নির্মাণের ছয় বছরেই ঝুঁকিপূর্ণ রাতারগুলের ওয়াচটাওয়ার

দুলে ওঠে পর্যটক উঠলেই, বন্ধ ঘোষণা

দেবাশীষ দেবু সিলেট

নির্মাণের ছয় বছরের মধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে জলারবন রাতারগুলের পর্যটক ওয়াচটাওয়ার। একসঙ্গে কয়েকজন পর্যটক উঠলেই দুলে ওঠে ওয়াচটাওয়ারটি। অবস্থায় দর্শনার্থীদের ওয়াচটাওয়ারে ওঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে বন বিভাগ।

সিলেটের গোয়ানাইঘাট উপজেলায় অবস্থিত জলারবন রাতারগুলে ওয়াচটাওয়ারটি নির্মাণ করা হয় ২০১৪ সালে। পর্যটকদের এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গোটা বনের সৌন্দর্য দেখার সুবিধার্থে টাওয়ারটি নির্মাণ করে বন বিভাগ। যদিও বনে পর্যটক সমাগম বাড়ার পাশাপাশি এর প্রতিবেশ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়ে এতে আপত্তি তুলেছিলেন পরিবেশকর্মীরা।

বর্তমানে একসঙ্গে কয়েকজন পর্যটক উঠলেই দুলে উঠছে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা ওয়াচটাওয়ারটি। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় টাওয়ারটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে দর্শনার্থীদের ওঠার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে রোববার সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছে বন বিভাগ।

বিষয়ে সিলেট বন বিভাগের সারি রেঞ্জের রেঞ্জ অফিসার সাদ উদ্দিন বলেন, অনেকদিন ধরেই ওয়াচটাওয়ারটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। আমরা আগেই একসঙ্গে চার-পাঁচজনের বেশি দর্শনার্থী টাওয়ারে না ওঠার নির্দেশনা দিয়ে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছি। এছাড়া পর্যটকবাহী নৌকার মাঝিদেরও বলা হয়েছিল টাওয়ারে যাতে একসঙ্গে চার-পাঁচজনের বেশি না ওঠেন। কিন্তু কথা কেউ মানছেন না। একসঙ্গে শত শত মানুষও টাওয়ারে উঠে পড়ে। এতে প্রায় সময় টাওয়ারটি নড়ে ওঠে। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার ঝুঁকি রয়েছে। তাই আমরা টাওয়ারে দর্শনার্থী ওঠা আপাতত নিষিদ্ধ করছি। রোববার -সংক্রান্ত সাইনবোর্ড টাঙানো হয়েছে। দর্শনার্থীরা যাতে টাওয়ারে চড়তে না পারেন, এজন্য বন বিভাগের নজরদারিও থাকবে। পরবর্তী সময়ে প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে টাওয়ারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের রাতারগুল জলারবনকে ১৯৭৩ সালে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ঘোষণা করে বন বিভাগ। নদী হাওড়বেষ্টিত ৫০৪ দশমিক ৫০ একর আয়তনের পুরো এলাকা এরই মধ্যে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে।

পর্যটকদের সুবিধার্থে ৯০ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে ৫০ ফুট উঁচু ওয়াচটাওয়ারটি নির্মাণ করা হয়। টাওয়ারের নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন পরিবেশকর্মীরা। টাওয়ারের কারণে পর্যটক সমাগম বাড়ার পাশাপাশি বনের পরিবেশ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে আপত্তি তুলেছিলেন তারা।

পরিবেশকর্মীদের আপত্তির মুখে দুই দফা টাওয়ারের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখলেও পরে তা সম্পন্ন করে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এর পর থেকে প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এসে ভিড় জমাতে থাকে রাতারগুলে। সেখানে তাদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়ায় ওয়াচটাওয়ারটি।

সম্প্রতি রাতারগুল ঘুরে আশিকুর রহমান নামে এক পর্যটক জানান, উঁচু জায়গা থেকে একঝলকে গোটা বন দেখার লোভে আমরা টাওয়ারের চূড়ায় উঠেছিলাম। কিন্তু চূড়ায় ওঠার পরই টাওয়ারটি নড়াচড়া শুরু করে। এতে সবার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

তিনি বলেন, টাওয়াটি এমন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও কেউ আমাদের ওপরে উঠতে বাধা দেয়নি। আমরা থাকা অবস্থায়ই টাওয়ারে শতাধিক পর্যটককে ওঠানামা করতে দেখেছি।

নির্মাণের ছয় বছরের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বিষয়টি আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি। এতে কোনো নির্মাণ ত্রুটি ছিল কিনা, তা দেখা হচ্ছে। রকম কিছু পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন