বাংলার
গণমানুষের নন্দিত
নেত্রী বঙ্গবন্ধু
কন্যা প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনার
৭৪তম শুভ
জন্মদিন উপলক্ষে
আওয়ামী লীগ
নেতাকর্মীসহ দেশ-বিদেশের
মানুষ করোনা
মহামারীকালের মধ্যেই
তার দীর্ঘায়ু
কামনা করে
দোয়া ও
আশীর্বাদ করছেন।
জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান
ও বঙ্গমাতা
বেগম ফজিলাতুন্নেছা
মুজিবের কোল
আলো করে
১৯৪৭ সালের
২৮ সেপ্টেম্বর
গোপালগঞ্জ জেলার
ছায়া সুনিবিড়
টুঙ্গিপাড়া গ্রামে
তিনি জন্মগ্রহণ
করেন। পাঁচ
ভাইবোনের মধ্যে
তিনি জ্যেষ্ঠ।
রাজনৈতিক পরিবারে
জন্মগ্রহণের সুবাদে
শৈশব থেকেই
সংগ্রামী চেতনার
সুমহান উত্তরাধিকার
বহন করছেন।
পিতার সংগ্রামী
জীবনের আত্মত্যাগ
কাছ থেকে
দেখেছেন শিখেছেন।
ছাত্রলীগের নেত্রী
শেখ হাসিনা
ইডেন মহিলা
কলেজের নির্বাচিত
ভিপি হিসেবে
’৬৯-এর
গণআন্দোলনে সক্রিয়
সংগঠকের ভূমিকা
পালন করেছেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধের
নেতৃত্ব প্রদানকারী
দল আওয়ামী
লীগকে দীর্ঘ
৩৯ বছর
নিষ্ঠা, সততা
ও সাহসের
সাথে নেতৃত্ব
দিয়ে, অত্যাচার-অবিচার,
জেল-জুলুম
সহ্য করে
গণরায়ে অভিষিক্ত
করে চারবার
সরকারে অধিষ্ঠিত
হয়ে রাষ্ট্র
পরিচালনায় যোগ্যতার
স্বাক্ষর রেখেছেন।
আগরতলা মামলায়
জাতির জনক
কারারুদ্ধ থাকাবস্থায়
অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের
মধ্য দিয়ে
তিনি বিশিষ্ট
বিজ্ঞানী ড.
ওয়াজেদ মিয়ার
সঙ্গে বিবাহবন্ধনে
আবদ্ধ হন।
ব্যক্তিগত জীবনে
আইটি বিশেষজ্ঞ
পুত্র সজীব
ওয়াজেদ জয়
ও অটিজম
বিশেষজ্ঞ কন্যা
সায়মা ওয়াজেদ
পুতুলের গর্বিত
জননী তিনি।
১৯৭৫-এর
মর্মন্তুদ ঘটনার
পর আওয়ামী
লীগ যখন
ক্রান্তিকাল অতিক্রম
করছিল তখন
তিনি দলের
হাল ধরেন।
সমগ্র সমাজ
ও রাষ্ট্র
ব্যবস্থা তখন
সামরিক শাসকের
দুঃশাসনে নিপতিত।
স্বৈরশাসনের অবসান
ঘটাতে তিনি
জাতিকে নেতৃত্ব
দিয়েছেন। ’৮১-এর
সম্মেলনে সবাই
ধরে নিয়েছিল
আওয়ামী লীগ
বিভক্ত হয়ে
যাবে। আমরা
জীবনপণ চেষ্টা
করে সব
ষড়যন্ত্র ব্যর্থ
করে দলের
ঐক্য ধরে
রেখে বঙ্গবন্ধু
কন্যা শেখ
হাসিনার ওপর
দলের নেতৃত্বভার
অর্পণ করে
তার হাতেই
তুলে দিয়েছিলাম
আওয়ামী লীগের
রক্তে ভেজা
সংগ্রামী পতাকা।
’৮১-এর
১৩ থেকে
১৫ ফেব্রুয়ারি
অনুষ্ঠিত আওয়ামী
লীগের কাউন্সিলে
অনেক আলাপ-আলোচনার
পর জাতীয়
ও দলীয়
ঐক্যের প্রতীক
হিসেবে তার
অনুপস্থিতিতে তাকে
আওয়ামী লীগের
সভাপতি নির্বাচিত
করা হয়।
যেদিন তিনি
প্রিয় মাতৃভূমিতে
ফিরে এলেন
সেদিন আওয়ামী
লীগ নেতাকর্মীরা
মনে করেছিল,
শেখ হাসিনার
মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকেই
ফিরে পেয়েছে।
’৮১-এর
১৭ মে
নির্বাসন শেষে
স্বজন হারানোর
বেদনা নিয়ে
বঙ্গবন্ধু কন্যা
প্রিয় মাতৃভূমিতে
প্রত্যাবর্তন করেন।
যেদিন প্রিয়
নেত্রী স্বাধীন
বাংলাদেশে ফিরে
আসেন সেদিন
শুধু প্রাকৃতিক
দুর্যোগ ছিল
না, ছিল
সর্বব্যাপী সামাজিক
ও রাষ্ট্রীয়
দুর্যোগ। মাত্র
৩৪ বছর
বয়সে আওয়ামী
লীগের সভাপতি
নির্বাচিত হন।
তিনি স্বেচ্ছায়
আওয়ামী লীগের
নেতৃত্বে আসেননি।
দলীয় ও
জাতীয় ঐক্যের
বৃহত্তর ও
মহত্তর প্রয়োজনে
তার আগমন
ও নেতৃত্ব
গ্রহণ। নেতৃত্ব
গ্রহণের পর
তাকে বারবার
হত্যার চেষ্টা
করা হয়েছে।
মৃত্যু ঝুঁকি
নিয়েই তিনি
রাজনীতি করছেন।
কোনো পদ
বা ক্ষমতা
নয়, বরং
পিতার মতোই
বাংলার দুঃখী
মানুষের মুখে
হাসি ফোটাতেই
দলীয় নেতাকর্মীদের
প্রস্তাবে শহীদের
রক্তে ভেজা
দলীয় ও
জাতীয় পতাকা
স্বহস্তে তুলে
নিয়েছেন। প্রমাণ
হয়েছে, সেদিনের
কাউন্সিল অধিবেশনে
গৃহীত আমাদের
সিদ্ধান্তটি ছিল
ভবিষ্যতের জন্য
অপরিহার্য। নবপ্রজন্মের
অনেকেরই জানা
নেই, কত
আত্মত্যাগ আর
সংগ্রামের মধ্য
দিয়ে শেখ
হাসিনার নেতৃত্বে
আওয়ামী লীগ
আজ রাষ্ট্র
পরিচালনার দায়িত্ব
পালন করছে।
’৭৫-এর
পর কঠিন
সময় অতিক্রম
করেছি আমরা।
স্বৈরশাসক জেনারেল
জিয়ার নানা
রকম ষড়যন্ত্র
সত্ত্বেও সফলভাবে
কাউন্সিল অধিবেশন
সম্পন্ন করার
মাধ্যমে কায়েমি
স্বার্থবাদী চক্রের
একটি ঘৃণিত
চক্রান্ত আমরা
ব্যর্থ করতে
পেরেছিলাম। কাউন্সিল
অধিবেশনের সার্বিক
সাফল্য কামনা
করে শেখ
হাসিনা একটি
বার্তা প্রেরণ
করে বলেছিলেন,
‘আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে
এগিয়ে যান।’
বার্তাটি সাধারণ
সম্পাদক আব্দুর
রাজ্জাক সম্মেলনে
পাঠ করে
শুনিয়েছিলেন। দলের
শীর্ষ পদ
গ্রহণে তার
সম্মতিসূচক মনোভাব
সম্পর্কে কাউন্সিলরদের
উদ্দেশে বলেছিলাম,
‘আমরা সবাই
একটি সুসংবাদের
অপেক্ষায় আছি।’
শেখ হাসিনা
তার বার্তায়
সব ধরনের
দ্বন্দ্ব-বিভেদ
ভুলে ‘আত্মসমালোচনা
ও আত্মশুদ্ধির’
মাধ্যমে কাউন্সিলর
ও নেতাদের
বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচি
সোনার বাংলা
বাস্তবায়নের আহ্বান
জানিয়েছিলেন। শেখ
হাসিনার স্বদেশ
প্রত্যাবর্তনে গণবিরোধী
স্বৈরশাসকের ভিত
কেঁপে উঠেছিল।
’৮১-এর
১৭ মে
দেশে ফেরার
আগে স্বৈরশাসক
জেনারেল জিয়ার
নির্দেশে ‘শেখ
হাসিনা আগমন
প্রতিরোধ কমিটি’
গঠন করা
হয়। আওয়ামী
লীগের সর্বস্তরের
নেতাকর্মীকে এ
ব্যাপারে সতর্ক
ও সজাগ
থাকার নির্দেশ
দিয়েছিলাম আমরা।
শেখ হাসিনা
দেশে ফেরার
পর সামরিক
শাসনবিরোধী গণআন্দোলন
সংঘটিত করেন।
তত্কালীন সামরিক
শাসকের নির্দেশে
’৮৩-এর
ফেব্রুয়ারিতে তাকেসহ
আমাদের বেশ
কয়েকজন শীর্ষ
নেতাকে সামরিক
গোয়েন্দারা চোখ
বেঁধে ঢাকা
ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে
যায়। তাকে
বিনা কারণে
একটানা ১৫
দিন গৃহবন্দি
আর আমাদের
বিভিন্ন কারাগারে
প্রেরণ করা
হয়। আমাকে
সিলেট কারাগারে
পাঠানো হয়
এবং বিনা
বিচারে তিন
মাস আটক
রাখা হয়।
’৮৪-এর
ফেব্রুয়ারি ও
নভেম্বরে তাকে
পুনরায় গৃহবন্দি
করা হয়।
’৮৫-এর
মার্চে তাকে
তিন মাস
গৃহবন্দি এবং
আমাকে ছয
মাস কুমিল্লা
কারাগারে বিনা
বিচারে আটক
রাখা হয়।
জাতীয় সংসদে
বিরোধীদলীয় নেত্রী
থাকা সত্ত্বেও
’৮৬-এর
১০ নভেম্বর
তিনি যখন
সচিবালয় অবরোধ
কর্মসূচির নেতৃত্ব
দিচ্ছিলেন তখন
পুলিশ তার
প্রতি গুলিবর্ষণ
করে এবং
জাতীয় প্রেস
ক্লাবের সামনে
গাড়িতে উপবিষ্ট
থাকা অবস্থায়
তার গাড়ি
ক্রেন দিয়ে
তুলে নিয়ে
যাওয়ার চেষ্টা
করে এবং
পরদিন ১১
নভেম্বর তাকে
এক মাসের
আটকাদেশ দেয়া
হয়। ’৮৮-এর
২৪ জানুয়ারি
চট্টগ্রামে তাকে
হত্যার উদ্দেশে
তার গাড়িবহরে
পুলিশ গুলিবর্ষণ
করে। অল্পের
জন্য তিনি
প্রাণে বেঁচে
যান। সেদিন
বঙ্গবন্ধু কন্যাকে
রক্ষায় প্রায়
অর্ধশত নেতাকর্মী
প্রাণ বিসর্জন
দেন। ’৯০-এর
২৭ নভেম্বর
স্বৈরাচার কর্তৃক
জরুরি অবস্থা
ঘোষণার পর
শেখ হাসিনাকে
বঙ্গবন্ধু ভবনে
অন্তরীণ করা
হয়। কিন্তু
প্রবল গণরোষের
ভয়ে সামরিক
সরকার ওইদিনই
তাকে মুক্তি
দিতে বাধ্য
হয়। ’৯৪-এ
তার আহ্বানে
ট্রেন মার্চের
সময় ঈশ্বরদী
রেল স্টেশনের
উত্তর প্রান্তে
বন্দুকধারীরা তার
কামরা লক্ষ্য
করে গুলিবর্ষণ
করে। সেদিনও
তিনি সৌভাগ্যক্রমে
প্রাণে বেঁচে
যান। ২০০৯-এর
ফেব্রুয়ারিতে পিলখানা
হত্যাযজ্ঞের পর
ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড
ট্রিবিউন ও
নিউইয়র্ক টাইমসের
১৪-১৫
মার্চ সংখ্যায়
প্রকাশিত সাক্ষাত্কারে
তিনি বলেছিলেন,
‘আমি থামব
না, এসব
ষড়যন্ত্র উদ্ঘাটন
করতেই হবে।
আমি নিজের
জীবনের জন্য
ভীত হয়ে
পড়লে গোটা
জাতি ভীত
হয়ে পড়বে।
আমি জানি,
কিছু বুলেট
আমায় তাড়া
করছে।’ সত্যিই
ঘাতকের চোখ
শেখ হাসিনার
ওপর থেকে
সরে যায়নি।
ঘাতকের সর্বশেষ
নিষ্ঠুর আঘাত
এসেছিল ২০০৪-এর
২১ আগস্ট
গ্রেনেড হামলার
মধ্য দিয়ে।
সেদিন প্রিয়
নেত্রী প্রাণে
বেঁচে গেলেও
জীবন দিতে
হয়েছে আইভি
রহমানসহ আওয়ামী
লীগের ২৪
জন নেতাকর্মীকে।
১/১১-এর
পর তত্কালীন
সেনা সমর্থিত
সরকার তাকে
আটক করে
ভয়ভীতি প্রদর্শনের
চেষ্টা করেছে।
কিন্তু তিনি
অন্যায়ের কাছে
মাথা নত
করেননি। শেখ
হাসিনাকে হত্যার
উদ্দেশে মোট
১৯ বার
হামলা হয়েছে।
অকুতোভয় শেখ
হাসিনার বড়
বৈশিষ্ট্য হলো
তিনি আমাদের
মহান নেতা
জাতির জনক
বঙ্গবন্ধুর মতোই
অসীম সাহসী,
চিত্ত তার
ভয়শূন্য!
তার নেতৃত্বে একটানা বহু বছর দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (তখন একজন সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল) হিসেবে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করেছি। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবেও কাছে থেকে কাজ করেছি। এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে কাছ থেকে তাকে দেখেছি। আমার বারবার মনে হয়েছে, যখন তার কাছে বসি, কেবিনেট মিটিং করি বা সভা-সফর করি, তখন বঙ্গবন্ধুর কথা আমার স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি যা বিশ্বাস করতেন তা-ই পালন করতেন; একবার সিদ্ধান্ত নিয়ে কখনই আপস করতেন না এবং ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও মাথা নত করতেন না। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও জাতির পিতার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে সেই আদর্শ অর্জন করেছেন। তিনিও লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ করেন এবং সেই লক্ষ্য পূরণে থাকেন অবিচল। ’৮৬-তে তিনি প্রথম নির্বাচন করেন এবং জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেন। ’৯১-তে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তরণে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন। মাগুরার একটি উপনির্বাচনে বিএনপি যখন পরাজিত হতে চায়নি এবং জোর করে ভোট ডাকাতি করেছিল তখন বাধ্য হয়ে আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তুলে আন্দোলন করে বিজয়ী হয়ে ’৯৬-এ দীর্ঘ ২১ বছর পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব লাভ করেছিলাম। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার কাঁধে নিয়েই তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনতে সচেষ্ট হয়েছেন। একটি কথা আমার প্রায়ই মনে হয়, সেদিন শেখ হাসিনার হাতে যদি আওয়ামী লীগের পতাকা তুলে দেয়া না হতো তাহলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার ও মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হতো না। ’৯৬-তে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ প্রশস্ত করেছিলেন তিনি। ২০০১-এ ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়া সেই বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়। আবার ২০০৮-এর নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে ২০০৯-এ সরকার গঠন করে সেই বিচারের কাজ শেষ করে আদালতের রায় বাস্তবায়নের পথ করে দেন। বাংলার মাটিতে খুনিদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়। যেখানে খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধী অপরাধীদের গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কিত করেন, সেখানে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে বাংলার মানুষকে কলঙ্কমুক্ত করে চলেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ও জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন টেলিফোনে অনুরোধ করে কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ রহিত করতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু জনসাধারণের কাছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ শেখ হাসিনাকে টলাতে পারেননি। স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে শির উঁচু করে চলার অগ্রপথিক তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে আমরা যদি দেশের উন্নয়নের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, বিস্ময়কর উত্থান এই বাংলাদেশের। ‘বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট’ উেক্ষপণের মাধ্যমে ৫৭তম দেশ হিসেবে আমরা স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হয়েছি। এর আগে পরমাণু বিদ্যুেকন্দ্রের প্রথম ইউনিটের লাইসেন্স প্রাপ্তির মাধ্যমে ‘নিউক্লিয়ার নেশন’ হিসেবে আমরা বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের সদস্য হয়েছি। আমাদের রিজার্ভ সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। সেবা খাতসহ দেশের রফতানি আশাতীতভাবে বেড়েছে। ২০০৯ থেকে আজ পর্যন্ত ১১ বছর তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত। অনেক বড় বড় প্রকল্প তার নেতৃত্বে সমাপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করার পরও দৃঢ়তার সাথে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করে আজ তা সমাপ্তির পথে। সামগ্রিক আর্থসামাজিক উন্নতি ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনের এসব কৃতিত্বের জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ পর্যন্ত বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করেছে। জাতির জনকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রিয় মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা প্রদান বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে আসীন করেছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এত উন্নয়নমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং হচ্ছে যা এ ক্ষুদ্র লেখায় প্রকাশ করা অসম্ভব। মানবসূচক উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিস্মিত জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ‘অন্যান্য
স্বল্পোন্নত দেশের উচিত বাংলাদেশকে অনুসরণ করা।’ সামাজিক জীবনের সব ক্ষেত্রেই আজ আমরা এগিয়ে চলেছি। শিক্ষার হার বেড়েছে, দারিদ্র্যের হার কমেছে, শিল্প ও কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেছে, নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, মাতৃমৃত্যু ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমেছে। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশে করোনা মহামারীও তার নেতৃত্বে সফলভাবে মোকাবেলা করা হচ্ছে। বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত গ্রামগুলো আজ শহরে রূপান্তরিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিশ্বে আমরা যখন যাই তখন আমাদের যারা একদিন তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলেছিল, ‘তলাবিহীন
ঝুড়ি’, আজ
তারাই বলে, ‘বিস্ময়কর
উত্থান বাংলাদেশের’।
বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থানের স্থপতি শেখ হাসিনা নিয়মিত পড়াশোনা করেন। কেবিনেট মিটিংগুলোতে যথাযথ হোমওয়ার্ক করে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে মিটিংয়ে আসেন। একনেক বা কেবিনেট মিটিংয়ের দু-একদিন আগেই মিটিংয়ের আলোচ্যসূচি, প্রস্তাবাবলি ফাইলে দেয়া হয়। যখন একটি বিষয় প্রস্তাব আকারে পেশ করা হয় তখন সেই বিষয়ের খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয় তিনি সভায় সবিস্তারে তুলে ধরেন এবং সঠিকভাবে প্রতিটি প্রস্তাবের ওপর সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেন। তার এ অবাক করা প্রস্তুতি আমাদের মুগ্ধ করে। সারা দিন তিনি কাজ করেন। ভীষণ পরিশ্রমী, হাস্যোজ্জ্বল ও আবেগময়ী মানুষ তিনি। ধর্মপ্রাণ হিসেবে প্রত্যূষে তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামাজ আদায় করে তবেই তিনি দিনের কাজ শুরু করেন। পিতার মতোই গরিবের প্রতি তার দরদ অপরসীম। বঙ্গবন্ধুর ফান্ড আমার কাছে থাকত। তিনি গরিব-দুঃখী মানুষকে অকাতরে সাহায্য করতেন। আমাকে নির্দেশ দিতেন তাদের সাহায্য করো। জাতির পিতার কন্যার কাছে গরিব-দুঃখী মানুষ যখন হাত পাতে, পিতার মতো তিনিও তাদের সাহায্য করেন। আমাদের দেশে যারা বুদ্ধিজীবী-কবি-সাহিত্যিক-সমাজসেবক, তাদের বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়ান তিনি। একাধিক গ্রন্থের প্রণেতা শেখ হাসিনা একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বহু পুরস্কার ও খেতাবে তিনি বিভূষিত। পিতা-মাতার মতো সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত শেখ হাসিনা সংস্কৃতিমান এবং খাঁটি বাঙালি নারী। বাংলার মানুষের প্রতি তার দরদ-মমত্ববোধ, তার জ্যোতির্ময় পিতার চেতনা থেকেই আহরিত। তবে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে তিনি কেবল বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে পরিচিত; বরং আপন যোগ্যতায় স্বমহিমায় বাংলার কোটি মানুষের হূদয়ে তিনি অধিষ্টিত। শুধু বাংলাদেশের রাষ্ট্রনায়ক না, আন্তর্জাতিক নেতা হিসেবে এরই মধ্যে বিশ্বজনমত ও নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে তিনি সক্ষম হয়েছেন।
২০০৮-এর নির্বাচনে রূপকল্প তথা ভিশন-২০২১ ঘোষণা করেছিলেন তিনি, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ ও মধ্যম আয়ের দেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ স্বপ্ন না বাস্তব। এরই মধ্যে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরিত হয়েছি। করোনার কারণে সীমিত পরিসরে এ বছরের ১৭ মার্চ থেকে বর্ষব্যাপী জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী তথা ‘মুজিববর্ষ’ সগৌরবে পালিত হচ্ছে। ২০২১-এ যখন স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি হবে তখন আমরা পরিপূর্ণভাবে মধ্যম আয়ের দেশে প্রবেশ করে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরব। এসব অর্জন সম্ভবপর হয়েছে তার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে। জাতির পিতা দুটি লক্ষ্য নিয়ে রাজনীতি করেছেন। একটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা, আরেকটি অর্থনৈতিক মুক্তি। তিনি আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন, কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়ে যেতে পারেননি। সেই কাজটি দক্ষতা, নিষ্ঠা, সততা ও সাহসের সাথে সম্পন্ন করে দেশকে তিনি অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন তার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ হবে মর্যাদাশালী ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। বাংলার মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে নিবেদিত প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার শুভ জন্মদিনে তার নীরোগ ও দীর্ঘজীবন কামনা করি।
তোফায়েল আহমেদ: আওয়ামী লীগ নেতা; সংসদ সদস্য; সভাপতি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ