গোটা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অর্থনীতির জন্য প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করেছে কভিড-১৯। তবে এ পরিস্থিতি সত্ত্বেও চলতি বছর বাংলাদেশ বাড়তি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে বলে মনে করছে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগ।
সম্প্রতি ‘২০২০ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্ট’
শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন পররাষ্ট্র বিভাগের অধীন ব্যুরো অব ইকোনমিক অ্যান্ড বিজনেস অ্যাফেয়ার্স। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে প্রতি বছরই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। বিদেশী বিনিয়োগে বিভিন্ন দেশের উন্মুক্ততা, আইনি কাঠামোসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ের বাস্তব পরিস্থিতি নিয়ে পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে প্রকাশ করা হয় প্রতিবেদনটি। এবারের প্রতিবেদনে ১৭০টিরও বেশি দেশের তথ্য ও বিনিয়োগ পরিবেশ বিষয়ে ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনের বিনিয়োগ পরিবেশবিষয়ক অংশে চলমান মহামারীর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বাড়তি বিনিয়োগ আকর্ষণের বিষয়ে আলোকপাত করা হয়। বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে সার্বিক ধারণা দিতে প্রতিবেদনে ১৩টি বিষয় সংশ্লিষ্ট হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
বিদেশী বিনিয়োগে উন্মুক্ততা এবং বিধিনিষেধসহ এ ১৩ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে আইনি কাঠামো, শিল্পনীতি, সম্পত্তি অধিকার সুরক্ষা, আর্থিক খাত, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান, দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ, দুর্নীতি, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিবেশ, শ্রমনীতি এবং চর্চা। এছাড়া মার্কিন দাতা সংস্থাসহ অন্যান্য বিনিয়োগ বীমা কর্মসূচি এবং প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশী পোর্টফোলিও বিনিয়োগ পরিসংখ্যানও উপস্থাপন করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনের সারাংশে বলা হয়েছে, গত দশকে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। কভিড-১৯ মহামারীতে অর্থনীতির গতিপথ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হলেও পরিশ্রমী তরুণ জনশক্তি, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাজারে কৌশলগত অবস্থান এবং সক্রিয় ব্যক্তি খাতকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ বাড়তি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। মহামারীর কারণে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত এখানকার নন-পারফর্মিং গ্রাহকদের শ্রেণীকরণ না করার দিকনির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। শিল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এ অব্যাহতি তুলে নেয়া হলে খেলাপি ঋণ ব্যাপক হারে বাড়বে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ এখন যেসব খাতে খুব সক্রিয়ভাবে বিদেশী বিনিয়োগ চাইছে বলে উল্লেখ করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে কৃষি, বস্ত্র ও পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হালকা পণ্য উৎপাদন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বৈদ্যুতিক পণ্য, হালকা প্রকৌশল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, প্লাস্টিক, স্বাস্থ্যসেবা, মেডিকেল উপকরণ, ওষুধ, জাহাজ নির্মাণ এবং অবকাঠামো।
এতে আরো বলা হয়, বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগের মধ্যে সামান্য কিছু আনুষ্ঠানিক পার্থক্য রাখা হয়েছে বাংলাদেশে। যদিও জিডিপিতে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের অবদানের দিক থেকে এশিয়ায় সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করাসহ বিনিয়োগ বাধা দূর করতে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপগুলোয় ক্রমবর্ধমান অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অপ্রতুল অবকাঠামো, সীমিত অর্থায়ন কৌশল, আমলাতান্ত্রিক বিলম্ব ও দুর্নীতি বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকে বিঘ্নিত করছে। ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়নে নতুন সরকারি পরিকল্পনার প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখনো এর কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। অন্যদিকে ব্যবসার চুক্তি কার্যকর ও বিরোধ নিরসন প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি প্রচলনের ধীরগতি ও স্থবির বিচার প্রক্রিয়া।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেধাসম্পদ স্বত্ব সুরক্ষা ও নকল পণ্য প্রতিরোধে বাংলাদেশ সরকারের সামর্থ্য সীমিত। তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা প্রণয়ন প্রক্রিয়া চলমান আছে। এছাড়া বাংলাদেশের আর্থিক খাত ব্যাংকের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ফলেও পুঁজিবাজারও এখনো উন্নয়নের পথে রয়েছে।