গুগল নির্বাহীদের অসদাচরণ

৩১ কোটি ডলারে মামলা নিষ্পত্তিতে অ্যালফাবেট

বণিক বার্তা ডেস্ক

বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগল কয়েক বছর ধরে নানা ইস্যুতে অভ্যন্তরীণ বাহ্যিকভাবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ নির্বাহীর বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ ওঠা, কর্মীবাহিনীতে বৈচিত্র্যহীনতা এবং মানবাধিকার নীতি-নৈতিকতা বর্জন করে চীনের জন্য বিশেষ সার্চ ইঞ্জিন চালুর ড্রাগনফ্লাই প্রকল্প হাতে নেয়ায় সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়। এমনকি গুগল নির্বাহীদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন অসদাচরণ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে খোদ অংশীদারদের মামলার মুখে পড়েছিল প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশন। এবার যৌন অসদাচরণের ঘটনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং কর্মীবাহিনীতে বৈচিত্র্য আনতে ৩১ কোটি ডলার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অংশীদারদের সঙ্গে একটি মামলা নিষ্পত্তিতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। খবর দ্য ভার্জ।

২০১৯ সালের শুরুর দিকে গুগলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে মামলা করেন জেমস মার্টিন নামে এক অংশীদার। তার অভিযোগ, গুগলের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাহীদের যৌন অসদাচরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর দায় এড়িয়ে চলছেন এবং ধরনের ঘটনায় নীতি-নৈতিকতার তোয়াক্কা না করে অভিযুক্তকে বড় অংকের অর্থ দেয়ার তথ্য গোপন করেছেন।

ওই সময় বিভিন্ন ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে, অসদাচরণের অভিযোগ থাকলেও গুগল ছেড়ে যাওয়ার সময় অ্যান্ড্রয়েড স্রষ্টা খ্যাত অ্যান্ডি রুবিনকে কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছিল। বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর গুগলের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়। অধীনস্থ এক নারী কর্মীর সঙ্গে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ মাথায় নিয়ে রুবিন গুগল ছাড়েন ২০১৪ সালের অক্টোবরে। তবে তাকে অর্থ পরিশোধের কথা জানা যায় গত বছর। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গুগলের কর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা নিজ দপ্তর ছেড়ে এসে প্রতিবাদ জানান। এর পরই যৌন অসদাচরণ নিয়ে কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেয় গুগল। একই সময় প্রতিষ্ঠানটিকে যৌন অসদাচরণ নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নামতে বাধ্য করেন কয়েকজন অংশীদার।

অংশীদারদের মামলায় গুগলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধেই মূল অভিযোগ আনা হয়। এর মধ্যে ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্ট জন ডোয়ের এবং রাম শ্রীরাম নামে দুজন ছিলেন। তারা গুগলের পরিচালনা পর্ষদের লিডারশিপ ডেভেলপমেন্ট এবং ক্ষতিপূরণ কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, যৌন অসদাচরণের বিষয়ে অবগত থাকার পরও তারা অভিযুক্তকে অর্থ পরিশোধে অনুমোদন দিয়েছিলেন।

ওই সময় মামলার বাদীর এক আইনজীবী বলেন, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা দায়িত্বে থাকলে তারা সঠিক কাজটি করেন বলে মনে করা হয়। তবে আসামিরা এক্ষেত্রে সঠিক কাজের বদলে অন্য সবকিছুই করেছেন। ওই মামলায় গুগলের দুই প্রতিষ্ঠাতা ল্যারি পেজ সের্গেই ব্রিন, তত্কালীন নির্বাহী চেয়ারম্যান এরিক শিমিড, অ্যান্ডি রুবি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সুন্দর পিচাইসহ আরো অনেক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও জিম্মাদারের কর্তব্য অবহেলা, ক্ষমতার অপব্যবহার অপচয়ের অভিযোগ আনা হয়।

একই সময় জেমস মার্টিন ছাড়াও নর্থ ক্যালিফোর্নিয়া পাইপ ট্রেডস পেনশন ফান্ড এবং টিমস্টারস লোকাল ২৭২ লেবার ম্যানেজমেন্ট পেনশন ফান্ড নামের দুই অংশীদারও গুগলের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগে পৃথক মামলা করেন।

গুগল নির্বাহীদের বিরুদ্ধে একাধিক যৌন অসদাচরণের মামলা দায়ের হওয়ায় অনেকটা নড়েচড়ে বসেছিল অ্যালফাবেট। গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগগুলো কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন গুগল নির্বাহীরা, তা নিয়ে তদন্তে নামে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদ। অতীতে নারী কর্মীদের প্রতি গুগলের শীর্ষ নির্বাহীদের বিরুদ্ধে ওঠা অসদাচরণের অভিযোগগুলোর সুষ্ঠুভাবে তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটিকে সহায়তার জন্য স্বতন্ত্র একটি আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা হয়, যা অভিযোগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং অভিযোগ খতিয়ে দেখবে। এসব অভিযোগ তদন্তের সঙ্গে অ্যালফাবেটের প্রধান আইন কর্মকর্তা সরাসরি যুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। নারী কর্মীদের প্রতি শীর্ষ নির্বাহীদের অসদাচরণের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়। গুগলের সাবেক শীর্ষ নির্বাহীদেরও আক্ষেপ করে বলতে দেখা গেছে, অ্যালফাবেট নিয়ন্ত্রিত গুগলের বিরুদ্ধে এত ভুল পদক্ষেপ নেয়ার অভিযোগ কেন? শুরুতে আমলে না নিলেও এখন অসদাচরণের মতো অভিযোগ নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্টরা।

গুগলের নীতিভ্রষ্ট প্রতিভা হিসেবে সবার আগে সাবেক অ্যান্ড্রয়েড বিভাগের প্রধান অ্যান্ডি রুবিনের নাম উঠে আসে। অধীনস্থ এক নারী কর্মীর সঙ্গে যৌন অসদাচরণের অভিযোগ থাকার পরও ২০১৪ সালের অক্টোবরে বীরের বেশে প্রতিষ্ঠান ছেড়েছিলেন তিনি। এমনকি আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকার পরও ওই সময় তাকে কোটি ডলার দেয়ার চুক্তি করেছিল গুগল।

অবশ্য গত বছরের শেষদিকে নির্বাহীদের বিরুদ্ধে ওঠা যৌন অসদাচরণের অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিতে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালায় পরিবর্তন এনেছে গুগল। এর আগে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ নির্বাহীদের অসদাচরণের অভিযোগ এবং এসব অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়া নিয়ে বিশ্বব্যাপী একযোগে কর্মীরা বিক্ষোভ করেছিলেন। অভ্যন্তরীণ নীতিমালায় পরিবর্তন তারই ফল ছিল।

অসদাচরণের অভিযোগ ওঠার পরও গুগল যে তিন নির্বাহীকে রক্ষা করেছিল, রুবিন তাদের অন্যতম। ধরনের দুটি ঘটনায় গুগল জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দিয়েছিল। তবে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকার পরও গুগল ছাড়ার বিনিময়ে তাদের বিপুল অর্থ পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হয়।

ওই সময় কর্মীদের উদ্দেশে এক বিবৃতিতে গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই জানান, অতীতে আমরা নানা ইস্যুতে সব সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এমন নয়। অতীতের বিষয়গুলোর জন্য আমরা দুঃখিত। অর্থাৎ একটা বিষয় খুবই স্পষ্ট যে আমাদের অভ্যন্তরীণ কিছু পরিবর্তন দরকার। কর্মীদের নানা অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে নিতে গুগল আরো স্বচ্ছ হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন