কর্মহীনদের ঘিরে বাড়ছে আর্থিক অপরাধ

নিহাল হাসনাইন

করোনায় স্থবির হয়ে এসেছে দেশের অর্থনীতির চাকা। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে না পারায় এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে পড়েছে অনেক শিল্প-কারখানা। চালু থাকা কারখানাগুলোও লোকবল কমিয়ে সীমিত করে এনেছে কার্যক্রম। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। মহামারীতে কর্মহীন হয়ে পড়াদের ঘিরে ঘটছে নানা ধরনের আর্থিক অপরাধ। প্রতিদিনই থানায় জমা হচ্ছে প্রতারণার অভিযোগ। কর্মহীনদের পাশাপাশি মূলধন সংকটে থাকা ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও ঘটছে নানা ধরনের প্রতারণা। নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে সৃষ্ট আর্থিক সংকটই ধরনের অপরাধ সংঘটনের অন্যতম কারণ বলে মত বিশেষজ্ঞদের। আর পুলিশ বলছে, যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রথম শ্রেণীর একটি তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন জাহিদুল ইসলাম। করোনাকালে অঞ্চলভিত্তিক লকডাউনে বন্ধ হয়ে যায় তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। তিন মাস বন্ধ থাকার পর প্রতিষ্ঠান চালু হলেও পরিসর সীমিত করে আনা হয়। কমিয়ে আনা হয় লোকবল। সে সময় চাকরি হারান জাহিদুল ইসলাম। এরপর গচ্ছিত টাকা ভেঙে সংসার চালাতে থাকেন। আর অনলাইনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য আবেদন করতে থাকেন। এভাবে দেশের প্রথম সারির একটি প্রতিষ্ঠান ভেবে ভুয়া একটি সাইটে আবেদন করে উল্টো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন তিনি।

দেশের প্রথম সারির শিল্পগোষ্ঠী বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ। প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্যবহার করে চাকরি দেয়ার কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে গুলশান থানায় একটি মামলাও করা হয়েছে। বেঙ্গল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রশাসন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক নূরুল হুদা বাদী হয়ে গত বুধবার মামলাটি করেছেন। এজাহারে তিনি অভিযোগ করেছেন, তার পরিচিত সিরাজুল ইসলামকে অজ্ঞাতনামারা নিজেকে বেঙ্গল গ্রুপের ডাইরেক্টর পরিচয় দিয়ে ফোন করে বলেন, বিডি জবস থেকে আপনার সিভি আমরা পেয়েছি এবং তা পছন্দ হয়েছে। কারখানার জন্য ডিরেক্টর, জিএমসহ (মার্কেটিং, প্রডাকশন, কমার্শিয়াল) আরো অন্যান্য পদের জন্য অভিজ্ঞ লোক দরকার। কয়েকদিন পর চট্টগ্রামে নতুন কারখানার উদ্বোধন হবে। সেখানে মন্ত্রী, বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট অন্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা থাকবেন। সেখানে সিরাজুল ইসলামকে থাকতে হবে জানিয়ে প্লেনের টিকিট করার জন্য বিকাশে ৫০ হাজার টাকা নেন।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্মাণাধীন তৃতীয় টার্মিনালের কাজ করছে স্যামসাং। প্রতিষ্ঠানটির নামে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার ছাপিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এশিয়ান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুর নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আশরাফ খানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) সময় তার অফিস থেকে ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডার এবং চাকরিপ্রার্থীদের বিপুলসংখ্যক সিভি উদ্ধার করা হয়।

কভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব দীর্ঘ হলে দেশের আর্থিক অপরাধ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান . জিয়া রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, যে কোনো দুর্যোগ এলেই আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থার কিছুটা পরিবর্তন আসে। বিশেষ পরিস্থিতি নিয়ে সবাই মনোযোগী থাকে। সুযোগে আর্থিক অপরাধ সংঘটিত করার জন্য অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে। মূলত মহামারীর সময় সৃষ্টি হওয়া তীব্র আর্থিক সংকট থেকেই ধরনের অপরাধ হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।

তবে পুলিশ বলছে, যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা বণিক বার্তাকে বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সবার জন্য নিরাপদ সমাজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পুলিশ নিরন্তর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। চলমান করোনাকালে জনগণকে মানবিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি সাধারণ অপরাধসহ গুরুতর অপরাধ যেমন আর্থিক প্রতারণাসংক্রান্ত অপরাধ দমনে বিশেষভাবে কাজ করছে পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সিআইডির একটি বিশেষ টিম আর্থিক প্রতারণাসংক্রান্ত অপরাধ উদ্ঘাটনে তত্পর রয়েছে। ধরনের অপরাধ উদ্ঘাটন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে টিমের যথেষ্ট সাফল্য রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন