বান্দরবানে পানি পরীক্ষাগার নির্মাণ

কমবে পানি পরীক্ষার জটিলতা বাড়বে রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতা

বণিক বার্তা প্রতিনিধি বান্দরবান

বান্দরবানে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে পানি পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি (পরীক্ষাগার) নির্মাণের কাজ শুরু করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) এটি চালু হলে জেলার বিভিন্ন উৎস থেকে সংগ্রহ করা পানির পরীক্ষা জটিলতা কমার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ সক্ষমতাও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরীক্ষাগার না থাকায় জেলায় এখন পর্যন্ত স্থাপিত সব ধরনের প্রযুক্তি (গভীর অগভীর নলকূপ, মেগা ডিপটিউবওয়েল, গ্র্যাভিটি ফ্লো সিস্টেম) থেকে সংগ্রহ করা পানির নমুনা পরীক্ষার জন্য অন্য জেলার ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হয়। কারণে দুর্গম এলাকা থেকে সংগ্রহ করা নমুনার অধিকাংশই যথাসময়ে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এজন্য সেসব নমুনা থেকে পানির গুণগত মান ক্ষতিকর উপাদানগুলোর প্রকৃত ফল পাওয়াও দুরূহ হয়ে পড়ে। ফলে পানির নমুনা সংগ্রহ সংক্রান্ত কাজের পেছনে সরকারি ব্যয়ের পাশাপাশি সময়েরও অপচয় হয়।

ডিপিএইচই অফিস সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের অধীনেপানির গুণগত মান পরীক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণপ্রকল্পের আওতায় বান্দরবানে একটি পানি পরীক্ষার ল্যাবরেটরি নির্মাণের কাজ চলছে। ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ল্যাবরেটরি ভবন নির্মাণের কাজটি পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মারমা এন্টারপ্রাইজ।

সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, সদরের নতুন ব্রিজের দক্ষিণে ডিপিএইচইর স্টাফ কোয়ার্টার এলাকায় পানি পরীক্ষার ল্যাবরেটরি ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এখন পর্যন্ত চারতলা ভবনের ভিত্তির কাজ চলছে। তবে প্রাথমিকভাবে দুইতলার কাজ শেষ করে পরীক্ষাগারটি উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সময় ঠিকাদার মংওয়েনু মারমা জানান, কাজের মেয়াদ জুন ২০২১ পর্যন্ত হলেও আগামী মার্চে মধ্যে শেষ করার চেষ্টা রয়েছে।

ডিপিএইচইর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মঞ্জেল হোসেন জানান, এখন পর্যন্ত জেলায় স্থাপিত সব ধরনের পানি প্রযুক্তি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বান্দরবান অফিস অন্য জেলার পানি পরীক্ষাগারে পাঠিয়ে থাকে। আগে কুমিল্লা কক্সবাজারের পরীক্ষাগারগুলোয় নমুনা পাঠাতে হতো। তখন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষাগারে পৌঁছানো অনেক চ্যালেঞ্জের কাজ ছিল। কারণ সংগ্রহ করা নমুনা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষাগারে পৌঁছাতে হয়, যা পেরিয়ে গেলে সংগৃহীত নমুনায় পানির গুণগত মান পরীক্ষার উপযোগিতা আর থাকে না।

তিনি জানান, দুই বছর ধরে রাঙ্গামাটির পানি পরীক্ষাগারে নমুনা পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সংগৃহীত নমুনা সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে পরীক্ষাগারে পৌঁছানোর বাধ্যবাধকতা তো রয়ে গেছে। কারণ জেলার থানচি, আলীকদম, রোয়াংছড়ি, নাইক্ষ্যংছড়ি, রুমা লামা উপজেলার দূরবর্তী দুর্গম জনবসতিতে নির্মিত গ্র্যাভিটি ফ্লো সিস্টেম (জিএফএস), টিউবওয়েলসহ স্থাপিত নানা প্রযুক্তির পানির নমুনা সংগ্রহ করে রাঙ্গামাটির পরীক্ষাগারে পাঠাতে হয়। এসব এলাকা দুর্গম হওয়ায় নমুনা সংগ্রহ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরীক্ষাগারে পাঠানো কষ্টসাধ্য। বান্দরবানে পরীক্ষাগার চালু হলে পূর্বের সব দুর্ভোগ ঘুচবে বলে মনে করেন তিনি।

ডিপিএইচইর বান্দরবান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সোহরাব হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ভূগর্ভস্থ ভূপৃষ্ঠের পানির তথ্য অনুসন্ধান করা গুণগত মান নিশ্চিত করার কাজ সহজলভ্য করতে সরকার বান্দরবানে পানি পরীক্ষাগার নির্মাণ করছে। এতে জীবাণুতাত্ত্বিক (Bacteriological), পানির গুণগত মান নিশ্চিত আর্সেনিকসহ মানবশরীরের জন্য ক্ষতিকর উপাদানগুলো চিহ্নিতকরণসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষাগার জেলার পানি সংক্রান্ত জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে সরকারের পানি পরীক্ষার কার্যক্রম শক্তিশালী গতিশীল হবে এবং রক্ষণাবেক্ষণের কাজের সক্ষমতাও বাড়বে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন