বিশ্লেষণ

বিশ্বব্যাধিতে মেগা করপোরেশনের উত্থান

ড. এম এ মোমেন

[কোটি কোটি মানুষের দুর্যোগ গুটিকয় মানুষের জন্য অভাবনীয় সুযোগ সৃষ্টি করে। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানই মেগা করপোরেশন হয়ে ওঠে। কারো যখন সর্বনাশ কারো তখন পৌষ মাস। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এলিনর রাসেল এবং ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্টিন পার্কারের রচনা হাউ প্যান্ডমিকস পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট ফুয়েল দ্য রাইজ অব মেগা করপোরেশনস অবলম্বনে নিবন্ধ লিখিত]

বিশ্বব্যাংক যখন হিসাব দিচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের আর্থিক আঘাত পৃথিবীর অর্থনীতির আকার ১০ ট্রিলিয়ন ডলার কমিয়ে দিয়েছে, মুখ থুবড়ে পড়েছে বনেদি সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, পৃথিবী কত দিনে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে তা অনিশ্চিত, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার জন্য করপোরেশনের অ্যাটর্নি আদালতে ধরনা দিচ্ছেন এবং এমনকি এই ঘাতক ব্যাধির বিদায় ঘণ্টা বেজেছে কিনা, তাও যখন বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন, সেই অনিশ্চিত সময়েও দুই হাতে টাকা কামিয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে লকডাউনের শততম দিন পূর্তি না হতেই অ্যামাজন বাড়তি আয় গুনছে কমপক্ষে ১৫ বিলিয়ন ডলার, নেটফ্লিক্স আলিবাবা, জুম কেউই পিছিয়ে নেই।

১৮৪৮-এর জুনে ইংল্যান্ডের মানুষ কোনো এক অসুখের রহস্যজনক উপসর্গের কথা বলতে শুরু করল। শুরুটা রয়েসয়ে মেনে নেয়া যায় এমন সাধারণ অসুখের। কমবেশি মাথাব্যথা, শরীরের এখানে-ওখানে যন্ত্রণা, সেই সঙ্গে বমি বমি ভাব। এমন তো হয়েই থাকে। তাদের আশ্বাস দেয়া হয়, চিন্তা করো না, সেরে যাবে।

তার পরই তারা নতুন উপসর্গের কথা বলে বগলতলা বা কুঁচকিতে যন্ত্রণা হচ্ছে, উঁচু হয়ে মাংসপিণ্ড বা বিউবোস সৃষ্টি হচ্ছে। রোগটা যখন আরেকটু এগোয়, জ্বর বেড়ে যায় আর তার পরই মৃত্যু। বিউবোস থেকেই বিউবোনিক প্লেগ।

পশ্চিমের দাবি রোগটার সূত্রপাত আসলে মধ্য এশিয়ায়। কৃষ্ণ সাগরের বন্দর থেকে সেনাবাহিনী আর ক্যারাভান তা বহন করে ইউরোপে নিয়ে এসেছে।

ভূমধ্যসাগরের তীরের ব্যবসা-বাণিজ্যসমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা পণ্য বণিকবোঝাই বাণিজ্যিক জাহাজ রোগটিকে ইতালি ইউরোপের বিভিন্ন অংশে দ্রুত চালান করে দেয়। এই রোগই ব্ল্যাক ডেথের কারণ হয়ে ওঠে এবং এতে ইউরোপের এক-তৃতীয়াংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত নাগরিক মৃত্যুবরণ করে।

লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে ঘটে চরম আর্থিক বিপর্যয়, অর্থ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। সব আর্থিক খাত বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এক-তৃতীয়াংশ শ্রমশক্তির বিলুপ্তি ঘটার পর মাঠের পাকা ফসল ঘরে তোলার মতো মানুষ পাওয়া দুরূহ হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ড, ইতালির তুসকানি ইউরোপের আরো কোনো কোনো স্থানে প্রতি দশটি গ্রামের অন্তত একটি বিলীন হয়ে গেছে, সে গ্রাম আর কখনো পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়নি। যদি কখনো খোলা মাঠে একটি নিঃসঙ্গ ক্যাসেল বা চার্চ কারো চোখে পড়ে তাহলে বুঝতে হবে সব শেষ হয়ে গেছে। নিঃশেষ হয়ে যাওয়া একটি গ্রামের শেষ নিশানাটি তিনি দেখছেন। প্লেগ যাদের ধরেছে, তাদের ৮০ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে। যারা টিকে গেছেন, তাদের কেউ কেউ কী ঘটছে তা লিখে রেখে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। এবারডিনে স্কটিশ লেখক জন অব ফরদুন লিখেছেনরোগ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের মধ্যে, ধনীদের সামান্যই ছুঁয়েছে। এই রোগ এমনই আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে যে ছেলেমেয়েরা তাদের মরণ যন্ত্রণায় কাতরানো মা-বাবাকে দেখতে যাচ্ছে না, বাবা মারাও যাচ্ছে না অসুস্থ সন্তানের কাছে, সংক্রমণের ভয়ে সবাই পালাচ্ছে যেন কুষ্ঠ রোগী কিংবা সাপ দেখে তারা ছুটছে।

নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই দিনগুলোয়ও একই রকম পঙিক্ত রচনা করা হলে ভুল কিছু করা হবে না।

ব্ল্যাক ডেথের চেয়ে করোনায় মৃত্যুহার অনেক কম হলেও অর্থনীতির ওপর আঘাত অনেক ভয়ংকর; কারণ আধুনিক অর্থনীতি বিশ্বায়িত এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিজড়িত। সে আমলে প্লেগ এক দেশ থেকে অন্য দেশে পৌঁছতে সময় লাগত; কিন্তু বিজ্ঞান মানুষকে যে গতিময়তা দিয়েছে, তাতে নভেল করোনাভাইরাস সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে কয়েক সপ্তাহের বেশি লাগেনি। ব্ল্যাক ডেথের আর্থিক প্রভাব ছিল স্বল্পকালীন, দীর্ঘমেয়াদে কী ঘটবে তা ছিল অস্পষ্ট। প্লেগ শুরু হওয়ার আগের কয়েক শতকের জনসংখ্যা বৃদ্ধি যে উদ্বৃত্ত শ্রমবাজার সৃষ্টি করেছিল, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সেই উদ্বৃত্তের সমন্বয়ই ঘটেনি, শ্রমিকের ঘাটতিও দেখা দিয়েছে। বহুসংখ্যক শ্রমদাস কৃষকের এতে মৃত্যু হয়। শ্রমিকের ঘাটতি থাকায় নতুন করে দরকষাকষি করে উচ্চতর মজুরি দাবি করা সহজ হয়ে ওঠে এবং সরকারি প্রতিরোধের পরও শ্রমদাস সামন্ত প্রথার ক্ষয়প্রাপ্তি ঘটতে থাকে।

ব্ল্যাক ডেথের একটি অনালোচিত বিষয় হচ্ছে সম্পদশালী উদ্যোক্তার অভ্যুদয় এবং সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ের সংযোগ সাধন। ব্ল্যাক ডেথ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য স্বল্পমেয়াদে ক্ষতির কারণ হলেও দীর্ঘমেয়াদে তারা সম্পদ সংগ্রহ করে মূলধন বাড়িয়েছে, বাজারের বৃহত্তম অংশের যোগাযোগ হয়েছে এবং সরকারকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা অর্জন করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন যে ব্যবসা পরিস্থিতি, তার সঙ্গে এর মিল রয়েছে। ছোট কোম্পানি যখন পতন ঠেকাতে সরকারের শরণাপন্ন হচ্ছে, বড় কোম্পানি তখন তার পণ্যের হোম ডেলিভারি চালু করে বাজার আরো অনেকটা গ্রাস করে নিচ্ছে। নতুন বাণিজ্যিক পরিস্থিতি বড় প্রতিষ্ঠানের বিকাশের অনুকূল হয়ে উঠছে।

এখনকার বাজারের যে আকার শক্তি, গতি এবং বহুবিধ যোগসূত্র, তার সঙ্গে চতুর্দশ শতকের অর্থনীতি বাজার কোনোভাবেই তুলনীয় নয়। তার পরও দেখা গেল ব্ল্যাক ডেথের পর সরকারগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠল এবং বাজারের ভাংচুরের মধ্য দিয়ে এমন কতগুলো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠল, যা একই সঙ্গে নিজ স্বার্থে সরকারকে প্রভাবিত করল এবং বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করল। এগুলোই সেকালের মেগা করপোরেশন।

কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ ইউরোপীয় জনসংখ্যার বিলুপ্তিতে সম্পদের পুনর্বণ্টন অসমতা বাড়িয়ে দিল, বহু মানুষ নিঃস্ব হলো, টিকে থাকার জন্য প্রান্তিক সম্পদের মালিক ছিল, তাও হস্তান্তর করল। অন্যদিকে অবস্থাপন্নরা আগামী দিনের বিপদের আশঙ্কায় হাতের টাকা সঞ্চিত রাখল, ধনীরা তাদের পৈতৃক সম্পদ অখণ্ড রাখল। সে সময়কার জমি হস্তান্তর দলিল পর্যালোচনা এটা স্পষ্ট করে দেয় যে ধনীদের সম্পদের সঙ্গে আরো সম্পদ যোগ হয়েছে এবং তারা পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ বণ্টন করেনি। ফলে মরণোত্তর সম্পদ বণ্টনের সময় যে এক-তৃতীয়াংশ জনকল্যাণের জন্য দান করার প্রথা, ধনী পরিবার জোত অখণ্ড রাখার কারণে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা এড়িয়ে যায় এবং তাদের উত্তরাধিকারীরা ক্রমেই অধিক থেকে অধিকতর সম্পদের মালিক হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে সামন্ত প্রথার ক্রমক্ষয় এবং কৃষক শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী মজুরিভিত্তিক অর্থনীতি সক্রিয় হয়ে ওঠায় শহুরে এলিটরা লাভবান হলো। আগে যেখানে সামন্তরা অধিকার পেত যেমনফসলের কিছু ভাগের অধিকার, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহের অধিকারএসব বিলুপ্ত হলো এবং চাষীরা শহরে গিয়ে খরচ করার মতো কিছু টাকা-পয়সা হাতে পেলেন। ফলে শহুরে ব্যবসায়ী বিত্তবান এলিটের হাতে অর্থপ্রবাহ আরো বেড়ে গেল, মূলধনে পরিণত হওয়া এই অর্থ উৎপাদনে বাণিজ্যে ব্যবহার হতে থাকল। এশিয়া বাইজেন্টাইন থেকে মিহিন কাপড় এনে বিক্রি করার বদলে ধনবান ইতালিয়ানরা নিজেরাই কাপড় তৈরির কারখানা খুলে বসল। সিল্ক কাপড়ের বাজার তারা নিয়ে নিল। প্লেগে মৃত্যুর কারণে আকস্মিকভাবে শ্রমবাজারে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, এই উদ্যোগ সেই শূন্যতাকে সফলভাবে কাজে লাগায়। এককভাবে তাঁতির হাতে কোনো মূলধন নেই আর অভিজাতদের অর্থ ভূসম্পত্তিতে লগ্নি করা। ফলে শহরের উদ্যোক্তারা হাতের নগদ টাকা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করেন, আর তা শ্রমিকের শূন্যতা পূরণ করে দেয়। জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে ওঠে ইউরোপের সবচেয়ে বড় কয়েকটি বাণিজ্যকেন্দ্র। সময়টা চতুর্দশ শতকের শেষ ভাগ থেকে পঞ্চদশ শতকের পুরোটাই। সেখানে গড়ে ওঠা ওয়েলসার কোম্পানি একসময় আজকের ভেনিজুয়েলার পুরোটাকেই কোম্পানির মালিকানাধীন উপনিবেশে পরিণত করে। সেখানে উৎপাদিত কাপড় ওয়েলসার কোম্পানি এককভাবে ইউরোপের বাজারে বিক্রি করত। দুই শতাব্দীজুড়ে বিরাজমান বিশ্বব্যাধি প্লেগ অল্প কিছুসংখ্যক করপোরেটরের হাতে মূলধন, দক্ষতা অবকাঠামো তুলে দিল।

এরপর নভেল করোনাভাইরাসের যুগে এতগুলো শতাব্দী পেরিয়ে সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি ঘটছে। বিশ্বব্যাধির অচলাবস্থার দুর্যোগে সারা পৃথিবীতে রেস্তোরাঁসহ দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে গেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনলাইন শপারদের কারণে হাইস্ট্রিটের ডিপার্টমেন্ট স্টোর থেকে শুরু করে ফাস্টফুডের দোকান পর্যন্ত সবার পণ্যই ঘরে বসে কম মূল্যে পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ধরনের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায়। কর্নার শপ থেকে শুরু করে শহুরে সব মুদিখানা ঢুকে পড়েছে চেইন স্টোরের পেটের ভেতর। সুপারমার্কেট চেইনগুলোয় হাতে নগদ অর্থ, বিশাল সম্পদের মালিকানা, বড় গুদাম এবং দ্রুত নিয়োগ প্রদানে সক্ষম এমন হিউম্যান রিসোর্স বিভাগ রয়েছে। এমন সংকটকালে তারা তাদের ইচ্ছেমতো জনশক্তি নিয়োগ করে দ্রুতই নব্য অধিকৃত ব্যবসাগুলো আরো দক্ষতার সঙ্গে চালাতে শুরু করে। মাত্র কয়েক দিন আগের উৎপাদনকারী বিক্রেতা ঘটিবাটি সব বেচে কেবল ক্রেতায় পরিণত হন। এখন ইউরোপে স্বল্প প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মুদিখানা আর নেই বললেই চলে। পণ্য কিনতে হলে ক্রেতাকে আসতে হবে অ্যামাজন, -বে, আর্গোস, স্ক্রু ফিক্স ধরনের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। সময়ের সবচেয়ে বড় বিজয়ী অ্যামাজন। মেগা করপোরেশন সবগুলোই ভালো করেছে এমন নয়; সারা পৃথিবীতে চাহিদার এক মহাকাব্যিক পতন ঘটেছে। এর মধ্যেও যেসব ভোগ্যপণ্যসামগ্রী মানুষের জন্য অনিবার্য, করপোরেশনগুলোর নজর তার ওপর। করপোরেশনের কঠোর নজরদারি সরকারের ওপরও। তারা জানে কেমন করে সরকার তাদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

প্যানডেমিক বা বিশ্বব্যাধি নিয়ন্ত্রণ প্রজেক্ট, অনুশাসক, ব্যবস্থাপনা সবগুলোরই প্রবণতা কেন্দ্রাভিমুখী। সরকারের টিকে থাকা ব্যয় নির্বাহের জন্য কর কাঠামো বিস্তৃত করতে হয়, করের হার বাড়ে এবং করপোরেশনগুলো তাদের মনমতো শর্তে বাড়তি কর দিতে রাজি হয়। প্রতিটি বিশ্বব্যাধি এবং মহামারীর পর দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারের নির্ভরযোগ্য স্বজন হয়ে উঠেছেন এবং সরকারকে দিয়ে তাদের বাণিজ্য স্বার্থ হাসিল করেছেন। ব্যবসায়ীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশীদার হয়ে ওঠেন। প্লেগ-পরবর্তী গ্রেট ব্রিটেনে বিখ্যাত কবি জিওফ্লে সোর রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন প্রশাসক হিসেবে আবির্ভূত হন, তিনি মূলত সেখানকার বণিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। ইতালিতে মেডিসি পরিবার (রেনেসাঁর অন্যতম পৃষ্ঠপোষক) আর্থিক ক্ষমতার বাইরে রাজনীতিতে প্রভাবশালী অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়। আর্থিক দিক দিয়ে অভিজাত পরিবারের সন্তানদের বিয়ে হতে থাকে বণিক পরিবারে, ক্ষমতার অংশ চলে যায় বণিকদের হাতে।

দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর বিশ্ব অর্থনীতিতে বহুজাতিক বাণিজ্য সংস্থাগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিকড় গাড়ে এবং তারা অর্থের এতটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় যে সত্তরের দশক থেকে তাদের সম্পর্কে রাষ্ট্রকে সতর্ক হতে হয়, কিন্তু ততদিনে তাদের প্রতিনিধি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা অর্জন করে যায়। ২০১৬ সালের একটি সমীক্ষায় পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ১০০টি আর্থিক অস্তিত্ব ঘোষণা করা হয়। তাতে দেখা যায়, এই তালিকায় মাত্র ৩১টি হচ্ছে দেশ আর ৬৯টি হচ্ছে কোম্পানি। ওয়ালমার্টের আর্থিক শক্তি স্পেনের মোট আর্থিক শক্তির চেয়ে বেশি। টয়োটা কোম্পানির যে আর্থিক আকার, তা ভারতের চেয়ে বেশি। তারা কোনো দেশের অর্থনীতির গতিবিধির ওপর নিজস্ব নির্দেশনা দেয়ার ক্ষমতা রাখে। তেল কোম্পানিগুলোর কথা ভাবুনবিশ্বব্যাপী পরিবেশবাদী আন্তর্জাতিক শক্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারা তাদের বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। মহামারীর সময় মৃত্যু আক্রান্তের সংখ্যা লুকানোর প্রবণতা নতুন নয়। তার পরও সরকারি মাধ্যম যে সংখ্যা দিচ্ছে, তাতে বিশ্বে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কোটি ১২ লাখ ছাড়িয়ে গেছে (১৫ আগস্ট ২০২০) আর মৃতের সংখ্যা লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি।

একথা সত্য নভেল করোনাভাইরাসের কারণে এক-তৃতীয়াংশ বিশ্ববাসীর মৃত্যু ঘটবে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে নভেল করোনাভাইরাস আগেকার প্লেগ ফ্লুর মতোই কিছু প্রতিষ্ঠানকে আরো শক্তিশালী করে যাবে, যার সামনে রাষ্ট্র হবে অসহায়।

 

. এম মোমেন: সাবেক সরকারি কর্মকর্তা

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন