কাপ্তাই হ্রদে মৌসুমের শেষ দিকে মৎস্য আহরণ নিয়ে শঙ্কা

প্রান্ত রনি রাঙ্গামাটি

চলতি মৌসুমে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বেড়েছে। মৌসুমের প্রথম ৩০ দিনে গত মৌসুমের একই সময়ের তুলনায় মাছ আহরণ বেড়েছে ৩৯০ টন। যদিও এর মধ্যে বেশির ভাগই ছোট মাছ। তবে কাপ্তাই হ্রদে মাছের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও চলতি মৌসুমের প্রথম দিকেই হ্রদের পানি কম থাকায় অন্যান্য মৌসুমের চেয়ে আহরণ বেশি হয়েছে। এতে মৌসুমের শেষের দিকে হ্রদে মাছের আহরণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্ববৃহৎ কৃত্রিম জলাধার রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদ। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বদ্ধজলাশয়গুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। কাপ্তাই হ্রদের আয়তন প্রায় ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর, যা বাংলাদেশের পুকুরগুলোর মোট জলাশয়ের প্রায় ৩২ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ মোট জলাশয়ের প্রায় ১৯ শতাংশ। কাপ্তাই হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের বংশবৃদ্ধি, হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষম বৃদ্ধি, মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করাসহ হ্রদের বাস্তুতন্ত্র অক্ষত রাখতে প্রতি বছরের মে থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত কাপ্তাই হ্রদে তিন মাস মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। বছরের আগস্টে শুরু হয় নতুন মৌসুম। পরের বছরের এপ্রিল পর্যন্ত চলে আহরণ। আর নয় মাসকে মৌসুম ধরা হয়। তবে চলতি বছর হ্রদে পানি কম থাকায় অন্য মৌসুমের চেয়ে ১০ দিন পিছিয়ে আহরণ শুরু হয়েছে ১১ আগস্ট।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত মৌসুমের প্রথম ৩০ দিনে (-৩০ আগস্ট) কাপ্তাই হ্রদে হাজার ৮৪ টন মাছ আহরিত হয়। বিএফডিসির রাঙ্গামাটি, কাপ্তাই, মারিশ্যা মহালছড়ি চার বিপণন কেন্দ্রে রাজস্ব আদায়ের জন্য অবতরণ করা হয় হাজার ৬১৯ টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। সেখানে চলতি মৌসুমের প্রথম ৩০ দিনে (১১ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর) মাছ আহরিত হয় হাজার ৪৭৪ টন। অবতরণ করা হয় হাজার ৮২১ টন মাছ। সে হিসাবে গত মৌসুমের চেয়ে এবার আহরণ বেড়েছে ৩৯০ টন, অবতরণ বেড়েছে ২০২ টন। আহরিত মাছের বেশির ভাগই ছোট মাছ।

প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) রাঙ্গামাটি কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক লে. কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদে মাছ উৎপাদন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কয়েক বছর ধরে প্রত্যেক মৌসুমে আমরা মাছ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়ছি। তবে বছর কাপ্তাই হ্রদের পানির পরিমাণ অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। সেজন্য আমরা এবার গত মৌসুমগুলোর তুলনায় ১০ দিন পর মাছ আহরণ শুরু করেছি, যাতে করে বৃষ্টিপাত উজানের পানিতে হ্রদের পানি বাড়ে। কিন্তু আশানুরূপ পানি না বাড়ার কারণে মৌসুমের প্রথম দিকেই অধিকমাত্রায় মাছ আহরিত হচ্ছে। এতে মৌসুমের শেষ দিকে হ্রদে মাছ আশানুরূপ পাওয়া যাবে কিনা নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি।

মৌসুম শেষে মাছ আহরণের শঙ্কার কথা জানিয়ে রাঙ্গামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বণিক বার্তাকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ বাড়ছে এটি সুখবরই বটে। কিন্তু প্রথম দিকেই যদি সব মাছ ধরা পড়ে যায় সেক্ষেত্রে শেষের দিকে হ্রদে মাছ পাওয়া যাবে না। বছর হ্রদে পানি অনেক কম, যে কারণে মাছ বেশি ধরা পড়ছে। মূলত হ্রদের পানি পরিপূর্ণ থাকলে হ্রদের বাঁকে বাঁকে ছোট ছোট ঘোনায় মাছ ছড়িয়ে পড়ে। ছোট মাছ বড় হওয়ার পরিবেশ পায়। কিন্তু পানিস্বল্পতার কারণে সম্পূর্ণ হ্রদে মাছ ছড়াতে পারেনি, যার কারণে জেলেদের জালে এখনই সব মাছ ধরা পড়ে যাচ্ছে।

বিএফডিসি রাঙ্গামাটি বিপণন কেন্দ্রের মার্কেন্টিং অফিসার বৃন্দাবন হালদার বলেন, কাপ্তাই হ্রদে আহরিত মাছের মধ্যে কেচকি, চাপিলা, মলা কাটামলা চার প্রজাতির ছোট মাছের আধিক্য বেশি থাকে। কার্পজাতীয় কিছু মাছ পাওয়া গেলেও সেগুলো বিএফডিসির অবতরণ কেন্দ্রে তেমন একটা আনা হয় না। বিএফডিসি হ্রদে কার্পজাতীয় মাছের উৎপাদন বাড়াতে প্রতি বছর পোনা অবমুক্ত করছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন