২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস

লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও রাজস্ব আদায় হয়নি বেনাপোল কাস্টমসের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি যশোর

চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বেনাপোল কাস্টম হাউজে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও পূরণ হয়নি। হাজার ৯৮ কোটি লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২০২০-২১ অর্থবছরের সময়ে আদায় হয়েছে ৫০১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। মূলত আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হওয়ায় রাজস্ব কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।  

বেনাপোল কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মাসে আদায় হয়েছে ২২৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আগস্টে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৭৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি হয়েছে লাখ ৯০ হাজার ১৮৩ টন। এছাড়া গত অর্থবছরগুলোয় ধারাবাহিকভাবে ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমেছে। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯৭ দশমিক ৯৩ টন পণ্য আমদানি হয়।

পণ্য আমদানি কমে যাওয়ার পাশাপাশি বিগত অর্থবছরগুলোয়ও রাজস্ব আদায় কমতির দিকে ছিল। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেয়া হয় হাজার ৯৯৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সময় লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আদায় করে মাত্র হাজার ৫৩৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল হাজার ৪৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা। এরও আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে হাজার ১৪৫ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি ছিল। ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছিল হাজার ১৮৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছিল হাজার ৪০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। সেবারও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

ভারত থেকে পণ্য আমদানি কম হওয়ায় রাজস্ব কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। তবে কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে পণ্য পাচারসহ আরো অনেক কারণেও দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দরের রাজস্ব কমে যাচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

বিষয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, কম শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হলে রাজস্ব কমবে এটা স্বাভাবিক। বিভিন্ন জটিলতার কারণে গাড়ির চেসিস, মোটরপার্টসসহ শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি কমে গেছে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, দিন দিন আমদানি পণ্যের ওপর অযৌক্তিক হারে শুল্ককর বাড়ছে। এতে বৈধভাবে আমদানি কমে বাড়ছে শুল্ককর ফাঁকি দিয়ে পণ্য পাচার। শুল্কহার স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা হলে বৈধ পথে আমদানি বাড়বে। এতে বাড়বে রাজস্ব আয়।

তিনি আরো বলেন, বন্দরের ধারণক্ষমতা ৫০ হাজার টন। কিন্তু এখানে সবসময় পণ্য থাকে কমপক্ষে দেড় লাখ টন। জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতীয় ট্রাক বন্দরে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকছে। খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে মূল্যবান পণ্যসামগ্রী পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বৈধ সুবিধা পেলে বন্দর থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে মনে করেন তিনি।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, বেনাপোল বৃহৎ বন্দর হলেও এর কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না। সপ্তাহে সাতদিন বাণিজ্যসেবা চালু থাকলেও সেটি কাগজে-কলমে। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।

ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, কয়েক বছর ধরে বেনাপোল দিয়ে কম শুল্কযুক্ত পণ্য বেশি আমদানি হওয়ার কারণে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। তার ওপর করোনার ধাক্কা লেগেছে। তবে বন্দরটি সচল থাকলে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয় বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন