শতভাগ কার্যকর প্রতিষেধক পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ

বণিক বার্তা ডেস্ক

ভারতে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। দৈনিক সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। তার পরও কাজ হচ্ছে না। অবস্থায় জনগণ আশায় আছে, কবে একটি কভিড-১৯ ভ্যাকসিন অনুমোদন পাবে আর তা সর্বস্তরে পৌঁছে দেয়া হবে। কিন্তু ভ্যাকসিন এলেই কি মহামারী পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্তন আসবে? এটি কি নভেল করোনাভাইরাসকে অকার্যকর করতে পুরোপুরি কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে?

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের মহাপরিচালক . বলরাম ভার্গব বলছেন, শ্বাসযন্ত্রে আক্রমণ করে এমন ভাইরাসের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষেধকই শতভাগ কার্যকারিতা দেখাতে পারে না। কারণে ভারত প্রথম যে প্রতিষেধকের অনুমোদন দেবে, তার কার্যকারিতা ৫০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে যেকোনো কিছু হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনার প্রসঙ্গ টেনে ভার্গব বলেন, রেসপিরেটরি ভাইরাসের ক্ষেত্রে কোনো ভ্যাকসিনই ১০০ শতাংশ কার্যকর নয়। ডব্লিউএইচও একটি প্রতিষেধকের জন্য তিনটি বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। প্রথমত, এটি মানবদেহে ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট নিরাপদ কিনা। দ্বিতীয়ত, এটি মানবশরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে জাগিয়ে তুলতে সক্ষম কিনা। তৃতীয়ত, এটি ভাইরাসটিকে অকার্যকর করে দিতে কতটা সক্ষম।

তিনি আরো বলেন, ডব্লিউএইচও জানিয়েছে যে আমরা যদি ৫০ শতাংশ কার্যকারিতাসম্পন্ন কোনো প্রতিষেধক পাই, তাও সাদরে গ্রহণযোগ্য। আমরা অবশ্যই শতভাগ কার্যকর প্রতিষেধকের সন্ধানে রয়েছি। তবে আমরা সম্ভবত তা পাব না। আমাদের প্রতিষেধকের কার্যকারিতা ৫০ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে থাকবে।

এই তুলনামূলক কম কার্যকারিতার প্রতিষেধক কি মহামারীকে পুরোপুরি নির্মূল করতে সক্ষম হবে? এর উত্তর কয়েকটি প্রভাবকের ওপর নির্ভর করছে। আমেরিকান জার্নাল অব প্রিভেন্টিভ মেডিসিন গত জুলাইয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নিতে হলে ৭০-৮০ শতাংশ কার্যকারিতাসম্পন্ন প্রতিষেধক দরকার হবে।

এদিকে ভারতের মতো বিশাল বৈচিত্র্যপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাছে কয়েক মাসের মধ্যে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেয়া রীতিমতো দুরূহ একটি কাজ। সেক্ষেত্রে কোনো প্রতিষেধক বাজারে এলেও তা মহামারী নির্মূলে সক্ষম হবে কিনা, তা নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। এগুলো হলোকতটা বিস্তীর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে, কত দ্রুত ভাইরাসের সংখ্যা বাড়ছে (রিপ্রডাকশন রেট) এবং মোট জনসংখ্যার কত অংশ প্রতিষেধক গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে।

ধরা যাক, এমন এক সময়ে ভ্যাকসিন আবিষ্কার প্রয়োগ করা শুরু হয়েছে, যখন মোট জনসংখ্যার শূন্য শতাংশের কাছাকাছি মানুষ ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়েছে। মার্কিন গবেষকরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে প্রতিষেধকের কার্যকারিতা অন্তত ৬০ শতাংশ হলেই মহামারী পুরোপুরি নির্মূল করা যাবে। তবে সেক্ষেত্রে একটি বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে সবাইকেই ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা হয়েছে।

যদি মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়, তবে এর কার্যকারিতা হতে হবে ৭০ শতাংশের মতো। অর্থাৎ যত কমসংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা হবে, প্রতিষেধকের কার্যকারিতা সে অনুপাতে বেশি হতে হবে।

ভ্যাকসিনের সুফল পাওয়া আরেকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে। সেটি হলো ভাইরাসটি কতটা সংক্রামক। এটি যত বেশি সংক্রামক হবে, প্রতিষেধকের কার্যকারিতাও তত বেশি হতে হবে। যদি ভাইরাসটি বিপজ্জনক গতিতে বিস্তার লাভ করতে থাকে, তবে ভ্যাকসিনেশনের চেয়ে সংক্রমণের হার বেড়ে যাবে। ফলে মহামারী নির্মূলে প্রতিষেধকের সক্ষমতাও কমে যাবে।

কোনো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ৫০ শতাংশ হলে তা যে একেবারে মূল্যহীন, এমনটি নয়। সেক্ষেত্রে বেশিসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনতে হবে। মূল কথা হলো যেকোনো উপায়ে সংক্রমণের হার কমাতে হবে। তাহলেই একটি দেশের সরকার পুনরায় স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালুর কথা ভাবার সুযোগ পাবে। টাইমস নাউ হিন্দুস্তান টাইমস

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন