টিকে থাকতে মরিয়া প্রয়াস

যাত্রী আকর্ষণে বিমানভাড়া কমাচ্ছে ইউরোপীয় উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ভ্রমণ খাতের ওপর সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। এতে সহস্র  কোটি ডলারের লোকসান গুনছে উড়োজাহাজ সংস্থা ভ্রমণ খাতসংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় যাত্রী আকর্ষণে বিমানভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপীয় উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো। খবর এএফপি।

কভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে বেশির ভাগ দেশ কর্তৃক ভ্রমণে কঠোর বিধিনিষেধের কারণে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো বিপাকে পড়েছে। গত বসন্তে এয়ার ট্রাফিক প্রায় শূন্যে নেমে এসেছিল। গ্রীষ্মে কিছুটা গতি ফিরে এলেও এখন আবার পতন শুরু হয়েছে।

ইউরোপে এয়ার ট্রাফিকের হিসাব রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান ইউরোকন্ট্রোল বলছে, গত কয়েক সপ্তাহে এয়ার ট্রাফিক ফের কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে এয়ার ট্রাফিক গত বছরের তুলনায় ৫৪ শতাংশ কম। গত আগস্টের এয়ার ট্রাফিক ২০১৯ সালের একই মাসের তুলনায় ৩০ শতাংশ কমেছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় খাতের সম্ভাব্য আরোগ্য নিয়ে আশাবাদী হতে পারছে না ইউরোকন্ট্রোল। গত বসন্তে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, অক্টোবরে এয়ারট্রাফিক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ কম থাকবে। কিন্তু বর্তমানে ৫৭ শতাংশ কমার পূর্বাভাস ইউরোকন্ট্রোলের।

মহামারীতে নগদ অর্থপ্রবাহ সৃষ্টিতে মরিয়া উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো বিমানভাড়া কমাতে শুরু করেছে। ফরওয়ার্ডকিজ নামে পর্যটন বাজার বিশ্লেষণকারী একটি কোম্পানি বলছে, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি নেদারল্যান্ডস থেকে দক্ষিণ ইউরোপীয় গন্তব্যগুলোয় গত আগস্টে বিমানভাড়া ১৫ শতাংশ কমিয়েছে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো।

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি গবেষণায় আরো দেখা গেছে, কিছু রুটের বিমানভাড়া এক-তৃতীয়াংশ অবধিও কমেছে।

ফ্রান্সের বাজেট এয়ারলাইনস ইজিজেটের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজিনাল্ড ওটেন বলেন, ফ্লাইটে চড়ার জন্য ভ্রমণকারীদের রীতিমতো প্রলুব্ধ করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে টিকিট মূল্য গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। গ্রীষ্মে কিছু রুটে ফ্লাইট চালুতে সক্ষম হয়েছে তারা, যেখানে উড়োজাহাজগুলো যাত্রী পরিপূর্ণ ছিল। তবে আমরা মাত্র আমাদের ৩০ শতাংশ সক্ষমতায় পরিচালিত হচ্ছি। অথচ গ্রীষ্মকাল ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় সময়।

এডি উইলসন নামে রায়ানএয়ারের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, টিকিটের নিম্নমূল্যে ভ্রমণে উৎসাহিত করতে পারে। চলতি সপ্তাহে একটি কিনলে আরেকটি টিকিট ফি অফার দিয়েছে ইউরোপের বৃহত্তম সাশ্রয়ী উড়োজাহাজ সংস্থা।

উইলসন বলেন, এমন এক পর্যায়ে আপনি এমনি এমনি বসে থাকতে পারেন না। সবকিছু একসময় শেষ হয়ে যাবে এবং রাজনীতিবিদরা কিছু একটা করবেন প্রত্যাশায় দিন গুনতে পারেন না।

টিকিট মূল্য কমানোর পাশাপাশি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো তাদের সবচেয়ে লাভজনক রুটগুলোয় মনোযোগ বাড়াচ্ছে।

তবে দ্বিতীয় দফায় কভিড-১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধিতে অনেক দেশই আবার কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে যাচ্ছে। ভ্রমণে বিধিনিষেধ, কঠোর কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা এবং কভিড-১৯ টেস্টের কারণে ভ্রমণে ফের পতন শুরু হয়েছে।

চলতি মাসের শুরুতে বিভিন্ন দেশের কাছে ইউরোপীয় উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো অনুরোধ করেছে যেন দেশগুলো তাদের বিধিনিষেধের মধ্যে সমন্বয় করে। বর্তমানে যে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে, তা ইইউর পর্যটন ভ্রমণ খাত চাঙ্গা বিলম্বিত করবে।

ফরওয়ার্ডকিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট অলিভার পন্টি বলেন, হাতে থাকা রসদ নিয়েই বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলার চেষ্টা করছে উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো। এয়ার ট্রাফিক বৃদ্ধিতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপের কথা সামনে নিয়ে আসছে তারা।

তিনি আরো বলেন, টিকিটের দাম কমানো ডিসকাউন্টের প্রভাব তাই খুব সীমিত পর্যায়ের থাকবে। কারণ যেকোনো সময় গ্রাহকের পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে এবং বাতিল হওয়া ফ্লাইটের টিকিটের অর্থ ফেরতের অনিশ্চয়তা থাকছে। এজন্য গ্রাহকরা বুকিং দিতে বা আগাম টিকিট কিনতে কিছুটা ভয় পাচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন