আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিবেদন

মহামারীতে বিশ্বের শ্রমিকরা মজুরি হারিয়েছেন ৩.৫ ট্রিলিয়ন ডলার

বণিক বার্তা ডেস্ক

নভেল করোনাভাইরাস কর্মসংস্থানের ওপর পূর্ব আশঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) মহামারীকালে এরই মধ্যে কয়েক কোটি মানুষ চাকরি তো হারিয়েছেই, একই সঙ্গে ব্যাপক মাত্রায় পতন দেখা দিয়েছে মজুরিতেও। বুধবার এক নতুন গবেষণায় আইএলও বলেছে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে গত ডিসেম্বরের তুলনায় বৈশ্বিক শ্রমঘণ্টায় পতন হয়েছে ১৭ দশমিক শতাংশ, যা প্রায় ৫০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির সমতুল্য। অথচ জুনে আইএলও পূর্বাভাস দিয়েছিল যে দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে ২০২০ সালে কর্মঘণ্টায় পতন হতে পারে ১৪ শতাংশ। ফলে বাস্তবে পূর্বাভাসের চেয়ে কর্মঘণ্টা হারিয়েছে অনেক বেশি। খবর এএফপি।

আইএলওর প্রধান গাই রাইডার ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, মহামারী বৈশ্বিক শ্রমবাজারে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। বৈশ্বিকভাবে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় শ্রম আয় সংকুচিত হয়েছে ১০ দশমিক শতাংশ। অর্থের হিসাবে পতনের পরিমাণ দশমিক ট্রিলিয়ন ডলার, যা বৈশ্বিক সার্বিক মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক শতাংশ।

গত বছরের শেষের দিকে চীনে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এর পর থেকে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির সংক্রমণে বিশ্বব্যাপী মারা গেছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ, সংক্রমিত হয়েছে কোটি ১০ লাখ। স্বাস্থ্য সংকটের বাইরে সংক্রমণ প্রতিরোধে নেয়া লকডাউন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার মতো বিধিনিষেধ অভাবনীয় প্রভাব ফেলেছে বৈশ্বিক অর্থনীতির ওপর। ব্যবসা কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ায় চাকরি হারিয়েছে বহু মানুষ, কমে গেছে উপার্জন।

আইএলও আরো সতর্ক করেছে যে সর্বশেষ জুনের প্রতিবেদনের পর ২০২০ সালের শেষ তিন মাসের শ্রম পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য হারে অবনমন হয়েছে। সংস্থাটি এর আগে পূর্বাভাসে জানিয়েছিল, চতুর্থ প্রান্তিকে বৈশ্বিক শ্রমঘণ্টায় এক বছর আগের তুলনায় পতন হবে দশমিক শতাংশ। কিন্তু এখন তারা আশঙ্কা করছে যে পতন গিয়ে দাঁড়াতে পারে দশমিক শতাংশে, যা ২৪ কোটি ৫০ লাখ পূর্ণকালীন চাকরির সমান। এর মানে হলো, বিশ্বব্যপী উন্নয়নশীল উঠতি অর্থনীতিগুলোয় শ্রমিকরা, বিশেষ করে যারা আনুষ্ঠানিক চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছেন, তারা অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।

আইএলও দেখিয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া কর্মস্থলের অনেকগুলোয় কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করা হলেও বিভিন্ন দেশের ৯৪ শতাংশ বৈশ্বিক শ্রমিক এখনো কোনো না কোনো বিধিনিষেধের আওতায় রয়েছেন। সংস্থাটির এমপ্লয়মেন্ট পলিসি ডিভিশনের প্রধান সাংহেয়ন লি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, শ্রমিকদের জন্য পরিস্থিতি সামনে আরো খারাপ হতে পারে। তিনি বলেন, কোনোভাবে যদি সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের পরিপ্রেক্ষিতে আরো কঠোর বিধিনিষেধ লকডাউন আরোপ করা হয়, তাহলে তার প্রভাব হবে মারাত্মক। এমনকি নেতিবাচক প্রভাব চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।

বিষয়ে রাইডার বলেন, মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য সংকটের চেয়ে অর্থনীতির ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়ার বিষয়ে নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে বৈশ্বিক অর্থনীতি তার শ্রমবাজারের ধস থেকে কত দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারবে, তা গভীরভাবে নির্ভর করছে মহামারী নিয়ন্ত্রণে আমাদের সক্ষমতার ওপর। দুটি বিষয় একে অন্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এবং বিষয়ে আমাদের সতর্ক বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের সরকার অর্থনীতি রক্ষায় প্রণোদনা কার্যক্রম হাতে না নিলে পরিস্থিতি আরো খরাপ হতে পারত। সারা বিশ্বে প্রায় দশমিক ট্রিলিয়ন ডলারের ধরনের প্রণোদনা কার্যক্রম ছাড়া দ্বিতীয় প্রান্তিকে বৈশ্বিক শ্রমঘণ্টায় পতন হতে পারত ২৮ শতাংশ। তবে সমস্যার বিষয় হলো, প্রণোদনা দেয়া হয়েছে অসমভাবে। এক্ষেত্রে ধনীদের চেয়ে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশগুলো সামগ্রিক সহায়তায় কম পেয়েছে প্রায় ৯৮ হাজার ২০০ কোটি ডলার। রাইডার ফাঁক পূরণে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ তার মতে, কোনো গোষ্ঠী, দেশ কিংবা অঞ্চল এককভাবে সংকট মোকাবেলা করতে পারবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন