কভিড-১৯ ইমিউনিটির বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পর গত আট মাসে জার্নালগুলোতে রোগ মোকাবেলায় ৪৭ হাজারের বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি মাসে হাজার ৮৭৫টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। মানব জিনোম আবিষ্কার নিয়ে একইসংখ্যক পাবলিকেশন্স পেতে সময় লেগেছে ২০ বছর। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের হার নজিরবিহীন। বেশির ভাগ প্রকশনা মূলত আলোচনা করেছে সহজাত বৈশিষ্ট্যগুলো ইমিউন প্রতিক্রিয়ার অভিযোজক হাতিয়ারগুলো নিয়ে এবং চালিত হয়েছে সার্স-কোভ--এর বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি বি এবং টি লিম্ফেসাইট ইমিউনোলজিক্যাল মেমোরির সন্ধানে। ডাটাগুলো রোগের ফলাফলের ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য বেশ উপকারী এবং এটাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর কৌশলের বিকাশের ক্ষেত্রেও। ইমিউনোলজি কেন্দ্রিক গবেষণার ক্ষেত্রে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন।

প্রথমত হচ্ছে অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া। প্রাথমিকভাবে লক্ষণ দেখা দেয়ার সাতদিন পর ইমিউনোগ্লোবুলিন এম (আইজিএম) এবং ইমিউনোগ্লোবুলিন (আইজিএ) প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যা চতুর্থ সপ্তাহ থেকে হ্রাস পেতে শুরু করে। এরপর তা শূন্য স্তরে পৌঁছে যায়। অধিক দরকারি ইমিউনোগ্লোবুলিন জি (আইজিজি) যা ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য কাজ করে সেটি দেখা যায় ১০ দিনের মধ্যে। পাঁচ থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে এটি চূড়ায় ওঠে এবং তারপর ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকে। স্বল্প স্থায়ী অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া যদিও উদ্বেগের কোনো কারণ নয়। অ্যান্টিবডি প্রতিক্রিয়া প্রায় সবসময় সংক্রমণের প্রাথমিক ধাপের পর থেকে হ্রাস পেতে শুরু করে। তার পরও দীর্ঘকালীন বি কোষগুলোর ছোট কিন্তু কার্যকর পুল রয়েছে, যা একই রোগজীবাণুর বিরুদ্ধে ইমিউনোলজিক্যাল মেমোরি বজায় রাখে।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে অ্যান্টিবডির পরিমাণ সম্পর্কিত প্রশ্ন। একটি পরীক্ষা যা কিনা অ্যান্টিবডিগুলোর পরিমাণ এর বৈচিত্র্য পরিমাপ করে এবং এটা কি প্রাথমিক ভাইরাল কণার উপস্থিতি কিংবা রোগের তীব্রতার সঙ্গে সম্পর্কিত।

তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জড়িত সার্স-কোভ--তে অভিযোজিত ইমিউনিটির সেলুলার আর্মের সঙ্গে। ভ্যাকসিনের বিকাশ এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ বিধি আরোপ উভয়ের জন্যই সমালোচনামূলক। অ্যান্টিবডির মতোই টি-সেল প্রতিক্রিয়ার প্রসারতা সহায়ক হত্যাকারী উভয় টি-সেলকে পরিবেষ্টন করে থাকে। এটি ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হয় এবং রোগের তীব্রতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। সংক্রমণের শুরুতে দুই সপ্তাহের মধ্যে ভাইরাস নির্দিষ্ট মেমোরি টি-সেলগুলো চূড়ায় উঠতে শুরু করে। তবে তাদের সংখ্যা কমতে শুরু করে ছয় থেকে সাত সপ্তাহ পর, যখন আইজিজি অ্যান্টিবডি চূড়া স্পর্শ করে। অ্যান্টিবডির মতো সার্স-কোভ- নির্দিষ্ট মেমোরি টি-সেল উত্পন্ন হয় রোগের বর্ণালিজুড়ে, যা দীর্ঘ সময় ধরে অল্প কিন্তু যথেষ্ট সংখ্যায় পরিচালিত হয়। পাশাপাশি আরো বেশি প্রতিক্রিয়া ফিরিয়ে আনতে পারে পুনরায় একই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার পর কিংবা ভ্যাকসিনেশনের সময়।

চতুর্থ বিষয়টি হচ্ছে আলাদা নভেল করোনাভাইরাসের মধ্যে ক্রস-রিঅ্যাক্টিভ ইমিউনিটি, যেহেতু এটি ভ্যাকসিনেশন কৌশলের পরিকল্পনার ওপর প্রভাব ফেলবে। সেল- প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্র কভিড-১৯ থেকে সেরে ওঠা রোগীদের প্রায় সবার মাঝেই মেমোরি টি-সেল চিহ্নিত করেছে। তদন্তকারীরা সার্স-কোভ- রিঅ্যাক্টিভ হেলপার টি-সেল ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ সুস্থ ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসা ব্যক্তির মাঝে শনাক্ত করেছে। যদিও ক্রস-প্রটেক্টিভ টি-সেল সার্স-কোভ- এর সংক্রমণ রোধ করতে পারে কিনা তা এখনো নির্ধারণ করা যায়নি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণের মাঝে যেকোনো মাত্রার ক্রস প্রটেক্টিভ নভেল করোনাভাইরাস ইমিউনিটি সামনের দিনগুলোতে মহামারীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

পঞ্চম প্রশ্ন টি হলো কখন এবং কীভাবে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা যাবে। এর মূল্যইবা কী হবে? আক্ষরিক অর্থে যা বোঝায় তা হলো জনগণের ন্যূনতম ৫০ শতাংশকে ইমিউন হতে হবে হার্ড ইমিউনিটি পেতে হলে। এটা হতে পারে চলমান সংক্রমণের ধারায় কিংবা ভ্যাকসিনেশনের মাধ্যমে।

হিন্দুস্তান টাইমস থেকে সংক্ষেপে অনূদিত

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন