করোনা ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নভেল করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলে তাকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আশা করা হচ্ছে বিশ্ব শিগগিরই কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন পাবে। ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। সব দেশ যাতে ভ্যাকসিন সময়মতো একই সঙ্গে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কারিগরি জ্ঞান মেধাস্বত্ব প্রদান করা হলে ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে। 

গতকাল জাতিসংঘের (ভার্চুয়াল) ৭৫তম সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রাষ্ট্রপ্রধানদের রেকর্ডকৃত বক্তব্য প্রচার করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কভিড-১৯ প্রমাণ করেছে, আমাদের সবার ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। আমরা কেউই সুরক্ষিত নই যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা সবার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারছি। ভাইরাস আমাদের অনেকটাই ঘরবন্দি করে ফেলেছিল। ফলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পাশাপাশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। বাংলাদেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দশমিক শতাংশ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু কভিড-১৯ আমাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা প্রথম থেকেই জীবন জীবিকা দুই ক্ষেত্রেই সমানভাবে গুরুত্ব দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন যাতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন না হয়, তার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি। আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিধি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করেছি।

করোনাকালে বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পুষ্টি নিশ্চয়তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের শিল্প-কারখানা সচল রাখা এবং কৃষি শিল্পপণ্য যথাযথভাবে বাজারজাতের বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি। ফলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অর্থনীতি এখনো তুলনামূলকভাবে অনেক ভালো আছে।

তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত বিভাজন নিরসন, সম্পদ আহরণ প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আমাদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি উদ্ভাবনকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল এবং সদ্য উত্তরিত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য আপৎকালীন, উত্তরণকাল উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বর্ধিত আন্তর্জাতিক সহায়তা এবং প্রণোদনা প্যাকেজ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের সরকারপ্রধান বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিদ্যমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ আরো প্রকট হয়েছে। মহামারী আমাদের উপলব্ধি করতে বাধ্য করেছে যে সংকট উত্তরণে বহুপাক্ষিকতাবাদের বিকল্প নেই। জাতিসংঘের ৭৫তম বছরপূর্তিতে জাতিসংঘ সনদে অন্তর্নিহিত বহুপাক্ষিকতাবাদের প্রতি আমাদের অগাধ আস্থা রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে বহু প্রতিকূলতার মধ্যেও বহুপাক্ষিকতাবাদের আদর্শ সমুন্নত রাখতে আমরা বদ্ধপরিকর। পাশাপাশি আমরা আমাদের জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দারিদ্র্য শোষণমুক্ত সেই সোনার বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত, যেখানে সবার মানবাধিকার নিশ্চিত হবে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে জাতি বিশ্বের কাছে এটিই আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশে আমরা শিশুদের উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। ইউনিসেফের এক্সিকিউটিভ বোর্ডের বর্তমান সভাপতি হিসেবে আমরা শিশুর প্রতি বৈষম্য দূরীকরণে কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া কভিডসংক্রান্ত সমস্যা যাতে শিশুদের সামগ্রিক সমস্যায় পরিণত না হয়, তা নিশ্চিত করতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

তিনি বলেন, শান্তির প্রতি অবিচল থেকে আমরা সন্ত্রাসবাদ সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। মহামারীর ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি মোকাবেলায় জাতীয় উদ্যোগের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও অপরিহার্য।

পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত পৃথিবী বিনির্মাণে বৈশ্বিক আকাঙ্ক্ষার প্রতি আমাদের সমর্থন অবিচল। সে বিবেচনা থেকে পরমাণু প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের বিষয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্যক্রমকে আমরা জোর সমর্থন জানাই।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন জাতিসংঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সব দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ওপর গুরুত্বারোপের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তেমনি মহামারী আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন