নভেল করোনাভাইরাসের মহামারী ও প্রতিকূল আবহাওয়া—এ দুইয়ের জের ধরে চলতি বছর গভীর সংকটে পড়েছে আসামের চা শিল্প। কমেছে উৎপাদন। ব্যাহত হয়েছে সরবরাহ শৃঙ্খল। সব মিলিয়ে আসামের চা শিল্পে সম্ভাব্য আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১ হাজার ২০০ রুপি (ভারতীয় মুদ্রা) হতে পারে বলে ধারণা করছেন শিল্পসংশ্লিষ্টরা। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে শিল্পসংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছিল। সাড়াও দিয়েছে আসাম রাজ্য সরকার। চা শিল্পের সম্ভাব্য ক্ষতি কমিয়ে আনতে ঋণ ও ভর্তুকি প্রদানসহ চার ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। খবর ইকোনমিক টাইমস ও বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড।
চারটি উপায়ের প্রথম পর্যায়ে করোনা মহামারী ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের অভিঘাত মোকাবেলা করার জন্য আসামের যেসব চা বাগান বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইবে। আসাম সরকার তাদের সেই ঋণের বিপরীতে ৩ শতাংশ হারে সুদ পরিশোধ করে দেবে। এক্ষেত্রে বাগানপ্রতি ঋণের পরিমাণ হতে হবে সর্বোচ্চ ২০ লাখ রুপি। মূলত ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ছোট বাগানের লোকসান কমিয়ে আনতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ের সহায়তার অংশ হিসেবে বাগানগুলোকে প্রতি কেজি অর্থোডক্স চা উৎপাদনের বিপরীতে ৭ রুপি করে ভর্তুকি দেবে আসাম সরকার। এর মধ্য দিয়ে চা উৎপাদন ও রফতানিতে যে মন্দা ভাব বজায় রয়েছে, তাতে কিছুটা হলেও গতি ফিরতে পারে।
তৃতীয় পর্যায়ে চা গাছের চারা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনার ক্ষেত্রে আসাম সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যের চা বাগান ও কারখানাগুলোকে ২৫ শতাংশ ভর্তুকির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আর সর্বশেষ পর্যায়ে আসামের চা শিল্পের জন্য তিন বছর মেয়াদি কৃষি করে অবকাশ সুবিধা দেয়ার কথা জানিয়েছে।
সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণার পর আসামের অর্থমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন, রাজ্য সরকার ঘোষিত বিশেষ প্যাকেজের মাধ্যমে আসামের চা শিল্পে বন্যা ও করোনার অভিঘাত মোকাকেলা করা সম্ভব হবে। এজন্য প্রায় ২০০ কোটি রুপি বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা আশা করছি আসন্ন দুর্গা পূজায় আসামের চা শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য ২০ শতাংশ বোনাস পাবেন। এ বিষয়ে আসাম টি করপোরেশন (এটিসি) দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেবে।
আসামের চা শিল্পের বয়স প্রায় ১৮০ বছর। রাজ্যটিতে ৮০৩টি রেজিস্টার্ড চা বাগান ও আরো ১০ হাজারের মতো ছাট চা বাগান রয়েছে। দুটো বিশ্বযুদ্ধ, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, অর্থনৈতিক মন্দা, ভয়ংকর ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা পার করে এসেছে এ শিল্প। তবে আগে কখনই এত বড় উৎপাদন হ্রাস ও লোকসানের মুখে পড়তে হয়নি আসামের চা শিল্পসংশ্লিষ্টদের।
টি বোর্ড অব ইন্ডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) আসামের বাগানগুলোয় সব মিলিয়ে ২২ কোটি ২৩ লাখ ৭০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ কোটি ২২ লাখ ১০ হাজার কেজি কম।
আগস্টে আসামে চায়ের পূর্ণাঙ্গ উৎপাদনের হিসাব এখনো প্রকাশিত হয়নি। তবে টি বোর্ড অব ইন্ডিয়া বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে আসামে পানীয় পণ্যটির সম্মিলিত উৎপাদন আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বা এক-চতুর্থাংশ কমেছে। ফলে গত বছরের মতো এবার আর আসামে ৭০ কোটি কেজির বেশি চা উৎপাদন হবে না। লোকসানের সম্ভাব্য পরিমাণ ১ হাজার ২০০ কোটি রুপি ছাড়াবে।