জেনেভার বিলাসবহুল হোটেলগুলোয় মহামারীর ধাক্কা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ইউরোপজুড়ে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী দেখা দিলেও চালু ছিল জেনেভার বিলাসবহুল রিচমন্ট হোটেল। কিন্তু বেশি টাকা ওড়ানো অতিথিদের অনুপস্থিতিতে গত জুলাইয়ে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় মালিকপক্ষ। বিপর্যয়কর গ্রীষ্ম শেষে সুইজারল্যান্ডের অন্য হোটেলগুলোরও একই দশা। কভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে একসঙ্গে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিলাসবহুল হোটেল থাকার কৃতিত্বের দাবিদার সুইস শহরটি। খবর এএফপি।

বৈশ্বিক লকডাউনের ফলে আন্তর্জাতিক সভা-সম্মেলন বন্ধ এবং পর্যটন খাত স্থবির হয়ে পড়েছে। সেজন্য জেনেভার এক সময়ের ব্যস্ত হোটেলগুলোয় গ্রাহকশূন্যতা বিরাজ করছে। জেনেভা হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান পাঁচ তারকা হোটেল ফেয়ারমন্ট গ্র্যান্ড হোটেলের স্বত্বাধিকারী থিয়েরি লাভালি বার্তা সংস্থা এএফপিকে খেদ নিয়ে বলেন, আমরা এমন এক পেশায় আছি, যা এখন ইনটেনসিভ কেয়ারে আছে এবং খাত এতটাই মুমূর্ষু যে তার জীবন হুমকিতে রয়েছে।

মহামারীর আগে বৈশ্বিক কূটনীতিক আন্তর্জাতিক ব্যবসায় তত্পরতার হাব শহরটির হোটেল খাতে প্রবৃদ্ধি দেখা দিয়েছিল। গত দুই বছরে বার্ষিক ৩২ লাখ করে অতিথি এসেছিল। বর্তমান পরিস্থিতি শহরটির হোটেল খাতের জন্য অর্থনৈতিক সুনামি হিসেবে দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন লাভালি।


সুইজারল্যান্ডে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ কভিড-১৯ পজিটিভ হয়েছে এবং এতে প্রাণ হারিয়েছে হাজার ৮০০ জন। প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের মতো কঠোর লকডাউন নীতিমালা কার্যকর না করলেও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বিভিন্ন অনুষ্ঠান বাতিল এবং রেস্তোরাঁ জাদুঘর মাসের পর মাস বন্ধ থাকায় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। জুলাইয়ের শেষ নাগাদ জেনেভার হোটেলগুলোয় মাত্র লাখ ৯৩ হাজার অতিথি আগমন করেছে। চলতি বছর শেষে ১৩ লাখের বেশি অতিথি আশা করছে না তারা। সর্বশেষ ১৯৫৪ সালে এই পরিমাণ অতিথি আগমন করেছিল। তখন জেনেভার হোটেল সংখ্যা বর্তমানের অর্ধেক ছিল।


পুরো ইউরোপে হোটেল খাত বিপর্যস্ত হয়েছে। তবে জেনেভায় এর ধাক্কা সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়েছে। কারণ শহরটির হোটেলগুলো বড় আকারে ব্যবসায়িক সফরকারী কূটনীতিকদের ওপর নির্ভরশীল। ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রমোদ ভ্রমণে আসা গ্রাহকের সংখ্যা মোট অতিথির মাত্র এক-চতুর্থাংশ। জাতিসংঘ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের বৃহৎ সম্মেলন বৈঠকে অংশ নিতে আসেন বাকি তিন-চতুর্থাংশ অতিথি। সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্য জানান জেনেভা ট্যুরিজমের প্রধান অদ্রিয়েঁ গেনিয়া।

চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে জেনেভার হোটেলগুলোয় অতিথি অবস্থান গত বছরের তুলনায় ৬৩ শতাংশ কমেছে। ২০২০ সালের অতিথি আগমন ৭৫ শতাংশ কমবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। লাভালি জানান, ১২৬টি হোটেল ১০ হাজার কক্ষ নিয়ে বিশ্বের সর্বোচ্চ হোটেল ঘনত্ব (হোটেল ডেনসিটি) জেনেভার। কোনো শহরের বাসিন্দাদের তুলনায় হোটেল কক্ষের সংখ্যার অনুপাত বোঝাতে হোটেল ডেনসিটি বোঝানো হয়।

জেনেভার নিকটবর্তী শহরগুলোয়ও এর প্রভাব পড়েছে, যারা সম্মেলন নগরীটির অর্থনৈতিক তত্পরতার ওপর বড় আকারে নির্ভরশীল। 

যদি পরিস্থিতি সামলাতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে অনেক হোটেলই রিচমন্টের পরিণতি ভোগ করবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন লাভালি। ১৪৫ বছর সেবা দেয়ার পর লকডাউনে বন্ধ করে দিতে হয়েছে এই ঐতিহ্যবাহী হোটেল।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন