তাইওয়ানভিত্তিক পেগাট্রন ভিয়েতনামে কম্পিউটিং, কমিউনিকেশনস এবং ভোক্তা ইলেকট্রনিকস উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নতুন করে শতকোটি ডলার (১ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। অ্যাপলের দ্বিতীয় বৃহৎ চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির এ বিনিয়োগ তিন ধাপে সম্পন্ন করা হবে। ভিয়েতনামের রাষ্ট্রীয় একটি সংবাদ মাধ্যমে এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়। খবর ইয়াহু ফিন্যান্স।
শুধু অ্যাপল নয়; পেগাট্রন বৈশ্বিক সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট ও প্লে-স্টেশন নির্মাতা সনির পাশাপাশি শীর্ষস্থানীয় একগুচ্ছ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যা এরই মধ্যে দেশটির হেফোং শহরে বিদ্যমান উৎপাদন কারখানায় ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিনিয়োগের লাইসেন্স পেয়েছে। ভিয়েতনামের পরিকল্পনা এবং বিনিয়োগ মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে এমনটাই জানানো হয়। এছাড়া দেশটিতে ৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন চেয়েছে পেগাট্রন এবং এর পরের ধাপে ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন চাওয়া হয়েছে। আগামী ২০২৬ থেকে ২০২৭ সালের মধ্যে এ বিনিয়োগ সম্পন্ন করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। পেগাট্রনের এ বিনিয়োগ ভিয়েতনামে ২২ হাজার ৫০০ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতি বছর স্টেট বাজেটে ৪৩ লাখ ডলারের অবদান রাখবে। অবশ্য বিনিয়োগের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি পেগাট্রন।
অ্যাপলের অন্যতম দুই চুক্তিভিত্তিক আইফোন নির্মাতা ফক্সকন এবং উইস্ট্রন এরই মধ্যে কারখানা সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এবার ভিয়েতনামে বিনিয়োগের মাধ্যমে একই পথে হাঁটছে পেগাট্রন। গত মে থেকে চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতাদের মাধ্যমে ভিয়েতনামে ওয়্যারলেস এয়ারবাডস এবং এয়ারপডস প্রো উৎপাদনের কাজ করে আসছে অ্যাপল।
তাইওয়ানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিনিয়োগ কমিশনের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক সু চি-ইয়েন বলেন, পেগাট্রনের ভিয়েতনামে বিনিয়োগ পরিকল্পনায় তাদের পক্ষ থেকে এখনো অনুমোদন দেয়া হয়নি। তবে তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন এ বিনিয়োগ বিষয়ে তারা কবে পেগাট্রনের কাছ থেকে আবেদন পেয়েছে।
গত জুলাইয়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভিয়েতনামের পাশাপাশি ভারতে উৎপাদন সক্ষমতা জোরদারে কাজ করছে পেগাট্রন। নভেল করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে শিল্প উৎপাদন ও রফতানিতে জোর দিচ্ছে ভারত। বিশেষ করে প্রযুক্তি উৎপাদন ও রফতানি বাড়াতে মরিয়া হয়ে কাজ করছে দেশটির সরকার। এরই মধ্যে এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য বড় আকারের নীতি সহায়তাও দিতে শুরু করেছে ভারত সরকার। যে কারণে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ এ টেলিকম বাজারে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতে জোর দিচ্ছে প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম মার্কিন জায়ান্ট অ্যাপল। ভারতের বাজারে আইফোনের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য অ্যাপলের দ্বিতীয় শীর্ষ চুক্তিভিত্তিক আইফোন নির্মাতা পেগাট্রন ভারতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সঙ্গে চীনের বৈরিতার সুযোগ নিয়ে দেশটির বাজারে আইফোনের সরবরাহ বাড়ানোর জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভারত সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে দেশটি থেকে বিশ্ববাজারে ১০ হাজার কোটি ডলারের সমান মোবাইল ফোন রফতানি করার পরিকল্পনা করেছে। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে আরো ৪ হাজার কোটি ডলারের মতো খাতসংশ্লিষ্ট সরঞ্জামাদি রফতানি করতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করতে নেয়া হয়েছে নীতি সহায়তা। যার অন্যতম হলো প্রডাকশন লিংকড ইনসেনটিভ বা পিএলআই। এ স্কিমের আওতায় কেবল ইলেকট্রনিকস পণ্য উৎপাদনেই থাকছে প্রায় ৪১ হাজার কোটি রুপি। এ প্রণোদনার কারণেই ভারতে এরই মধ্যে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে পেগাট্রন প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছে।
পেগাট্রনের এ আবেদনের বিষয়ে এখনই প্রতিষ্ঠানটি বা অ্যাপলের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন একজনের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, চেন্নাইয়ে প্রণোদনার জন্য আবেদন করেছে পেগাট্রন। কোম্পানিটির কর্মকর্তারা ভারতে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম বিস্তৃত করতে চায়। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি তারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকারের সঙ্গে কারখানা তৈরির জন্য উপযুক্ত জমির খোঁজে আলোচনায় বসেছে।
অ্যাপলের অন্য দুই চুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ফক্সকন ও উইস্ট্রন ভারতে তাদের উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। মূলত চীনের বাইরে উৎপাদন কার্যক্রম বৃদ্ধিতে অ্যাপলের পক্ষ থেকে নেয়া পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পেগাট্রন এ উদ্যোগ নিয়েছে।
জানা যায়, ফক্স টেকনোলজি গ্রুপের পর তাইওয়ানের দ্বিতীয় শীর্ষ চুক্তিভিত্তিক প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পেগাট্রন। প্রতিষ্ঠানটি মূলত নোটবুক, ডেস্কটপ, মাদারবোর্ড, ট্যাবলেট ডিভাইস, গেম কনসোল, এলসিডি টিভি, মাল্টিমিডিয়া প্লেয়ার, স্মার্টফোন, ব্রডব্যান্ড ও নেটওয়ার্ক ডিভাইস নির্মাণ করে থাকে।
অ্যাপল যে চীনের বাইরে গিয়ে বড় বিনিয়োগ করবে এ বিষয়টি আগেই ধারণা করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সময় যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য বিরোধের জেরে বিষয়টি নিয়ে অনেকবার ইঙ্গিত মিলেছে। অ্যাপল চীন থেকে চুক্তিভিত্তিক পণ্য নির্মাতাদের উৎপাদন সক্ষমতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভারত ও ভিয়েতনামে সরাতে সমর্থন দিচ্ছে।
গত মার্চেই পেগাট্রনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লিয়াও জ্যাং স্যাংও ভারত ও ভিয়েতনামে কার্যক্রম জোরদারের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি জানান, গ্রাহকদের ইচ্ছা এবং বাইরের দেশের সরকারগুলোর পক্ষ থেকে দেয়া প্রণোদনার কারণে পেগাট্রন কোম্পানির কার্যক্রম অন্য দেশে বিস্তৃত করতে পারে। স্পষ্টত, এ কথার মধ্য দিয়ে পেগাট্রনের সিইও মূলত অ্যাপলের চাওয়া এবং ভারত সরকারের দেয়া প্রণোদনার বিষয়টিই ইঙ্গিত করেছিলেন।