ের প্রমাণ দিতে বাধ্য করবে। 

দুর্নীতি ও হোয়াইট-কলার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাউস সিস্টেমের দুর্বলতার সুযোগে যুক্তরাজ্য থেকে প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন পাউন্ড অবৈধ মুনাফা পাচার হয়ে যাচ্ছে।

এই ঘোষণাকে বিভিন্ন পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে সংস্কারটি কবে কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। তাছাড়া এটি করতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আইনি সংস্কারেরও দরকার হবে। আর সেসব আইন পার্লামেন্টে পাস করার প্রয়োজন পড়বে।

ব্রিটেনের কোম্পানিস হাউস কী

‘কোম্পানিজ হাউস’ হলো যুক্তরাজ্যের কার্যরত কোম্পানিগুলো এবং সেগুলোর পরিচালক ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় প্রভাব বিস্তারকারী শেয়ারহোল্ডারদের তথ্য নিবন্ধন। এটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যেখানে সারা বিশ্ব থেকে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোর ব্যাপারে লাখ লাখ মানুষ তথ্য খোঁজেন। কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনার বৈধতা নিশ্চিত করার বিষয়টি এতোটা গুরুত্ব হলেও বর্তমান আইন অনুযায়ী পরিচালকদের প্রকৃত পরিচয়ের প্রমাণ দেয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা হয়নি।

যুগ যুগ ধরে সমালোচকরা বলে আসছেন, পরিচয় গোপনের এই সুযোগটি বিশ্বজুড়ে অপরাধী নেটওয়ার্কগুলোকে দ্রুত ও অদৃশ্য অর্থ পাচারের জন্য যুক্তরাজ্যকে গন্তব্যস্থলে পরিণত করার সুযোগ করে দিয়েছে। সংগঠিত গ্যাংগুলো ‘ভুয়া পরিচালকদের’ দিয়ে প্রথম সারির কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে এবং ধরা পড়ার আগেই তাদের মুনাফার তথ্য অদৃশ্য হয়ে যায়। এসব কোম্পানির পরিচালকদের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারার কারণে এই কর্মকাণ্ড নির্বিঘ্নেই চলতে থাকে।

এবার তাদের লুকানোর জায়গা নেই!

সরকারের নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, কোম্পানিজ হাউসের মাধ্যমে পরিচয় যাচাই না করা পর্যন্ত পরিচালকদের রাখা যাবে না। মন্ত্রীরা বলছেন, এই সাধারণ পরিবর্তনটি ব্যবসার জন্য সহায়ক হবে, মানুষ জানতে পারবে যে তারা কাদের সঙ্গে কাজ করছে এবং এটা জাতীয় অপরাধ এজেন্সিকে সন্দেহভাজনদের খুঁজে বের করতে সহায়তা করবে। 

কর্পোরেট দায়বদ্ধতা বিষয়ক মন্ত্রী লর্ড ক্যালানান বলেছেন, বাধ্যতামূলক পরিচয় যাচাইয়ের অর্থ হলো অপরাধীদের আড়াল করার কোনো জায়গা নেই। এটার মাধ্যমে নিশ্চিত করা যাবে, লোকেরা তাদের অবৈধ লাভের জন্য যুক্তরাজ্যের বাজারকে ব্যবহার করতে পারবে না। 

বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত এই সমস্যাটি তিন বছর আগে একটি বড় তদন্তের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তদন্তে উঠে আসে, আজারবাইজান ও রাশিয়ার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা ‘কল্পিত পরিচালকদের’ দ্বারা পরিচালিত যুক্তরাজ্যের সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কীভাবে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছে। 

ইতালিতে পৃথক একটি তদন্তে দেখা গেছে, মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত একটি ব্রিটিশ সংস্থা এমন এক ব্যক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল, যার নাম প্রশাসনের অপরাধী তালিকায় ‘মুরগি চোর’ (দ্য হেন থিফ) নামে তালিকাভুক্ত ছিল! সম্প্রতি নেপলস মাফিয়ার সাবেক বস বিবিসিকে জানিয়েছেন তিনি কীভাবে লাভের জন্য কোম্পানিজ হাউসের দুর্বল বিধির সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশ দুর্বৃত্তদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। 

সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল যুক্তরাজ্যে ১৩৭ বিলিয়ন পাউন্ড সন্দেহজনক আর্থিক প্রবাহের জন্য সামনের সারির প্রায় এক হাজার সংস্থাকে চিহ্নিত করেছে। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির কর্মকর্তা স্টিভ গুডউইচ বলেন, অতি-প্রয়োজনীয় এই সংস্কারগুলো আরো আগেই করা দরকার ছিল। এখন এটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সামনে আনা উচিত।

বিবিসি অবলম্বনে

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন