উৎপাদন কম হলেও দামে খুশি খুলনার পাটচাষী

বণিক বার্তা প্রতিনিধি খুলনা

খুলনা অঞ্চলে সচরাচর পাটের আবাদ হয় না। তার পরও এবার খুলনা, বাগেরহাট সাতক্ষীরা জেলায় ৫০ হাজার একর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা থেকে লাখ ৫৩ হাজার বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু বৈরী আবহাওয়ার কারণে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ারই সম্ভাবনা রয়েছে।

এরই মধ্যেই চাষীরা খাল, বিল, ডোবা-নালায় জাগ দেয়ার মাধ্যমে পাট পচাতে শুরু করেছেন। কোথাও কৃষকরা পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অন্যদিকে গত বছরের তুলনায় এবার বাজারে পাটের দাম ভালো পাচ্ছেন চাষীরা। দাম আগামীতে অব্যাহত থাকলে আগামীতে বিভাগে পাটের আবাদ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পাট অধিদপ্তরের খুলনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বছর খুলনায় পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হাজার ৫০০ একর, বাগেরহাটে হাজার ৪০০ সাতক্ষীরায় ৩৯ হাজার একর। এর বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় খুলনায় ৩৩ হাজার ৭৫০ বেল (প্রতি বেলে পাটের পরিমাণ ১৮২ দশমিক ২৫ কেজি), বাগেরহাটে ২২ হাজার ৭২৫ সাতক্ষীরায় লাখ ৯৮ হাজার বেল। গত বছর খুলনা অঞ্চলে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয় হাজার থেকে হাজার ২০০ টাকায়। তবে এবার মানভেদে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে হাজার ৮০০ থেকে হাজার ২০০ টাকায়।

খালে, বিলে বা অল্প পানি থাকা জলাশয়ে কৃষকরা পাট জাগ দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও দেখা যায়, কৃষক জাগ দেয়া পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। আবার কোথাও শুকাচ্ছেন পাটকাঠি (পাটখড়ি) আবহাওয়ার কারণে গতবারের তুলনায় এবার পাটের উৎপাদন ২০-২৫ শতাংশ কম হয়েছে। কিন্তু গতবারের তুলনায় এবার পাটের দাম রয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তাই উৎপাদন কম হলেও লাভের মুখ দেখবেন চাষীরা।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে ১২-১৪ মণ পাট উৎপাদন হয়। আর বিঘাপ্রতি পাট চাষে কৃষকের খরচ হয় ৪০০০-৪৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত পাটের পাশাপাশি ৮০-৯০ আঁটি পাটকাঠি হয়, যার প্রতি আঁটির দাম ৫০-৬০ টাকা। এবার কৃষকরা বেশি চাষাবাদ করেছেন বিএডিসি- এবং বিজিআরআই- জাতের পাট। এর জীবনকাল ১০০-১১০ দিন।

ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরাঘোনার পাটচাষী মো. হাবিবুর রহমান মোড়ল জানান, এবার বিএডিসি- জাতের পাট চাষাবাদ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবার অনেক ভালো উৎপাদন হয়েছে। পাট কেটে এখানে লালশাকের বীজ বুনব। এখন আর জমি ফেলে রাখি না। গত বছর পাট চাষে লাভ করতে পারিনি। এবার পাটের উৎপাদনে আশার আলো দেখছি। পানিতে পাট জাগ দিলে দিন পর পচনের গন্ধ বেরিয়ে আসে। সেই গন্ধ সাধারণের কাছে ভালো না লাগলেও কৃষকদের ভালো লাগে। কারণ গন্ধই কৃষকদের মনে আনন্দ এনে দেয়।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন জানান, যে জমিতে পাট চাষাবাদ হয়, সেই জমিতে পরের বছর সার কম লাগে। তবে ডুমুরিয়া এলাকায় পাটের দাম মণপ্রতি হাজার ৭০০ থেকে হাজার ৮০০ টাকা। পাট ওঠার পর দাম বাড়লে কৃষক আরো উপকৃত হবেন।

খুলনা বিভাগীয় পাট অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, এবার পাটের দাম মণপ্রতি হাজার ২০০ থেকে হাজার ৪০০ টাকা। উৎপাদনও ভালো। এবার আবহাওয়ার জন্য ২০-২৫ শতাংশ উৎপাদন কম হয়েছে। তার পরও পাটের দাম ভালো থাকার কারণে কৃষকের পুষিয়ে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন