সাত মাস ধরে বন্ধ ৪২টি প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা

বগুড়ার পর্যটন খাতে ধস, বিপাকে হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী

এইচ আলিম বগুড়া

বগুড়ার মহাস্থানগড়, ভাসুবিহার, গোবিন্দ ভিটা, পাহাড়পুরসহ ৪২টি প্রত্নতত্ত্ব এলাকা ঘিরে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল-মোটেল। জেলার পর্যটন খাতের বড় একটি অংশজুড়েই রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা। বছরজুড়ে এসব এলাকায় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশী পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকত। কিন্তু মার্চে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে বন্ধ রয়েছে বগুড়ার সব প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা। সাত মাস ধরে পর্যটন এলাকা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা। টানা লোকসান গুনতে গুনতে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটানোর চিন্তাও করছেন।

জানা যায়, দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর ১৮ মার্চ থেকে বগুড়ার মহাস্থানগড়, ভাসুবিহার, গোবিন্দভিটা, জাদুঘর, পরশুরামের প্যালেস, সিংহদার, শিলাদেবীর ঘাটসহ প্রায় ৪২টি প্রত্ন স্থান বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। করোনা মহামারীর আগে এসব পর্যটনকেন্দ্রে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে অসংখ্য পর্যটক আসতেন। মহাস্থানগড়ে সারা বছর পর্যটক কমবেশি দেখা গেলেও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারিতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক দেখা মিলত। এর সঙ্গে বিভিন্ন সরকারি ছুটিতে বগুড়ার পর্যটন স্পটগুলোয় সাধারণ মানুষের ভিড় থাকত চোখে পড়ার মতো। কিন্তু দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাবে এখন উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। মহাস্থানগড়ে গত সাত মাসে কোনো দেশী-বিদেশী পর্যটক দেখা যায়নি। পর্যটক না থাকায় বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা হোটেল-মোটলেও এর প্রভাব পড়েছে। পর্যটন এলাকার আশপাশে খুদে ব্যবসায়ীদের এক সময় দেখা গেলেও এখন দেখা যাচ্ছে না। তারা পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছেন।

বগুড়ার মহাস্থানগড়কে সার্ক কালচারাল সিটি হিসেবে ঘোষণার পর থেকে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বগুড়ার মহাস্থানগড়। পর্যটক বৃদ্ধির কারণে এলাকায় প্রসার ঘটে ব্যবসা-বাণিজ্যের।

বগুড়া শহরের শতবর্ষী আকবরিয়া আবাসিক হোটেলের কর্মকর্তা মো. শামীম জানান, করোনার আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এমনকি বিদেশী পর্যটক আসতেন বগুড়ায়। কিন্তু সাত মাসেরও বেশি সময় কোনো পর্যটক নেই। পর্যটক না থাকায় সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। অবস্থা আগামীতে চলতে থাকলে সংকটগুলো প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। করোনা মহামারীর পর থেকে পর্যটকশূূন্য হয়ে পড়েছে বগুড়া। অবস্থায় হোটেল-মোটেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন অন্যান্য খরচ বন্ধ হয়নি। তাই অনেক ছোট হোটেল মালিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পাশাপাশি ব্যবসা বন্ধের পরিকল্পনা করছেন।

বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকার পাশে চা কফি বিক্রেতারা জানান, গত ফেব্রুয়ারিতেও তাদের ব্যবসা জমজমাট ছিল। এখন নেই। দু-চারজন পথচারী ছাড়া কোনো পর্যটক বা দর্শনার্থীও নেই। পর্যটক না থাকায় অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন।

বগুড়া শহরের মাটিডালি এলাকার মোটেল ক্যাসেল সোয়াদের কর্মকর্তারা জানান, করোনাভাইরাসের আগে তাদের মোটেলে প্রচুর পর্যটক সমাগম হতো। কিন্তু এখন একেবারেই পর্যটক নেই। তাদের মোটেল ব্যবসায় আগের মতো আর আয় নেই।

বগুড়ার মহাস্থানগড়ের বাসিন্দা মো. সুমন জানান, মহাস্থানগড়কে নতুন করে সাজিয়ে তোলার পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন আসত। বিদেশীরাও আসত। এখন করোনার সময়ে কেউ আসে না। আশপাশের কয়েকজন এলেও তারা তেমন কোনো কিছুই দেখতে পারেন না। করোনার শুরু থেকে মহাস্থানগড়সহ আশপাশের প্রত্ন এলাকা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বগুড়ার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালক নাহিদ সুলতানা বণিক বার্তাকে বলেন, বগুড়ায় ৪২টি প্রত্ন স্থান রয়েছে, যা সংরক্ষিত। দেশে করোনাভাইরাসের কারণে মার্চ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকাগুলো অধিদপ্তর থেকেই বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার খুলে দেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন