ট্র্যাজেডি ইতালীয়দের চোখ খুলে দিয়েছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

রাজধানী মিলানের নিকটবর্তী ছোট্ট শহর ট্রুকাজ্জানোর বাসিন্দা মোরেনা কলম্বি ইতালির প্রথম দিকের কভিড-১৯ আক্রান্তদের মধ্যে একজন। ৫৯ বছর বয়সী কলম্বি প্রাথমিকভাবে হালকা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। তবে ভাইরাসটি থেকে সেরে ওঠার কয়েক মাস পর থেকে তিনি কভিডের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব অনুভব করা শুরু করেন। ইতালির অনেক মানুষ কলম্বির মতো পেশি ব্যথা, দীর্ঘস্থায়ী অবসাদ মাঝে মাঝে স্মৃতিশক্তি হ্রাস নিয়ে প্রতিনিয়ত লড়াই করছেন।

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে কভিড-১৯-এর ভয়াবহতার মুখোমুখি হয়ে এখন দেশটি প্রতিবেশীদের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থায় আছে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার স্পেনে ১০ হাজার ৭৯৯ জন, ফ্রান্সে ১০ হাজার ৮৮ জন নতুন আক্রান্তের তুলনায় ইতালিতে হাজার ৩৯২ জন নতুন আক্রান্ত হয়েছে। বেশির ভাগ ইতালিয়ান বাধ্যতামূলক না হলেও বাড়ির বাইরে মাস্ক পরাসহ সুরক্ষার নিয়মগুলো কঠোরভাবে অনুসরণ করছে। হাসপাতালগুলোর আইসিইউতে রোগীদের ভিড়, গির্জাগুলোতে কফিনের সারি এবং সেগুলো শহর থেকে দূরে সেনাবাহিনীর ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়ার মতো ট্র্যাজিক পরিস্থিতিগুলো জাতীয় মনস্তত্ত্বে দৃঢ়ভাবে স্থান করে নিয়েছে।

কলম্বি বলেছেন, আমি জানি না যে প্রাদুর্ভাবের প্রভাব অন্যান্য দেশের নাগরিকদের ওপর কেমন ছিল, তবে ইতালিতে এটা ভয়াবহ ছিল। হ্যাঁ, এখানেও ভাইরাসকে অস্বীকার করার মতো লোক রয়েছে, তবে আমি মনে করি কারণেই বেশির ভাগ লোক সাবধানতা অবলম্বন করছেন। আমরা যে ধরনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, তা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে কেউই আর এটার মধ্য দিয়ে যেতে চায় না।

পিয়াসেনজার এমিলিয়া-রোমগনা শহরের সংক্রামক রোগের চিকিৎসক গ্লোরিয়া টালিয়ানি বলেছেন, ভাইরাস এর পরিণতি সম্পর্কে অবিচ্ছিন্ন তথ্য মানুষদের পুরোপুরি জাগ্রত করে দিয়েছে।

ইতালির বিজ্ঞানীরা এখন নিয়মিত নিজেকে জিজ্ঞাসা করছেন যে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় ইতালির অবস্থা এতটা ভালো কেন। ইতালিয়ানরা সুরক্ষা বিধি সম্পর্কে সচেতন হয়েছে, তবে তারা স্প্যানিশদের মতো বারের বাইরে জড়ো হওয়া রেস্তোরাঁগুলোতে খাওয়ার ক্ষেত্রে সমানভাবে মিশুক। আগস্টের মাঝামাঝিতে নাইটক্লাবগুলোর কারণে দৈনিক সংক্রমণের হার বেড়ে গিয়েছিল, তবে ভাইরাসের বিস্তার আবারো নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল।

জনগণ সুরক্ষা বিধিগুলো ব্যাপকভাবে গ্রহণ করা ছাড়াও ইতালির পরীক্ষা ট্রেসিং সিস্টেম এখানে অবদান রেখেছে বলে মনে করেন ইতালির পাডুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক অ্যান্ড্রে ক্রিসন্তি। তিনি বলেন, ইতালিতে কভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির পাশাপাশি তাদের পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী, প্রতিবেশীসহ সামাজিক নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকা প্রত্যেককে পরীক্ষা করা হয়। এটা ইতালির অজস্র লক্ষণহীন আক্রান্তকে শনাক্ত করতে সহায়তা করেছে। যদিও আমরা নিশ্চিত নই যে বিস্তৃত আকারে এটা কতটা টেকসই হবে।

দেশটিতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং গত রোববার থেকে স্টেডিয়ামগুলোতে সর্বোচ্চ হাজার মানুষ প্রবেশে অনুমতি দেয়া হয়েছে। রোমের লাজারো স্পালানজানি হাসপাতালের বৈজ্ঞানিক পরিচালক জিউসেপ ইপোলিটো বলেন, কী ঘটতে চলেছে তা আমরা কেউ জানি না। কেবল আমরা যা করতে পারি, তা হলো হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার সামর্থ্যের সঙ্গে সংক্রমণের হার সমান্তরাল রাখা।

গার্ডিয়ান

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন